বর্তমান সময়ে অনেক পুরুষই রয়েছেন যারা যৌনাকাঙ্ক্ষা কম হওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন। আর এই সমস্যার পিছনে খাদ্যাভাস মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। খাদ্যাভাসেই আপনার লিবিডোতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।বিশেষ করে যখন কোন ব্যক্তির বয়স বাড়তে থাকে, তখন এই ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর তাই যেসব খাবার আপনার যৌন ইচ্ছাকে কমিয়ে দেয় কিংবা যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে সেগুলো খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়াই ভাল।
তাহলে চলুন প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক যেসব খাবারে যৌন ক্ষমতা নষ্ট হয়। যেমনঃ
১. ধূমপান ও মদ্যপান
এখনকার দিনে ধূমপান এবং আভিজাত্যে মদ্যপান যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকে তো এর সঙ্গে সঙ্গে আরও মারাত্মক ক্ষতিকারক নেশায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল পুরুষের ইডি বা লিঙ্গের উত্থানজনিত সমস্যা আছে তাদের বেশির ভাগই ধূমপান কিংবা মদ্যপান করে থাকেন।
২. দুর্বল যকৃত
যকৃত দুর্বল হওয়ার কারণে যৌনশক্তি অনেকটা কমে যায়। এর কারণ হল কলিজা হচ্ছে মানুষের শরীরের রক্ত প্রস্ততকারীর অন্যতম একটি উপাদান। বিশেষ করে যকৃতের কাজই হচ্ছে রক্ত তৈরী করা।
যকৃত দুর্বলের লক্ষণ হচ্ছে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া। শরীরের রঙ অনেকটা হলদে হয়ে যাওয়া। সহবাসের সময় উত্তেজনা কমে যাওয়া সহবাসে দূর্বল অনুভব করা। এসব যখন দেখা দিবে তখন বুঝতে হবে যে, সে ব্যক্তির যকৃত দুর্বল হয়ে গেছে।
৩. দুশ্চিন্তা
পুরুষের সব জীবন সঙ্গী এখন স্ত্রী হতে পারেন না বরং দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান অনেকেই। স্ত্রীর নানান রকম পেইন ধীরে ধীরে পুরুষের শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে নষ্ট করে দিতে থাকে, যার থেকে বাদ যায় না যৌনক্ষমতাও।
৪. ব্যায়াম না করা
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের যৌনক্ষমতা অন্যান্যদের তুলনায় তাদের বেশি হয়ে থাকে। যদি নিয়মিত ব্যায়াম করা হয়, তাহলে শরীরের রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়, যা আপনার যৌনাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ
ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে যৌন সঙ্গমের ইচ্ছাও কমে যেতে থাকে। আবার ওজন কম থাকাও খুব একটা ভাল নয়। ওজন স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলে সেটাও যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
৬. ড্রাগ
বর্তমানে যারা ড্রাগ আসক্ত তাদের বেশিরভাগই ধীরে ধীরে যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এছাড়াও কিছু ঔষুধ আছে (ব্যথানাশক, গর্ভরোধী) যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আপনার যৌনক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
৭. বদহজম
বদহজমের কারণেও আমাদের যৌনশক্তি কমতে পারে। কেননা পেটে খাদ্য হজম না হওয়ার কারণে রক্ত তৈরী হয় না।
৮. মস্তিঙ্কের দুর্বলতা
অনেকের আবার মস্তিঙ্কের দুর্বলতার কারণেও যৌনশক্তি কমে যায়। যখন যৌনাঙ্গের শিরা দুর্বল হয়ে যায়, সব সময় রোগীর মাথায় ব্যাথা অনুভব হয় কিংবা সহবাসের পর পরই অস্থিরতা অনুভব হয় এবং চোখে অন্ধকার দেখে।
সহবাসের পরই অধিক ক্লান্তি নেমে আসে। তাহলে বুঝতে হবে যে, সে ব্যক্তির মস্তিঙ্কের দুর্বলতা রয়েছে। যার কারণে তার যৌনশক্তি হ্রাস পেয়েছে।
যৌন শক্তি বৃদ্ধির ১০ উপায়?
১.ডিম ও দুধ
সকালের নাস্তায় প্রতিদিন অতন্ত্য একটি করে সেদ্ধ ডিম খান। এটি যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে এবং সারাদিন শরীরে শক্তি পাওয়া যায় ও শরীর চাঙ্গা রাখে। সকাল বেলা একটি সেদ্ধ ডিম খেলে সারাদিন শরীরে অনেক শক্তি পাওয়া যায়।
কারণ সেদ্ধ ডিমে আছে ভিটামিন, প্রোটিন এবং শরীরের জন্য উপকারী চর্বি উপাদান। যদি তাড়াহুড়ার সময় নাস্তা খাওয়ার সময় না থাকে। তাহলেও একটি সেদ্ধ ডিম খেয়েই সেরে নিন সকালের নাস্তা।
সেদ্ধ ডিমে আছে ভিটামিন, প্রোটিন এবং শরীরের জন্য উপকারী চর্বি উপাদান।যৌন শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌবন ধরে রাখতে দুধের কোন তুলনাই হয় না। বিশেষ করে ছাগলের দুধ পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২.মধু
যৌন শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌবন ধরে রাখার শ্রেষ্ঠ উপাদান হচ্ছে মধু। সকালে খালি পেটে জিহ্বা দ্বারা মধু চেটে খেলে কফ দূর হয়, পাকস্থলী পরিস্কার হয়। এবং দেহের অতিরিক্ত দূষিত পদার্থ বের হয়।
গ্রন্থ খুলে দেয়, তখন পাকস্থলী স্বাভাবিক হয়ে যায়, মস্তিস্ক অনেকটা শক্তি লাভ করে, স্বাভাবিক তাপে শক্তি আসে, রতি শক্তি বৃদ্ধি হয়, মূত্রথলির পাথর দূর করে থাকে।
এবং প্রস্রাব স্বাভাবিক হয়, গ্যাস নির্গত হয় ও ক্ষুধা বাড়ায়। আবার প্যারালাইসিসের জন্যও মধু উপকারী। মধু হচ্ছে হাজারো রকম ফুল ও দানার নির্যাস।
৩.পালং শাক
পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে থাকে। জাপানের গবেষকদের কথা অনুযায়ী শরীরে রক্ত চলাচল বাড়লে যৌন উদ্দীপনাও বাড়ে।
পালং শাক ও অন্যান্য বিভিন্ন রকম শাক,ব্রকলি, ফুলকপি, লেটুস, বাঁধাকপি এগুলোতে রয়েছে ফলেট, ভিটামিন বি সহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো সুস্থ যৌন জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু খাবার।
৪. খেজুর
যৌন শক্তির সাথে খোরমা এবং খেজুরের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এ কারনেই মূলত বিবাহ শাদীতে খোরমা খেজুর বিলি করার আদিম রীতি চলে আসছে। খোরমা খেজুর চুষলে পিপাসা দমন হয়ে যায়।
অধিকাংশ হালুয়া তৈরীতে এ কারণেই খোরমা এবং খেজুর ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন গ্রন্থেও খোরমা ব্যবহার যৌন শক্তির জন্য উপকারী বলা হয়েছে।
৫.রসুন
রসুনে প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। রসুন ফোড়া ভাল করে থাকে, ঋতুস্রাব চালু করে, প্রস্রাব স্বাভাবিক করে, পাকস্থলী থেকে গ্যাস নির্গত করে থাকে। এবং নিস্তেজ লোকদের মধ্যে যৌন ক্ষমতা সৃষ্টি করে, বীর্য বৃদ্ধি করে।
গরম স্বভাব লোকদের বীর্য গাঢ় করে, পাকস্থলী ও গ্রন্থর ব্যাথার উপকার সাধন এ্যাজমা এবং কাঁপুনি রোগেও উপকার সাধন করে থাকে।
৬. তরমুজ
তরমুজ কে মূলত প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা বলা হয়। এক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে তরমুজে আছে এমন কিছু বিশেষ উপাদান যা দেহের যৌন উত্তেজনা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
৭. স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে থাকে বিধায় শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেনট যা পুরুষের স্পারমের সংখ্যা বৃদ্ধি করে থাকে।
৮. বাদাম
সকল ধরণের বাদামেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল যা দেহের যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে এবং বীর্য তৈরি ও ঘন হতে সাহায্য করে থাকে। এর মধ্যে এ্যলমন্ড (কাঠ বাদাম) কাজু বাদাম, চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম খাওয়া বেশি ভাল।
৯. কলা
কলালালায় রয়েছে ব্রমেলাইন নামক এনজাইম যা পুরুষের যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও রিবফ্লাবিন যা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে দেহকে সুস্থ রাখে এবং বীর্যের মান উন্নত করে থাকে।
১০. তৈলাক্ত মাছ
তৈলাক্ত মাছে আছে ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড যা সুস্থ যৌন জীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সামুদ্রিক মাছেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড। ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড DHA O EPA শরীরে ডোপামিন বাড়িয়ে থাকে এবং মস্তিষ্কে উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে।
তৈলাক্ত এবং সামুদ্রিক মাছ খেলে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং গ্রোথ হরমোনের নিঃসরন হয়ে থাকে। ফলে যৌন স্বাস্থ্য ভাল থাকে এবং যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।