বিড়াল কামড়ালে কি হয় | বিড়াল কামড়ালে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়

অনেকে বাড়িতে শখ করে বিড়াল পুষে থাকেন। তুলতুলে ও আমুদের এই পোশাক প্রাণীটির উপর প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা যেন রয়েছে অকৃতিম। বিড়াল অনেক সময় অনেককে কামড় দিতে পারে বা আচড়ে নিতে পারে।

তাই অবশ্যই আমাদের সকলেরই জেনে নেওয়া উচিত বিড়াল কামড়ালে কি হয় বা বিড়াল আছড়ে দিলে কি সমস্যা হতে পারে এবং কামড়ানোর পর করণীয় কি। বিড়ালের কামড়ের শিকার সাধারণত বড়দের থেকে ছোটরায় বেশি হয়ে থাকে।বিড়াল কামড়ালে কি হয়অনেক সময় ছোটরা যখন বিড়ালকে আদর করে তখন বিড়াল তাদের আচড়িয়ে রক্ত বের করে দেয়। কিংবা কোন কারণে বিড়াল যদি ক্ষেপে যায় তখন বিড়াল কামড়ে দিয়ে থাকে।

অনেকের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা হয়ে থাকে। তাই অবশ্যই বিড়াল কামড়ানোর পর করনীয় কি বা বিড়াল কাবরানোর পর কি করতে হবে সেই বিষয়েই আজকের পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

বিড়াল কেন কামড় দিয়ে থাকে?

বিড়াল অনেক কারণে কামড় দিতে পারে। ধরুন আপনি বিড়ালকে নিয়ে অনেকক্ষণ খেলাধুলা করছেন বিড়ালের হয়তো আর ভালো লাগছে না তাই তখন ক্ষেপে গিয়ে আচড়িয়ে নিতে পারে বা কামড় দিতে পারে।

তাছাড়া হতে পারে আপনার পোষা বিড়ালটি আপনাকে কোন মেসেজ দিতে চাচ্ছে বা আপনি এমন কোন কাজ করছেন যেটা তার পছন্দ হচ্ছে না সেটা বন্ধ করতে চাচ্ছে। এর কারণে কামড় দিতে পারে।

তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা যখন বিড়াল নিয়ে খেলাধুলা করে থাকে তখন বিড়াল বিরক্ত হয়ে শিশুদের কামড়িয়ে থাকে। কিন্তু সঠিকভাবে কখনোই বলা সম্ভব নয় যে বিড়াল কি কারণে হঠাৎ করে কামড় দেয় বা আচড়িয়ে দিয়ে থাকে।

বিড়াল কামড়ালে কি হয়?

বিড়াল কামড়ালে কি রোগ হয় বা বিড়ালের কামড়ানোর কারণে কি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এ বিষয়ে অনেকেরই জানা জরুরি।

বিড়াল যখন কামড় দেয় বা খোঁচা দিয়ে থাকে তখন এর মাধ্যমে তাদের মুখ থেকে এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করে থাকে।

এতে আক্রান্ত ব্যক্তি শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া গুলো বসবাসের পাশাপাশি বংশবিস্তার করে থাকে। যার ফলে মানবদেহে এক ধরনের ইনফেকশন সৃষ্টি হয়। যা সাধারণত মেডিকেলের ভাষায় বলা হয়ে থাকে cellulitis

বিড়ালের কামড়ে ইনফেকশন হয় কেন?

বিড়ালের দাঁতগুলি অনেক শারপ ও কেনাইন হয়ে থাকে।যখন এই দাঁত দিয়ে বিড়াল কারো শরীরে কামড় দেয় তখন এক ধরনের খোঁচা লাগে।

খোচাটি ছোট হলেও অনেকটা ধারালো হয়ে থাকে তাই ক্ষত সৃষ্টি হয়। যার ফলে সাধারণত সেলুলাইটিস নামক এক ধরনের ইনফেকশনের সৃষ্টি হতে পারে।

বিড়ালে কামড় দিলে সেটা কতটা বিপদজনক?

বিড়ালের কামড় মানুষ সহ অন্যান্য অনেক প্রাণীর জন্য বিপদজনক। কেননা বিড়াল তাদের মুখের ভিতরে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বহন করে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের ও অন্যান্য পশুর শরীরে টিস্যু ইনফেকশন ঘটাতে পারে।

ক্ষতিকর এই ব্যাকটেরিয়া টির নাম হচ্ছে pasteurella multocida যেগুলো সংখ্যায় অনেক কম। এগুলো সংক্রমিত হওয়ার মাধ্যমে ত্বকে ঘা বা ক্ষতর সৃষ্টি করতে পারে।

এগুলো দেখতে সাধারণত অনেকটা লাল বর্ণের হয়ে থাকে তাই সংক্রমিত স্থান খুব তাড়াতাড়ি ফুলে যায়।এই সংক্রমণ ধীরে ধীরে একটি টিস্যু থেকে অন্য টিস্যুতে ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই বিড়ালের কামড় আমাদের জন্য খুবই বিপদজনক হতে পারে।

বিড়ালে কামড় দিলে করনীয় কি?

অনেকে বিড়ালে কামড় দিলে অনেক ভয় পেয়ে যান। ছোট শিশুদের যদি কখনো বিড়ালে কামড় দেয় তাহলে তাদের বাবা-মা খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তখন তারা বুঝে উঠতে পারেন না যে কি করবেন।

তাই প্রথমে বুঝতে হবে যে বিড়ালের কামোর কতটা পরিমাণ লেগেছে বা কেমন ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। বিড়ালের কামড় বা আচর যদি খুব একটা বেশি না হয় অর্থাৎ যদি চামড়া ভেদ করে ভেতরে না ঢোকে ও রক্তপাত না হয়ে থাকে তাহলে ভয়ের কিছু নাই।

কেননা এতোটুকুর জন্য কোন ক্ষতি হবে না। এই ক্ষেত্রে পানি ও লবণ দিয়ে যদি আক্রান্ত স্থান ধুয়ে ফেলা যায় তাহলে ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে যাবে। কামড় দিয়ে যদি অনেক বেশি রক্ত বাহির করে দেয়

অথবা অনেক বেশি ক্ষত সৃষ্টি করে তাহলে এই ক্ষেত্রে আপনাদেরকে বাড়তি কিছু সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে কামড় প্রাপ্ত স্থানটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ধোয়া বা পরিষ্কার করার সময় কোন ধরনের জীবাণুনাশক বা অন্যান্য রাসায়নিক কোন কিছু ব্যবহার করা যাবে না। কেননা এটি টিস্যুর ক্ষতিসাধন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনারা সাবান ব্যবহার করতে পারেন।

কেননা বিড়াল কামড় দিলে আক্রান্ত স্থান পরিষ্কারের জন্য অনেক ডাক্তার রোগীদেরকে সাবান ব্যবহার করতে বলেন। তবে হালকা লবণের দ্রবণ ছিটিয়ে দিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করলে সব থেকে ভালো হয়।

কেননা লবণ হচ্ছে এক ধরনের প্রাকৃতিক জীবানুন নাশক। তাই আক্রান্ত স্থানটি কুসুম গরম লবণ পানি দিয়ে আস্তে আস্তে ধুয়ে ফেলতে পারেন। তারপরে ডাক্তারের কাছে সরাসরি চলে যেতে হবে।

কেননা বেশিরভাগ বিড়ালের কামড়ের ক্ষত গুলি দ্রুত পাংচার তৈরি করে যার মাধ্যমে শরীরের গভীরে প্যাথোজনিক ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে থাকে। যদি ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তার দেখানো না যায় তাহলে গুরুতর সংক্রমণ হতে পারে।

ডাক্তার এই ক্ষেত্রে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন যার মাধ্যমে কামড়কৃত স্থান বা অন্যান্য জায়গায় সংক্রমনের রিক্স অনেকটা কেটে যায়। তবে এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ডাক্তার সংক্রমণ প্রতিরোধে টিটেনাস ইনজেকশন ব্যবহার করে থাকেন।

তবে অনেক ক্ষেত্রে কামড়ের তীব্রতা ও কামরের আশেপাশের পরিস্থিতি গুলোর উপর নির্ভর করে রেবিজ প্রফেলাগজিস চিকিৎসা করার পরামর্শ দিতে পারে। এটিও এক ধরনের ভ্যাকসিন তবে সবার ক্ষেত্রে এটা ডাক্তার দেয় না।

বিড়াল কামড়ালে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়?

বিড়াল কামড়ালে সাধারণত ডাক্তার কামড়ের ধরণ দেখে অথবা রোগীর ক্ষত দেখে টিটেনাস ইনজেকশন অনেক ক্ষেত্রে দিয়ে থাকেন। তবে ক্ষতর পরিমাণ যদি খুবই বেশি হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তার রোগীকে রেবিজ প্রফেলাগজিস ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন।

বিড়াল কামড়ালে কতদিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়?

বিড়ালে কামড়ালে সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রথম টিকা নিতে হয়। প্রথম টিকার দিন দেওয়া থেকে ০ তম দিনের হিসাবে ৩, ৭, ১৪ ও ২৮ তম দিনে বাকি টিকা গুলো রোগীকে নিতে হয়।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিড়াল কামড়ানোর পর খুবই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইনজেকশন নিতে হয়। কেননা যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করেন তাহলে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। যা অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

Leave a Comment