দীর্ঘদিন যাবত অ্যালকোহল জাতীয় পানিও পান করার কারণে লিভার স্থানীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো বিভিন্ন অসুখের কারণে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়।
সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত চিকিৎসা গ্রহণের পরেও পূর্বের অবস্থায় ফেরত যেতে পারে না। ফলে লিভার তার স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে ব্যাহত হয়।এজন্য ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকে লিভার রোগীদের জন্য খাবারের দিকে সচেতনতার বিষয়টিকে। আপনি যদি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার খাদ্যাভাসের পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।
আমরা যদি চাই তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোনরকম কষ্ট ছাড়া, দৌড়াদৌড়ি ছুটোছুটি না করেও লিভারের সমস্যা থেকে ঘরে বসে থেকে মুক্তি পেতে পারবো।
আর এটা সম্পূর্ণটা যে প্রসেসে করতে হবে সেটা হল খাদ্যভাসের পরিবর্তন প্লাস জীবনযাত্রার পরিবর্তন।
লিভার রোগীর খাদ্য তালিকা?
শারীরিক সুস্থতার জন্য আমাদের প্রত্যেকের লিভারের যত্ন নেওয়াটা অতি আবশ্যক। আর এটা আমাদের সবার জানা, লিভার কে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে থাকে।
আমাদের দেহে অবস্থানরত পুষ্টি উপাদান। কিন্তু যখন শরীরে পুষ্টির চাহিদা প্রয়োজনের চাইতে অনেক কম থাকে, তখনই দেখা দেয় লিভার জনিত নানা সমস্যার।
আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন, লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্যভাসের পরিবর্তন নিয়ে আসা জরুরী হলেও এই সমস্যা হওয়ার পেছনে আরো কিছু কারণ থাকে। আর সেইসব কারণগুলো হলোঃ
- দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া
- দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা
- সকালে প্রসাব না করা
- সকালে পানি পান না করা
- সকালবেলা নাস্তা না করা
- ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার অধিক পরিমাণে খাওয়া
- এলকোহল জাতীয় খাবার খাওয়ার বাজে অভ্যাস থাকা।
তবে এর বাইরে আরও বেশ কিছু কারণ থাকলেও এই কয়েকটি কারণ কে অধিক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তূ লিভার রোগীদের খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা।
কারণ এমন অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে যেগুলো খেলেও আমাদের লিভারের উপর চাপ পরে। ফলে লিভারের প্রদাহ বেড়ে যায় এবং সমস্যা আরো গুরুতর পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়। তাহলে চলুন, এ পর্যায়ে জেনে নেই লিভার রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য তালিকার সমস্ত বৃত্তান্ত।
লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার তালিকা?
যেহেতু খাদ্যভাসের ওপর লিভারের সুস্থতা অনেক বেশি, তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপনি অবশ্যই যে খাবারগুলোকে রাখার চেষ্টা করবেনঃ
- ফল এবং সবজি
- ডিম বা ডিমের সাদা অংশ
- রান্না করা মাছ
- মুরগির মাংস
- দই, বাদাম
- শুকনা মটরশুটি
- সিমের পাতা
- বাদামি ভাত
- ওটস
- জলপাই তেল
- অল্প চর্বিযুক্ত দুধ
- আদা
- ডাবের পানি
- গ্রিন টি
- হলুদ
- লেবু
- আপেল
- অলিভ অয়েল
- গাজর, ব্রকলি
- জাম্বুরা
- টমেটোসহ প্রভৃতি।
লিভারের সুস্থতায় নিষিদ্ধ খাবার?
লিভারের সুস্থতার জন্য আদর্শ খাবারের পাশাপাশি বিপদজনক খাবারও রয়েছে। তাই আমাদের সে বিষয়েও অবগত হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমরা আপনাদেরকে যে খাদ্যটি একেবারেই খেতে নিষেধ করব সেটা হলো, বিভিন্ন প্রকার পানীয় অর্থাৎ অ্যালকোহল জাতীয় পনির।
সেটা হতে পারে কোল্ড ড্রিংকস, কোকাকোলা, পেপসি। এর পাশাপাশি লিভারের সুস্থতার জন্য আপনি যে খাবারগুলো না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সেগুলো হলঃ
- বার্গার
- ফ্রেঞ্জ ফ্রাইজ
- চিনি যুক্ত খাবার
- প্যাকেট জাত স্ন্যাক
- চর্বিযুক্ত খাবার সহ প্রভৃতি।
লিভারের রোগির খাদ্য তালিকায় কি পরিমাণ খাবার রাখা উচিত?
ইতোমধ্যে আমরা লিভার রোগে আক্রান্ত হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে এবং কি কি যাবে না? এ সম্পর্কে অবগত হয়েছি। এবার আমরা আর্টিকেলের শেষ পর্যায়ে আপনাদেরকে জানাবো।
আপনি যদি লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে কি পরিমান খাবার খেতে পারবেন। সত্যি বলতে আপনি যদি আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে চান। তাহলে দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে গ্রহণ করতে হবে।
তার মধ্যে হোলগ্রেইন জাতীয় খাবার। যেমন: ভাত, পাস্তা ইত্যাদি রাখতে পারবেন। সেই সাথে ২০ থেকে ৩০ ভাগ প্রোটিন জাতীয় খাবার নিতে হবে। এর মধ্যে থাকবে সবজির প্রোটিন, প্রাণীজ লিন প্রোটিন।
সেই সাথে ১০ থেকে ২০ ভাগ ফ্যাট জাতীয় খাবার এবং সারাদিনে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলেও আপনি আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে সক্ষম হবেন।
আর হ্যাঁ, অবশ্যই এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খাবেন। চা কফি সারাদিনে কখনোই দুইবারের বেশি খাবার চেষ্টা করবেন না। কারণ চা কফি যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী, তেমনি লিভারের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর। তবে পরিমাণ মতো খেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তো দর্শক এই ছিল আমাদের আজকের লিভার রোগীর খাদ্য তালিকা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব। যদি কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান, সেই সাথে এই কনটেন্টটি শেয়ার করে অন্যদেরকেও এর সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন।
খুব তাড়াতাড়ি আমাদের আবারও আপনাদের সাথে নতুন টপিকে নতুন কোন আলোচনা পর্বে দেখা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।