কান আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। অনেক সময় অনেকের কানে ছোট বড় অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। কানে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ সহ অনেক ধরনের শব্দ প্রকাশ পেয়ে থাকে।অনেকের কান দিয়ে পুজ পড়তে পারে বা কান পাকার সমস্যা থাকতে পারে। কান পাকলে কানের পর্দা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাধারণত শিশুদের মাঝে এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়।
অনেকে কান পাকা রোগকে মারাত্মক হিসেবেও ধরে থাকেন। আজকের পোস্টে কান পাকা রোগের চিকিৎসা, কান পাকা রোগের লক্ষণ সহ আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ
কান পাকা রোগ কেন হয়?
মানুষের সকলেরই ইউস্টেশিয়ান টিউব নামক একটি টিউব আছে যার এক মাথা থেকে থাকে মধ্যাকরণে আর এক মাথা থাকে নাকের পিছনে ন্যাজোফেরিংস নামক স্থানে।
বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই টিউবটা অনেক ছোট হয়ে থাকে, তাছাড়া প্রশস্ত ও অনেক সোজাসুজি হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মায়েরা যখন বুকের দুধ অথবা বোতলের দুধ মাথার দিকটা একটু উঁচু না করে খাইয়ে থাকেন তখন এটা মধ্যাকর্ণে চলে যাই এই টিউবের মাধ্যমে।
যা পরবর্তীতে মধ্যাকরনে ইনফেকশন হয়ে কান পাকা রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাছাড়া যেসব বাচ্চাদের ঘনঘন ঠান্ডা ও সর্দি লেগে থাকে তাদের ক্ষেত্রে ইউস্টেশিয়ান নরমাল কর্ম ক্ষমতা কমে গিয়ে টিউবের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।
যার ফলে প্রথম দিকে কানে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে, জ্বর থাকে ও একসময় কানের পর্দা ফুটো হয়ে পানি বের হয়ে আসতে থাকে। এই সময়টাতে যদি সঠিক চিকিৎসা করা না হয় তাহলে স্থায়ীভাবে পর্দার ছিদ্রটি থেকে যায় ও এক সময় ইনফেকশন হওয়ার কারণে কান দিয়ে পুজ পড়ে থাকে।
তাছাড়া কারো কানে আঘাত জনিত কোন কারণে পর্দা ছিদ্র হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করালে পরবর্তীতে সর্দি কাশি গলা ব্যথা হলে কানের পর্দা দুর্বল হয়ে পুজ বা পানি আসতে পারে। এই সমস্যাগুলোর কারনে সাধারণত কান পাকা রোগ হয়ে থাকে।
কান পাকা রোগের লক্ষণ?
কান পাকা রোগ হলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। এই লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই কান পাকা রোগকে সনাক্ত করা যায়ঃ
- কান দিয়ে পুজ পড়তে থাকবে।
- অনেক ক্ষেত্রে পুজ রক্ত মিশ্রিত হতে পারে।
- বিশেষ করে যারা কান পাকা রোগী রয়েছেন তাদের কান বেশ কিছুদিন শুকনো থাকে।
- আবার বেশ কিছুদিন ভেজা থাকে।
- আবার অনেক রোগীদের কান দিয়ে সকল সময় পুজ পড়তে থাকে যা কখনো শুকায় না।
- কান বন্ধ হওয়া বা কানে কম শোনার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- কান বা মাথার ভিতরে শো শো শব্দ হওয়া ও মাথা ঘোরার সমস্যা।
- কানে তীব্র ব্যথা সহ কানে ঝাঁপ ধরে থাকার সমস্যা।
- সাধারণত কারো কান পাকা রোগ হলে এই উপসর্গ গুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে।
এই উপসর্গগুলোর মাধ্যমে খুব সহজে কান পাকা রোগী সনাক্ত করা যায়।
কান পাকা রোগের চিকিৎসা | কান পাকা রোগের ঔষধের নাম
কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে গেলে রোগীকে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে। কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পুজপাড়া সহ অন্যান্য কোন লক্ষণ দেখা দিলে রোগী অ্যান্টিবায়োটিক, কানের জন্য এন্টিবায়োটিক ড্রপ,নাকের ড্রপ ও এন্টিহিস্টামিন ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।
তাছাড়া এই সময়টাতে ডাক্তার রোগীদের কে আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে সচেতন করে দেয়। ডুব দিয়ে গোসল না করা, সাঁতার না কাটা, গোসলের সময় এয়ারপ্যাক বা নারিকেল তেল ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি না খাওয়া ও আইসক্রিম না খাওয়া এগুলো বলে দিয়ে থাকেন।
তাছাড়া কানের ভিতর মোরগের পাখনা, কানে কোন কাঠি দিয়ে না খোঁচা দেওয়া, অর্থাৎ কোন কিছু দিয়ে কান্না খোচরাতে বলা হয়ে থাকে। এই চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনেকটা ভালো হয়ে যায়। তাছাড়া ধীরে ধীরে কানের পর্দার ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়।
যদি কানের ছিদ্র অনেক বড় হয়ে যায় তাহলে ওষুধে কাজ হয় না এই ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত রোগীকে এক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হতে পারে। যদি ছয় মাসেও কানের পর্দা ঠিক না হয় তাহলে মাইক্রো সার্জারির মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে।
কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা?
কান পোকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যবহার না করাই ভালো। কারো কান পাকার সমস্যা দেখা দিলে তাকে সকল সময় চেষ্টা করতে হবে কানে যেন আঘাত না লাগে ও কানে পানি না ঢুকে। তাছাড়া এই সময়টাতে রোগীকে ঘনঘন কান পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কেননা ঘন ঘন কান পরিষ্কার করতে গেলে অনেক সময় কানে খোচা লেগে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।কান পাকা রোগ হলে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করলে বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে।
কান পাকা রোগের হোমিও চিকিৎসা?
কান পাকা রোগীদের জন্য হোমিওপ্যাথিতেও দারুন চিকিৎসা রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের কান পাকা রোগের সমস্যা দেখা দিলে হোমিওপ্যাথিতে কিছু অসাধারণ ঔষধ রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যাটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
তবে কারো যদি আঘাত জনিত কোন কারণে কানের পর্দা ফেটে যায় ও নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমেও যদি কানের পর্দার ফুটো ঠিক না হয় তাহলে মাইক্রো সার্জারির দরকার হয়ে থাকে।
কান পাকা রোগের এন্টিবায়োটিক?
কান পাকা রোগীকে ডাক্তার অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে প্রচুর পরিমাণে পুজ পড়া সহ অন্যান্য লক্ষণ থাকলে রোগীকে মুখে খাওয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ, কানে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ও বয়স ভেদে আন্টি হিস্টামিন দেওয়া হয়ে থাকে।
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই ঔষধ গুলো ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া কানের চিরস্থায়ী ক্ষতি সাধন হতে পারে।
কান পাকা রোগের ড্রপ?
অনেকেই কান পাকা রোগের ড্রপের নাম কি এই বিষয়ে জানতে চান। ডাক্তার অনেকক্ষেত্রে কান পাকা রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
তাছাড়া ডাক্তার এন্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহারের পাশাপাশি রোগীদের নাকের ড্রপ সহ এন্টিহিস্টামিন ঔষধ সেবন করার জন্য বলে থাকেন।এর মাধ্যমে কানের ভিতরে প্রদাহ সমস্যা ঠিক হয় ও কানের ভিতরের ময়লা সব বাহির হয়ে আসে।
শেষ কথা, কান পাকা রোগের চিকিৎসা ও কান পাকা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন। তাই কারো কান পাকা রোগ হলে কখনোই অবহেলা করা যাবে না।
কান পাকা রোগ হলে অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।ধন্যবাদ।