আমাশয় হচ্ছে আপনার অন্ত্রে এমন একটি সংক্রমণ, যা মল যাওয়ার সময় রক্ত ও শ্লেষ্মা সৃষ্টি করে। আমাশয় সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে শিগেলা ও এন্টামোইবা (প্যারাসাইট)।
আমাশয়ের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে দিনে তিন থেকে আট বারের মতো তরল বা নরম অস্বাভাবিক মলত্যাগ হওয়া। আমাশয় রোগের বিকাশের সাথে সাথে আপনার পেটে তীব্র পরিমাণ ব্যথা হতে পারে ও দিনে ১০০ বারের বেশি মলত্যাগের বেগ হতে পারে।
প্রচন্ড জ্বর হওয়া, যা কখনো কখনো ১০০ ডিগ্রি কিংবা তার বেশিও হতে পারে। যদি পাঁচ বছরের বেশি কিংবা তার কম বয়সী কোন শিশু আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়। তবে সেক্ষেত্রে উচ্চ জ্বর নাও হতে পারে।আর যদি কোন ক্লিনিকাল চিকিৎসা কাজ না করে, সেক্ষেত্রে আপনাকে গুরুতর চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে। আমাশয় হল খুবই ছোঁয়াচে রোগ। ইহা সাধারণত বাসন, খাবার বা এমনকি একই বাথরুম ব্যবহার করেও এই আমাশয় রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে।
আর এই রোগের বিস্তার রোধ করতে আপনি যা পারেন তা হল আপনি টয়লেট ব্যবহার করার পরে আপনার হাত সঠিকভাবে ধোয়া। আর এই রোগটি এতটাই ছোঁয়াচে যে এটি প্রাণীদের মধ্যেও ছড়াতে পারে।
যদি এটিকে চিকিৎসা না করা হয়, তবে নিশ্চিত হন যে এটি ডিহাইড্রেশনের দিকে আপনাকে পরিচালিত করবে। যা পরে আপনাকে শক ও কোমা অবস্থার মতো ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
তবে আপনার যদি উচ্চমাত্রার জ্বর এবং আমাশয় হয়, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা আপনাকে অনেকটাই এ রোগের চরম পরিনতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, আমাশয় রোগ কত প্রকার এবং এর নানান ধরনের জটিলতা সম্পর্কে।
আমাশয় রোগের কারণ?
সত্যি বলতে আমাশয়ের সঠিক কারণ চিহ্নিত করতে পারলে। আপনি ঘরে বসে সহজেই আমাশয় রোগের চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। আর তাই ঠিক কী কারণে আমাশয় হচ্ছে আপনার তা জানা অতীব জরুরি।
আমাশয় সাধারণত হয় শিগেলা, ই কোলাই, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর ও সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে। আর এগুলো বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া যা আপনার অন্ত্রে পাওয়া যায় ও ভিতরে থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আর এই ব্যাকটেরিয়াগুলো দেশ ভেদে ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিগেলোসিস হল ব্যাকটেরিয়া যা বেশিরভাগ ল্যাটিন আমেরিকানদের প্রভাবিত করে ও এটি ল্যাটিন আমেরিকাতে বেশি সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে।
অন্যদিকে ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর ব্যাকটেরিয়া বেশিরভাগ ভারতসহ বেশিরভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাশয় সৃষ্টি করে। যাইহোক আমাশয়ের কিছু বিরল কারণ হচ্ছে অন্ত্রের কৃমি ও রাসায়নিক জ্বালা।
এখন আপনি ভাবতে পারেন যে আপনি যদি একজন আমাশয় সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক করেন তবে আপনি কি আমাশয়ে আক্রান্ত হবেন? ভাল প্রশ্ন করছেন, তবে এর উত্তর হ্যাঁ হবে! সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে পায়ু পথে সহবাসের মাধ্যমে আমাশয় ছড়াতে পারে।
আমাশয় কত প্রকার ও কি কি?
আমাশয় হল দুই প্রকারঃ
- অ্যামিবিক আমাশয় এবং
- ব্যাসিলারি আমাশয়
প্রতিটি ব্যক্তির উপরে আমাশয়ের নিজস্ব প্রভাব আছে। আপনি যখন সঠিকভাবে আমাশয় প্রকারভেদ নির্ণয় করতে পারবেন। তখন খুব সহজে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।
অ্যামিবিক আমাশয় কি?
অ্যামিবিক আমাশয় সাধারণত নেশা জাতীয় খাবার বা জল খাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। এর লক্ষণগুলো খুব বেদনাদায়ক হতে পারে। যাইহোক যখন আপনার অ্যামিবিক আমাশয় হয়, তখন আপনি যেমন অনুভব করবেন তা হচ্ছেঃ
- পেটে প্রচণ্ড পরিমাণ ব্যথা
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- শ্লেষ্মাসহ রক্ত
- বেদনাদায়ক মল
- ক্লান্তি ও অবসাদ
ব্যাসিলারি আমাশয় কি?
ব্যাসিলারি আমাশয় খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। আর এটি সংক্রমণের এক থেকে তিন দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। ব্যাসিলারি আমাশয়ের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে ডায়রিয়া। এখানে ব্যাসিলারি আমাশয়ের কিছু লক্ষণ রয়েছেঃ
- গতি পাস করার সময় রক্ত
- পেটের মধ্যে প্রচণ্ড পরিমাণ ব্যথা
- মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
তবে অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় ব্যাসিলারি আমাশয়ের লক্ষণগুলো এতই হালকা হয় যে, এটি বাড়িতে নিজেই এর চিকিৎসা করা যেতে পারে।
কি কারণে আমাশয় হয় ও কারা ঝুঁকিতে থাকে?
সাধারণত শিগেলোসিস ও অ্যামেবিক আমাশয় দুর্বল স্যানিটেশনের ফলে হয়ে থাকে। আমাশয় আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে মূলত এ রোগ ছড়িয়ে থাকে। আর এই সংস্পর্শের মাধ্যম হতে পারেঃ
- দূষিত খাবার
- শারীরিক সংস্পর্শ
- দূষিত জল ও অন্যান্য পানীয়
- সংক্রামিত ব্যক্তিদের দ্বারা হাত ধোয়া
- দূষিত জলে সাঁতার কাটা, যেমনঃ হ্রদ বা পুল ইত্যাদি।
সাধারণত শিশুরা শিগেলোসিসের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। তবে যে কারও যেকোন বয়সে এটি হতে পারে। এটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে ও দূষিত খাবার এবং পানীয়ের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
শিগেলোসিস বেশিরভাগ লোকেদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে যারা সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন৷ যেমনঃ
- মানুষ
- ঘরে
- ডে কেয়ার সেন্টারে
- বৃদ্ধাশ্রমে
- স্কুলে
অ্যামেবিক আমাশয় প্রাথমিকভাবে দূষিত খাবার খাওয়া কিংবা গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দূষিত জল পান করার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আবার অনেক সময় দুর্বল স্যানিটেশনও অনেকাংশে জড়িত।
আমাশয় এর লক্ষণ?
সত্যি বলতে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে আপনাকে এর সাধারণ লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। তবেই না আপনি বিভিন্ন লক্ষণ দ্বারা আমাশয় শনাক্ত করতে পারবেন। যা রোগটিকে অন্যান্য রোগ থেকে আলাদা করতে সহায়তা করে।
যাইহোক, উপসর্গ হালকা থেকে গুরুতর ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আর এই রোগটি অস্বাস্থ্যকর মানের স্যানিটেশন ও সংক্রামিত এলাকা যেমনঃ আপনার বাড়ি, অফিস বা যেকোন পাবলিক প্লেসের কারণে হয়। সাধারণত উন্নয়নশীল দেশ ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আমাশয়ের প্রভাবের উচ্চতর হার লক্ষ্য করা যায়।
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা?
আমাশয়ের লক্ষণগুলো হালকা ও মারাত্মক উভয়ই হতে পারে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যথা কমাতে ও আপনাকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করতে পারে। এখানে আপনার আমাশয় হতে পারে এমন কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছেঃ
- পেটে ব্যথা ও ক্র্যাম্পিং
- ডায়রিয়া
- ক্ষুধামান্দ্য
- উচ্চ মাত্রায় জ্বর যা ১০০ ডিগ্রি বা তার বেশি হয়
- মৃদু স্পর্শ করলেও তীব্র পেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া
পেট ফোলা
- ক্রমাগত পরিমাণ মল পাস করার একটি মরিয়া অনুভূতি হওয়া
- ওজন কমানো এবং প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা
অন্যান্য আরও কিছু ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে। যার কারণে একজন সংক্রামিত ব্যক্তির মুখোমুখি হতে পারে, যদি সে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়। আর এই উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্যাস বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বর ও পেটে ক্র্যাম্প।
এছাড়াও এটি ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আর এই রোগের গুরুতর পর্যায় ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। এই সময় রোগীর জন্য অসহনীয় কষ্ট হয়ে থাকে।
কখনও কখনও একজন রোগীর সুস্থ হতে মাত্র তিন দিন সময় লাগতে পারে। আবার রোগী ১ সপ্তাহের মধ্যেও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে না।
আমাশয় হলে করণীয়?
আমরা সবাই জানি প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধই উত্তম। আর তাই নিম্নোক্ত প্রতিরোধ গুলো মেনে চললে আমাশয় থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবেঃ
- সবসময় বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে ও দাঁত ব্রাশ করার সময়ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।
- খাবার গ্রহণের পূর্বে ও রান্না করার আগে অবশ্যই হাত পানি এবং হ্যান্ড ওয়াশ কিংবা সাবান দিয়ে ভাল করে ধুতে হবে।
- বাইরের খাবার খুবই কম খেতে হবে।
- মলত্যাগের পরে হাত বিশুদ্ধ পানি এবং হ্যান্ডওয়াস বা সাবান দিয়ে ভাল করে ধোয়া।
- অসুস্থ শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন করার সময় খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
- খোসাযুক্ত ফল কিংবা সবজি খাওয়ার পূর্বে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
- শিশুদের হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
- একজনের তাওয়াল আরেক জনের ব্যবহার করা যাবে না।
- সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার সময় পানি গিলে ফেলা থেকে সর্বদা বিরত থাকতে হবে।
- ব্যবহৃত পোশাক ও তাওয়াল হালকা গরম পানি এবং ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
আমাশয় ও ডায়রিয়ার পার্থক্য?
অনেকেই আমরা আমাশয় ও ডায়রিয়াকে একই ধরনের মনে করে থাকি। আবার অনেক সময় বুঝতেই পারি না যে আসলে তার ডায়রিয়া হয়েছে নাকি আমাশয়।
আর তাই আমাদেরকে জানতে হবে কিভাবে আমরা সহজেই বুঝতে পারব যে কোনটা ডায়রিয়া আর কোনটা আমাশয়। চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ
- একদিনে ৩ বার বা তার অধিক সময় পানির মতো পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে।
- আমাশয় হলে পেট ব্যাথার সাথে সাথে বারবার শ্লেষা কিংবা রক্তযুক্ত পায়খানা হয়।
- সাধারণত হলে পেট ব্যথা হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু আমাশয় হলে তলপেটের দিকে ব্যথা হয়ে থাকে।
- ডায়রিয়া হলে জ্বর সচরাচর তেমন আসে না। আমাশয় হলে বেশিরভাগ সময়েই জ্বর আসে।
আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা?
আমাশয় রোগটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হওয়া একটি পেটের রোগ। আর তাই এই রোগাক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসকের দেওয়া সঠিক ও সুনিয়ন্ত্রিত ডায়েট অনুসরণ করা উচিত।
রোগী সম্পূর্ণভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কি খাবেন ও কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন তা মাথায় রাখতে হবে। বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়াই সবচেয়ে ভাল।
আমাশয়ের সময় যে জিনিসগুলো খাওয়া যেতে পারে ও যেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে তার একটি তালিকা এখানে রয়েছেঃ
যে সকল খাবার খাওয়া যেতে পারে
- সিদ্ধ ভাত
- আলু খোসা ছাড়ানো
- আপেল ও কলার মত ফল
- সাধারণ বিস্কুট
- সবুজ চা ও পরিষ্কার স্যুপ
- জ্যাম কিংবা মধুসহ ব্রাউন ব্রেড (মাখন বা মার্জারিন এড়ানো উচিত)
- প্লেইন সালাদ
- সেদ্ধ সবজি
- দই
- কমলা কিংবা ডালিমের ফলের রস
যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- পুরো ফ্যাট দুধ, ভারী ক্রিম, পনির, মাখন ও আইসক্রিমের মতো দুগ্ধজাত পণ্য সবসময় এড়িয়ে চলুন।
- মশলা জাতীয় খাবার, বেশি ভাজা খাবার বা তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার।
- পাস্তা ও পিজ্জার মতো মিহি ময়দা দিয়ে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার, কেক, পেস্ট্রি, স্কোন ও ডোনাটের মতো উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার আমাশয়ের লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করে তোলে।
- অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়, উচ্চ ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমনঃ শক্তিশালী কফি, দুধের চা এবং ক্যাফিনযুক্ত পানীয়।
- সাইট্রাস ফল ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফলসমূহ আমাশয়ের প্রভাব বাড়াতে খুবই পরিচিত।
- লাল মাংস ও কাঁচা শাকসবজি আমাশয়ের লক্ষণগুলোকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- বাদাম, মাল্টিগ্রেন রুটি, মটরশুটি, ব্রকলি, মটর, বাঁধাকপি ও ফুলকপির মতো শাকসবজি আমাশয়ের লক্ষণগুলোকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আমাশয়ের চিকিৎসা?
আপনি যদি আমাশয় আক্রান্ত রোগী হয়ে থাকেন। তবে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খুব দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত। হালকা শিগেলোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণত প্রচুর তরল দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
বিপরীতে, গুরুতর শিগেলোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তবে অনেকসময় দেখা যায় যে, ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকে অভ্যস্ত হয়ে যা প্রতিরোধের সৃষ্টি করে থাকে।
আপনাকে যদি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় ও ৬ দিন পরেও আপনার উপসর্গ না কমে। তবে আপনাকে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে ও অবিলম্বে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। অ্যামিবিক আমাশয়ে সাধারণত মেট্রোনিডাজল ও টিনিডাজল জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
যা পরজীবীকে মারার জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। আপনার অবস্থা গুরুতর হলে, ডাক্তার আপনাকে তরল খাদ্য গ্রহণের পরিবর্তে শিরায় ড্রিপস সুপারিশ করতে পারেন। আর এটি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে।
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা?
শুঠের গুড়া
যাদের খুব পুরানো আমাশয় আছে, তাঁদের উচিত এক গ্রাম আদার সঙ্গে শুঠের গুড়া গরম জলের সঙ্গে খাওয়া, এর দ্বারা আমাশয় সেরে যাবে।
ডালিম
ডালিম গাছের ছাল সিদ্ধ করে খেলে আমাশয় সারে যাবে।
আদা চা
আদা হল একটি অলৌকিক মশলা। যা অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। এর বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আমাশয়ের চিকিৎসার জন্য আদা কার্যকর একটি ঘরোয়া উপাদান।
আদা এটি হজমে সহায়তা করে, খাবারের স্থবিরতা হ্রাস করে ও আপনার পেটকে শক্তিশালী করে থাকে। সর্বপ্রথমে ১ ইঞ্চি লম্বা আদার টুকরো নিয়ে কিমা করে নিন। এরপর ১ কাপ পানি ফুটিয়ে তাতে আদা কুচি দিয়ে দিন।
আগুন বন্ধ করুন ও এটি প্রায় দশ মিনিটের জন্য ঠান্ডা হতে দিন। আর এই আদা চা দিনে ২ থেকে ৩ বার পান করুন।
আদা এবং লবণ
আদাতে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আদার রস পান করলে তা তাৎক্ষণিকভাবে শুধু লুজ মোশন বন্ধ হবে না বরং পেটের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করবে। হ্যাঁ, গরম রস পান করতে একটু কষ্ট হবে।
তাই আস্তে আস্তে ঠান্ডা করে নিবেন। ১ টুকরো আদা নিন ও একটি পেস্টেল ব্যবহার করে পিষে নিন। এরপর রস ছেঁকে নিন। ১ চা চামচ রস নিন ও এতে ১ চিমটি লবণ দিন। এটি এক বা দুইবার পান করুন এতে আপনার আমাশয় বন্ধ হয়ে যাবে।
আম ও জাম পাতার রস
কাঁচা আমপাতা এবং জামপাতার রস দুই থেকে তিন চা চামচ একটু গরম করে খেলে আমাশা সেরে যাবে। এছাড়াও সাদা কিংবা রক্ত আমাশয় যাদের আছে।
তারা জামের কঁচি পাতার রস দুই থেকে তিন চা চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সেরে যায়। সম্ভব হলে ছাগলের দুধ তাতে মিশিয়ে নিলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
থানকুনি
আমাশয় মানে আপনার আমাতিসার ও জ্বর দুটাই হয়েছে। সাধারণত আমাশয় বাচ্চাদেরই বেশী দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এই থানকুনি গাছের পাতার রস গরম করে ছেঁকে খাওয়াতে হবে।
কুলেখাড়া
আমাশয় কিংবা শোথে পায়ের চেটো অর্থাৎ যে অংশটার ওপর ভর দিয়ে আমরা হেঁটে বেড়াই সেটা ফুলে যায়। এটা সাধারণত পেটে আম কিংবা অপক্ক মল জমার জন্য হয়।
সেক্ষেত্রে কেবলমাত্র কুলেখাড়া পাতার রস কিংবা ডাঁটা বাদে চার চা-চামচ একটু গরম করে ছেকে, সকালে এবং বিকালে ২ বার খেতে হবে। এর সঙ্গে দুই থেকে পাঁচ ফোঁটা মধু দেওয়াও চলে। এর দ্বারা ঐ ফুলো টা চলে যাবে।
গোল মরিচ
আমাশয়ে আম কিংবা মল বেশি পড়ে না। কিন্তু শুলুনি এবং কোথানিতে বেশি কষ্ট দেয়। সেক্ষেত্রে গোল মরিচ চূর্ণ ১ বা দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে এবং বিকালে ২ বার জলসহ খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ আমদোষ দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই সমস্যা চলে যাবে।
বেতো বা বতুয়া শাক
রক্ত আমাশয় বেতো বা বতুয়া শাকের রস তিন থেকে চার চা চামচ অল্প গরম করে দুধ মিশিয়ে খেলে অর্শের রক্তপড়া বন্ধ হয়। সেক্ষেত্রে মহিষের দুধ হলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
শুধুমাত্র আমাশা রোগে বেতো শাক শুকিয়ে গুড়ো করে অল্প পরিমাণ দই মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। তবে তার সঙ্গে ডালিমের রস দিলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
মুথা
আমাশয় রোগে অনেকের পেট কুনকুন করে, ব্যথা করে, এক্ষেত্রে এই মুথার ক্বাথ খেলে আমাশয় এবং ব্যথা দুই কমে যায়।
তেঁতুল
আমাশয় অনেকদিন থেকে হলে অর্থাৎ পুরাতন আমাশয় হলে চার থেকে ৫ গ্রাম তেঁতুল পাতা সিদ্ধ করে চটকে নিয়ে তা ছেঁকতে হবে।
প্রাপ্ত জলকে জিরার ফোড়নে সাঁতল নিয়ে খেলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে বহুদিনের পুরানো ও পেটে সঞ্চিত আম (Mucus) বেরিয়ে যায়। অবশ্য নতুন আমাশার ক্ষেত্রেও টোটকা চিকিৎসায় এটার ব্যবহার হয়।
অর্জুন
রক্ত আমাশয়ে চার থেকে পাঁচ গ্রাম অর্জুন ছালের ক্বাথ ছাগল দুধ মিশিয়ে খেল রক্ত আমাশয় সেরে যাবে। এখানে একটা কথা জেনে রাখা ভাল হবে, অর্জুন গাছের সব অংশই কষায় রস (Astringent) এর জন্যই ওর ক্বাথে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
ওদিকটাও লক্ষ্য রাখা দরকার। তবে এটা দেখা যায় দুধে সিদ্ধ অর্জুন ছালের ব্যবহারে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে হয় না।
আমড়া
অজীর্ণ চলছে অর্থাৎ ভাল হজম হচ্ছে না আপনার অথচ বেশ চর্বচোষ্য করে গুরুভোজন করে চলেছেন তার পরিণতিতে এলো আমাশা।
তারপর একদিন বাদেই দেখা গেল রক্ত পড়ছে, সেক্ষেত্রে আমড়ার আঠা ৩ থেকে ৪ গ্রাম আধা কাপ জলে ভিজিয়ে রেখে তার সঙ্গে আমড়া গাছের ছালের রস ২ চা চামচ মিশিয়ে একটু চিনি দিয়ে খেলে দুই দিনের মধ্যেই ঐ রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে ও আমাশাও সেরে যাবে।
আমাশয় নির্ণয়?
আপনার সন্তান যদি আমাশয় ভুগছেন, তবে আপনাকে তাড়াতাড়ি একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। আর যদি আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা বা চিকিৎসা না করা হয় তবে আপনি ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারেন।
যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি হতে পারে। সাধারণত আপনি যখন পরামর্শের জন্য ডাক্তারের কাছে যাবেন, ডাক্তার প্রথমে আপনার উপসর্গগুলো পর্যালোচনা করবেন।
তিনি যদি আমাশয় সন্দেহ করেন, তাহলে আপনার মলের একটি নমুনা বিশ্লেষণ করবেন। আমাশয় শনাক্তকরণ সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির মল বিশ্লেষণ করে করা হয়ে থাকে।
আমাশয় সম্পর্কে কিছু কথা?
এই পোস্টে আমাশয় সম্পর্কে কিছু তথ্য রয়েছে। যদিও আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি কতটা মারাত্মক হতে পারে তা আপনার কল্পনাও করতে পারবেন নাঃ
- আমাশয় একটি সংক্রমণ যা অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্ট করে থাকে।
- আমাশয়ের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া হওয়া।
- যদি এর চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে।
- আমাশয় চিকিৎসার একটি সহজ উপায় হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা (মানে হাইড্রেটেড থাকুন)।
আমাশয় রোগের ট্যাবলেট?
আমাশয় রোগের ট্যাবলেট নাম জানা থাকলে আপনার প্রয়োজনে তা সহজেই আশে পাশে যেকোন ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসতে পারেন। নিচে আপনাদের সুবিধার জন্য কয়েকটি আমাশয় রোগের ঔষধের নাম শেয়ার করছি।
যে গুলো রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ কিংবা সাদা আমাশয় রোগের ঔষধ হিসবে ব্যবহার করতে পারেনঃ
Name →Company→ unit price
- Alexid → Aristopharma →15 taka
- Bacilex → Pharmadesh →18 taka
- Pivcilin → Rangs Pharma →12 taka
- Pivicil → General → 12 taka
- Relexid → Renata →12 taka
- Emcil → Square → 15 taka
- Lexipen 200 →Techno Drug→ 12 taka
- Pinam → Kemiko → 12 taka
উপরের ঔষধ গুলো প্রতিদিন তিন বেলা ৩ টা করে তিন দিন খাবেন। সাথে প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় খাবার খাবেন। আর যদি না কমে তাহলে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
সতর্কতা
যেকোন ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আসলেই ব্যবহার করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে কখনো কখনো হিতে বিপরীত হতে পারে। তার কারণ আপনার রোগ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী ডাক্তার ঔষধ দিয়ে থাকে।
কখনো কখনো একাধিক সমস্যা থাকার কারণে ঔষধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আর তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়া উচিত।