নখের রোগ ও চিকিৎসা

নখ আমাদের শরীরের সৌন্দর্যের একটি অংশ হলেও এটি শরীরের স্বাস্থ্যের অবস্থাও প্রকাশ করে। নখের বিভিন্ন রোগ বা সমস্যার কারণে দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি হতে পারে।নখনখের রোগগুলোকে সাধারণত সংক্রমণ, আঘাত, অপুষ্টি বা শারীরিক অন্যান্য অসুস্থতার কারণে সৃষ্টি হতে দেখা যায়। আজকের আর্টিকেলে নখের রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

নখ কি?

নখ হলো এক ধরনের কেরাটিন (keratin) প্রোটিন দিয়ে তৈরি শক্ত স্তর। যা আমাদের আঙুল ও পায়ের আঙুলের ডগার উপরিভাগে থাকে। এটি শরীরের সুরক্ষা ও কার্যক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নখ শরীরের চামড়ার একটি অংশ। যা বিভিন্ন উপাদান, যেমনঃ প্রোটিন, মিনারেলস এবং পানি দিয়ে গঠিত।

আরও পড়ুনঃ Body mass index বলতে কি বুঝায় | bmi calculator

সাধারণ নখের রোগসমূহ?

১. অনাইকোমাইকোসিস (Onychomycosis)

ফাঙ্গাস দ্বারা নখের সংক্রমণ। এটি নখ পুরু হওয়া, হলুদ বা সাদা দাগ হওয়া এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

কারণ

  • অতিরিক্ত আর্দ্রতা
  • অপরিষ্কার নখ
  • ফুট ফাঙ্গাস সংক্রমণ

২. প্যারোনাইকিয়া (Paronychia)

নখের চারপাশে ত্বকের প্রদাহ। এটি ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণে হয়।

লক্ষণ

  • ত্বক লাল হওয়া
  • ফোলা এবং ব্যথা
  • পুঁজ জমা

৩. ইনগ্রাউন নখ (Ingrown Nail)

নখের কোণা ত্বকের ভেতরে ঢুকে যাওয়া।

কারণ

  • ভুলভাবে নখ কাটা
  • শক্ত জুতো পরা
  • আঘাত

৪. নখের ছিদ্র বা ফাটল (Nail Pitting)

এই সমস্যায় নখে ছোট ছোট গর্ত বা ছিদ্র দেখা যায়। এটি সাধারণত সোরিয়াসিস (Psoriasis)-এর কারণে হয়।

লক্ষণ

  • নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া
  • সাদা বা হলুদ দাগ

৫. নখ ভাঙা বা দুর্বল হওয়া

নখ ভঙ্গুর হলে সহজেই ভেঙে যায়।

কারণ

  • অপুষ্টি
  • অতিরিক্ত পানি বা রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ
  • বার্ধক্য

৬. বিউ লাইনস (Beau’s Lines)

নখে অনুভূমিক দাগ দেখা যায়। এটি গুরুতর অসুস্থতা বা পুষ্টিহীনতার কারণে হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম | আয়রন ট্যাবলেট এর নাম

নখের রোগের চিকিৎসা?

১. ঘরোয়া প্রতিকার

  • নখ পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।
  • লবণ পানিতে নখ ভিজিয়ে রাখলে সংক্রমণ কমে।
  • ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং বায়োটিনসমৃদ্ধ খাবার খান।

২. ওষুধ এবং চিকিৎসা

ফাঙ্গাস সংক্রমণ

অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ক্রিম বা ওষুধ (যেমন ক্লোট্রিমাজোল বা টেরবিনাফাইন)।

প্যারোনাইকিয়া

  • ব্যথা কমানোর জন্য গরম সেঁক।
  • ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার।

ইনগ্রাউন নখ

  • ক্ষতস্থানে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম লাগান।
  • জটিল ক্ষেত্রে নখের আংশিক অপসারণ প্রয়োজন হতে পারে।

৩. লাইফস্টাইল পরিবর্তন

  • শক্ত জুতো এড়িয়ে নরম এবং আরামদায়ক জুতো পরুন।
  • নখের সঠিক যত্ন নিন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • নখ কেটে গোলাকার না করে সোজাভাবে কাটুন।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ

যদি নখের সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ব্যথা বাড়তে থাকে, তবে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুনঃ নাপা এক্সট্রা এর কাজ কি | নাপা এক্সট্রা এর অপকারিতা

নখের গঠণ?

নখের প্রধান অংশগুলো হলোঃ

নেইল প্লেট (Nail Plate)

এটি নখের দৃশ্যমান অংশ, যা শক্ত ও সাদা বা গোলাপি রঙের হয়।

নেইল বেড (Nail Bed)

এটি নেইল প্লেটের নিচে থাকা চামড়া, যেখানে নখ অবস্থান করে।

লুনুলা (Lunula)

নখের গোড়ার কাছে আধা-চাঁদের মতো সাদা অংশ।

কিউটিকল (Cuticle)

নখের গোড়ায় থাকা পাতলা ত্বক, যা নখকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

নেইল রুট (Nail Root)

এটি ত্বকের ভেতরে থাকে এবং এখান থেকে নখের বৃদ্ধি শুরু হয়।

নখের কাজ?

সুরক্ষা

নখ আঙুলের ডগাকে আঘাত ও ক্ষত থেকে রক্ষা করে।

সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি

নখের নিচে থাকা নার্ভের মাধ্যমে স্পর্শ অনুভূতি বাড়ে।

অন্তর্দৃষ্টি প্রদান

নখের রং ও গঠন থেকে শরীরের স্বাস্থ্যের তথ্য পাওয়া যায় (যেমন অপুষ্টি, রোগ)।

দৈনন্দিন কাজ সহজ করা

এটি আঁচড়ানো, খুলে ফেলা বা ছোটখাটো কাজ করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় | বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ

নখের বৃদ্ধি?

  • নখ গড়ে প্রতিদিন প্রায় 0.1 মিমি বাড়ে।
  • আঙুলের নখ সাধারণত পায়ের নখের তুলনায় দ্রুত বাড়ে।
  • বয়স, পুষ্টি, এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর নখের বৃদ্ধির হার নির্ভর করে।

মোটকথা নখ শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়। এটি শরীরের সুরক্ষা এবং দৈনন্দিন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক যত্ন ও পরিচ্ছন্নতা নখকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

নখ সুস্থ রাখার পরামর্শ?

  • প্রতিদিন নখ পরিষ্কার করুন।
  • নখ কাটার সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
  • পুষ্টিকর খাবার খান যা নখ মজবুত রাখে।
  • কেমিক্যাল বা ডিটারজেন্ট ব্যবহারের সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন।
  • দীর্ঘক্ষণ নখ ভিজিয়ে রাখবেন না।

শেষ কথা

নখের রোগ এড়ানোর জন্য পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। যদি কোনো সমস্যার লক্ষণ দেখা দেয়, দ্রুত ব্যবস্থা নিন। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এড়ানো যায়।

Leave a Comment