HMP (Human Metapneumovirus) হলো একটি শ্বাসযন্ত্র-সম্পর্কিত ভাইরাস যা সাধারণ ঠান্ডা, ব্রঙ্কিওলাইটিস এবং নিউমোনিয়ার মতো অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে।এটি সাধারণত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি প্রভাব ফেলে। আজকের আর্টিকেলে এইচএমপি ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
এইচএমপি ভাইরাস কি?
Human Metapneumovirus (HMPV) একটি আরএনএ (RNA) ভাইরাস, যা Paramyxoviridae পরিবারের অন্তর্গত। এটি ২০০১ সালে প্রথমবার চিহ্নিত হয়। এই ভাইরাস সাধারণত শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে তীব্র নিউমোনিয়া পর্যন্ত রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
HMPV যেকোনো বয়সের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে, তবে এটি শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের ব্যক্তিদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ সিভিট ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম | সিভিট খাওয়ার উপকারিতা
এইচএমপি ভাইরাস এর লক্ষণসমূহ?
HMPV তে সংক্রমিত হলে লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ৩-৬ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। লক্ষণগুলো হালকা থেকে তীব্র হতে পারেঃ
1. সাধারণ লক্ষণ
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- হালকা জ্বর
- গলা ব্যথা
- কাশি
- মাথা ব্যথা
2. তীব্র লক্ষণ
- শ্বাসকষ্ট
- দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- ফুসফুসে প্রদাহ (নিউমোনিয়া)
- ব্রংকিওলাইটিস (Bronchiolitis), বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে
3. জটিলতা (জরুরি অবস্থায় দেখা যায়)
- ফুসফুসে তরল জমা
- অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া
- বুকে ব্যথা
আরও পড়ুনঃ প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
এইচএমপি ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়?
HMPV ভাইরাসের জন্য কোনো ভ্যাকসিন বা নির্দিষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা জরুরিঃ
১. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
- নিয়মিতভাবে সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধৌত করা।
- হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা।
- ব্যবহৃত টিস্যু ফেলে দেওয়া এবং হাত ধোয়া।
২. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানো
- সংক্রামিত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা।
- রোগী সংস্পর্শে আসার পর হাত ভালোভাবে ধোয়া।
৩. পরিবেশ পরিষ্কার রাখা
- ঘরের পৃষ্ঠতল জীবাণুমুক্ত রাখা।
- সাধারণ স্পর্শকৃত জিনিসপত্র (যেমনঃ দরজার হাতল) নিয়মিত পরিষ্কার করা।
এইচএমপি সংক্রমণের পথ?
HMPV ভাইরাস সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রমণের প্রধান পথগুলো হলোঃ
ড্রপলেট সংক্রমণ
হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
স্পর্শের মাধ্যমে
দূষিত পৃষ্ঠ বা বস্তু স্পর্শ করার পর মুখ, চোখ বা নাক স্পর্শ করলে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
সংস্পর্শ
সংক্রামিত ব্যক্তি বা তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ।
আরও পড়ুনঃ গলায় মাছের কাঁটা নামানোর উপায় | গলায় কাটা নামানোর ঔষধ
এইচএমপি ভাইরাস চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা?
HMPV এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। লক্ষণ উপশমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
ঘরোয়া পরিচর্যা
- প্রচুর বিশ্রাম নেওয়া।
- শরীর হাইড্রেট রাখতে প্রচুর পানি পান করা।
- গরম পানির ভাপ নেওয়া।
- জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন সেবন (ডাক্তারের পরামর্শে)।
চিকিৎসা
- গুরুতর ক্ষেত্রে অক্সিজেন থেরাপি।
- নিউমোনিয়া বা ফুসফুস সংক্রমণের ক্ষেত্রে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা।
- শ্বাসকষ্ট হলে ইনহেলার বা নেবুলাইজার ব্যবহার করা।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি যদি
- শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
- দীর্ঘ সময় জ্বর থাকে।
- শিশুদের মধ্যে খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখা দেয়।
বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকা?
HMPV সাধারণত যেকোনো ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে, তবে নিচের গোষ্ঠীগুলি বেশি ঝুঁকিতে থাকেঃ
- ৫ বছরের কম বয়সী শিশু
- ৬৫ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধ
- দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের রোগী (যেমনঃ ক্যানসার বা HIV রোগী)
- শ্বাসতন্ত্রের পূর্ববর্তী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি (যেমনঃ অ্যাজমা বা COPD রোগী)
আরও পড়ুনঃ পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধির খাবার
এইচএমপি ভাইরাসের পরিসংখ্যান ও গুরুত্ব?
- HMPV একটি মৌসুমভিত্তিক ভাইরাস। এটি সাধারণত শীতকালে এবং বসন্তের শুরুতে বেশি ছড়ায়।
- শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ব্রংকিওলাইটিস এবং নিউমোনিয়ার অন্যতম কারণ।
- বিশ্বব্যাপী এটি শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রধান ভাইরাস।
শেষ কথা
এইচএমপি ভাইরাস সাধারণত হালকা অসুস্থতার কারণ হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।