কান হল এমন একটি অঙ্গ। যার মাধ্যমে আমরা বাইরের শব্দ শুনতে পাই। কান হল আমাদের মানবদেহের মাথার দুইপাশের একটি অঙ্গ। যার মাধ্যমে কথা শুনে মস্তিষ্ক কাজ করে। কান, চোখ ও মাথার সাথে সংযুক্ত থাকে।কান পাকা রোগ সাধারণ কোন বিষয় নয়। কান পাকা রোগ প্রায় সবারই হয়ে থাকে। কান পাকার রোগ হলে মাথার যন্ত্রণা বেড়ে যায়। যারা কানে শুনতে পান না তারা বুঝতে পারে যে কান নষ্ট হওয়ার কি কষ্টটা আসলে কি। আ তাই আমরা সবাই কানের যত্ন নিব।
চলুন আজকে আমরা কান পাকলে করণীয় কি? কান পাকার লক্ষণ, কান কেন পাকে ও কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করর।
কান পাকার লক্ষণ?
কান পাকলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। যা নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
- কান ফুলে যেতে পারে।
- কান চুলকাবে।
- কান ব্যথা করবে।
- কখনো কখনো কানে কম শুনতে পারেন।
- কান থেকে পুঁজ বের হবে।
কান কেন পাকে?
কান পাকার অনেক ধরনের কারণ রয়েছে। বেশিরভাগ এই সমস্যা দেখা দেয় কানে পানি গেলে ও গোসলের পর কান ভাল করে না মুছলে কানে পানি জমে কান পাকে। তাছাড়াও ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের সংক্রমনে কান পাকতে দেখা যায়।
এছাড়াও অযথা বারবার কান পরিষ্কার করলে ও কানের ভিতরে একজিমা হলেও কান পাকতে পারে। ১ বার কান পাকলে অল্প কোন কারণে আপনার আবার কান পাকতে পারে।
কানের সমস্যা গুলো কি কি?
কানের সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান হল কানে ব্যথা, কান দিয়ে পুঁজ পড়া, কানে কম শোনা ও মাথা ঘুরানো ইত্যাদি।
কান পাকা থেকে বাঁচতে করণীয়?
- সব সময় কান শুকনো রাখা।
- অজু করে কিংবা মুখ ধুয়ে ভাল করে কান মুছে নেওয়া।
- যদি কোন কারণে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যায়। তাহলে বিলম্ব না করে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
- গোসল এর সময় কোনভাবেই যেন কানে ভেতরে পানি না যায় সেদিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।
- যদি পারেন তাহলে কানে তুলা দিয়ে গোসল করতে পরেন।
- অনেক সময় কানে আঘাতের কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে।
- আর তাই কান খোচানো কিংবা কান পরিস্কার থেকে বিরত থাকা।
- কখনো কোন কিছু দিয়ে কান পরিস্কার করবেন না। এতে হঠাৎ করে আঘাত লাগতে পারে।
- শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় সতর্ক থাকবেন।
- শুইয়ে দুধ না খাওয়াইয়ে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াবেন।
- বাচ্চারা কান চুলকাইলে সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসা করা।
- কান পাকা থেকে বাঁচতে সব থেকে বেশি প্রয়োজন হল সর্তক থাকা।
কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা?
১। গরম সেক দিতে হবে
কান পাকার কারণে পুঁজ বের হতে দেখলে আপনি কানে গরম সেক দিতে পারেন। গরম সেক দেওয়ার কারণে কানের ভিতরে থাকা পুঁজ ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে ও ব্যাথাও কমে যাবে।
যেভাবে সেক দিবেন
গরম পানিতে ১টি সুতির কাপড় চুবিয়ে ভালে করে নিংড়ে হবে। এরপর সেটা ২ থেকে ৩ মিনিট কানের উপরে ধরে রাখুন।
এরপর মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে যে কানে পুঁজ ওই কানটা নিচে রেখে শুয়ে থাকুন।দেখবেন ধীরে ধীরে পুঁজটা বের হতে থাকবে। বার বার এভাবে করতে থাকুন।
২। রসুন
কান পাকা ভাল করতে রসুন খুব ভাল কাজ করে। কেননা এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ। যা কান পাকার জন্য দায়ী জীবানুগুলোকে মারতে সহায়তা করে।
রসুন যেভাবে ব্যবহার করবেন?
প্রথমে কয়েকটি রসুনের কোয়া ২ চামচ অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে তেলটিকে কিছুক্ষণ গরম করুন। এরপর গরম হলে তা উঠিয়ে ঠান্ডা করুন।
ঠান্ডা হয়ে গেলে কয়েক ফোটা রসুন মিশ্রিত অলিভ অয়েল কানে দিন। ইহা কান পাকা সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
৩। সাদা ভিনেগার
কান পাকা রোধে সাদা ভিনিগার খুবই সহায়তা করে। এই সাদা ভিনেগারের মধ্যে অ্যাসিডিক এলিমেন্ট থাকায় এটি কানের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মারতে সহায়তা আসে।
সাদা ভিনেগার যেভাবে ব্যবহার করবেন?
একটি ছোট পাত্রে অল্প পরিমাণ অ্যালকোহল নিয়ে সাথে অল্প সাদা ভিনিগার ভালভাবে মিশিয়ে নিন।এরপর সেখান থেকে কয়েক ড্রপ নিয়ে কানে দিন। দেখবেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে আরামবোধ করবেন।
৪। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড
কানের সমস্যা এড়াতে একটি কার্যকরী ঘরোয়া চিকিৎসা হচ্ছে হাইেড্রাজেন পারঅক্সাইড। ইহা কানের ভিতরে জমে থাকা পুঁজ ধীরে ধীরে শুকিয়ে দেয়। এবংকান পাকা রোধ করতে সাহায্য করে।
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড যেভাবে ব্যবহার করবেন?
আপনার যে কান পেকেছে তাতে তিন শতাংশ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিন। এরপর যে কানে সমস্যা তা নিচে দিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে কান থেকে পুঁজ বের হয়ে যাবে।
এভাবে দিনে কয়েকবার এমন করতে পারেন এতে কানের পুঁজ বের হয়ে দ্রুত কান পাকার সমস্যা ভাল হয়ে যাবে।
৫। পেঁয়াজ
পেঁয়াজ যে শুধু রান্নার কাজেই ব্যবহার হয় তা নয়। এই পেঁয়াজ কখনো কখনো রোগ সারাতে কাজে আসে। পেঁয়াজ ডিসইনফেকটেন্ট হওয়ায় কান পাকা রোগ সারাতে খুব ভাল কাজ করে। ইহা কানের পুঁজ বের করতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজ যেভাবে ব্যবহার করবেন?
পেঁয়াজকে থেঁতো করে তার থেকে রস বার করে কয়েক মিনিট ধরে গরম করুন। এরপর পেঁয়াজের রস কয়েক ফুটা কানে দিলে দেখবেন জমে থাকা পুঁজ ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে। পুঁজ বের হলেই ব্যাথা আস্তে আস্তে কমে যাবে।
৬। পুদিনা
পুদিনার পাতা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। যেকোন ধরনের ব্যাথা দূর করতেও সহায়তা করে। কান পাকা ও কানের ব্যথা দূর করতে পুদিনা পাতা খু্ ভাল কাজ করে।
পুদিনা যেভাবে ব্যবহার করবেন?
প্রথমে কয়েকটি পুদিনা পাতা নিয়ে ভাল করে ধুয়ে তা থেঁতো করে রস বের করে নিন। এরপর ২-৪ ফোঁটা রস কানে দিন। কান পাকা প্রতিরোধের জন্য ইহা খুব প্রচলিত একটি ঘরোয়া উপায়।
৭। নিম
নিম পাতার রস বের করে এরপর ড্রপার দিয়ে কানে ঢালবেন। অথবা পূর্বের মতোই নিম তেলে কটন বাড ভিজিয়ে কানে চেপে ধরে রাখুন।
৮। হেয়ার ড্রায়ার
হালকা পানিতে গোসল করে নিন। এরপর তোয়ালে দিয়ে কান না মুছে ব্লো ড্রায়ার দিয়ে কান শুকোতে থাকুন। সারা কানে গরম হাওয়া ছড়িয়ে গিয়ে ব্যাথা কমে যাবে।
৯। হট ওয়াটার বটল
যেকোন ধরনের ব্যথায় গরম সেঁক দিলে তা আরাম লাগে। গরম পানির বোতল তোয়ালে জড়িয়ে যে কানে ব্যাথা সে কানে চেপে ধরে রাখুন।
১০। জোয়ান
৩ চা চামচ তিলতেলের সাথে ১ চা চামচ জোয়ান তেল মিশিয়ে নিন। আর এই মিশ্রণ কয়েক ফোঁটা কানে দিন। ৩ টেবিল চামচ সর্ষের তেল ও আধ চা চামচ জোয়ান তেল ও দু’কোয়া রসুন এক সাথে ভিজিয়ে রাখুন।
কিছুক্ষণ পর লাল রঙ হয়ে গেল ড্রপার দিয়ে কানের মধ্যে ঢালুন।
কানের চিকিৎসা?
আধুনিক প্রযুক্তি যেমনঃ মাইক্রোস্কোপ ও এন্ডোস্কোপ ইত্যাদির ব্যবহার অপরিহার্য। বিশেষ করে কানের মাইক্রোস্কোপের ব্যবহার শুরুর পর থেকে কানের রোগ নিরূপণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় যুগান্তকারী উন্নতি হয়েছে।
কানের বিভিন্ন অসুখ বিসুখ নিরূপণে মাইক্রোস্কোপের কোন বিকল্প নেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইহা সিটি স্ক্যান এবং এমআরআইয়ের চেয়ে বেশি তথ্য প্রদান করে থাকে।
সভ্য এবং উন্নয়নশীল দেশে অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ ও বিভিন্ন এন্ডোস্কোপ ছাড়া কোন নাক, কান ও গলা এর ক্লিনিক চিন্তাই করা যায় না। তবে কানের আধুনিক শল্য চিকিৎসা দিয়ে অনেক জটিল রোগের নিরাময় করা সম্ভবপর হয়েছে।
এক্ষেত্রে মাইক্রোস্কোপ ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। কানের পর্দা লাগনোর ক্ষেত্রে অজ্ঞান না করে ইটিমপানোপ্লাস্টি মাইক্রোসার্জারি করা সম্ভব।