চিকেন পক্স খুবই মারাত্মক একটি সমস্যা। শীতের শেষে বা গরমের শুরুর দিকে অনেকের চিকেন পক্সের সমস্যা শরীরে হয়ে থাকে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে অনেক ধরনের অসুখ এই সময় শরীরে বাসা বাঁধে।এগুলোর মধ্যে চিকেন পক্স অন্যতম। চিকেন পক্স এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। কেউ চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলে ১০ থেকে ২১ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে।চিকেন পক্স হলে আমাদের শরীরে ছোট ছোট লালচে ফুসকার মত দেখা যায়।
অনেকেই চিকেন পক্স কেন হয়, চিকেন পক্স হলে করণীয় কি? ও চিকেন পক্স এর চিকিৎসা সম্পর্কে জানেন না। তাই এই বিষয়ে নিম্নে মূল্যবান কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছেঃ
চিকেন পক্স কেন হয়?
চিকেন পক্স হলো এক ধরনের সংক্রামক রোগ। যা সাধারণত ভেরিসেলা জোস্টার নামক এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে। চিকেন পক্স আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, ত্বকের স্পর্শ ব্যতীত পোশাকের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে থাকে।
তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি,কাশি ও ফুসকুড়ির খোসা বাতাসে বাহিত হওয়ার মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে।
চিকেন পক্সের লক্ষণ?
কোন ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস প্রবেশের ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই চিকেন পক্সের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে। প্রথমদিকে ত্বকে ঘামাচি উঠতে থাকে এবং একসময় এটি ফুসকুড়িতে পরিণত হয়ে থাকে।
যখন ঘামাচির মত হতে শুরু করে তখন থেকেই সাধারণত শরীর ব্যথা করে থাকে। তারপরে রোগীর অনেক ক্ষেত্রে জ্বর দেখা দিতে পারে ও পেট ফাঁপার মত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
ফুসকুড়িতে একপর্যায়ে পানি জন্মে যা পরবর্তীতে শুকানোর মাধ্যমে কালো বর্ণের খোসায় পরিণত হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেক রোগীর পাতলা পায়খানা ও খুসখুসে কাশির সমস্যা হতে পারে।
চিকেন পক্স সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হতে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাসের মত সময় লাগতে পারে। কারো কোন কোন রোগী দুই সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
চিকেন পক্স হলে করণীয়?
চিকেন পক্স হলে আমাদের অবশ্যই এই সময়টাতে শরীরের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। কেননা এই সময়টাতে শরীর এক ধরনের ভাইরাসের বিপক্ষে লড়াই করছে। তাই চিকেন পক্স হলে কি কি করতে হবে এই বিষয়ে নিচে কিছুটা তথ্য তুলে ধরা হলোঃ
- চিকেন পক্স হলে রোগীকে কখনোই নোংরা ও স্যাতসেতে সাথে ঘরে রাখা যাবে না।
- শরীরের যদি অতিরিক্ত জ্বর ও বেদনাদায়ক ফোসকা থেকে থাকে তাহলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
- ত্বকের প্রদাহ কমাতে ক্যালমাইন নামক লোশন সেবন করতে পারেন।
- রোগীর হাতের নখ কেটে দিতে হবে কেননা ঘুমের সময় রোগীর হাতের নখ যদি ফোসকায় লেগে থাকে তাহলে যন্ত্রণা হতে পারে।
- যদি অতিরিক্ত সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের চিকেন পক্স হলে করণীয়?
শিশুদের চিকেন পক্সের সমস্যা হলে আমাদেরকে অবশ্যই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেমনঃ
- শিশুকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করতে হবে।
- শিশুকে বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে।
- চুলকানি কমাতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
শিশুকে পরিশেষে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়াতে হবে।
চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত?
চিকেন পক্স হলে অবশ্যই আমাদের খাবারের দিকে একটু বেশি নজর দিতে হবে। কেননা এই সময়টাতে শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি দিতে হবে। চিকেন পক্স হলে পানি শূন্যতা বাড়তে পারে তাই এই সময়টাতে পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে।
এজন্য এই সময়তে কলা আঙ্গুর এই ধরনের ফলগুলো খাওয়া যেতে পারে। কেউ যদি ফল খেতে পছন্দ না করেন তাহলে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। চিকেন পক্স হলে মানুষের শরীরে খনিজ ও ভিটামিনের ঘাটতি হয়ে যায়।
তাই এই সময়টাতে ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া সিদ্ধ সবজি বেশি বেশি করে খেতে হবে। প্রয়োজনে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন তবে এটা তেল ছাড়া খেলে ভালো হবে।
চিকেন পক্স হলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি করে খেতে হবে। তাছাড়া এই সময়টাতে নিম পাতার রস খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া যাবেনা?
চিকেন পক্স হলে অবশ্যই চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা চর্বি জাতীয় খাবার খেলে পক্সের প্রদাহ আরো বেড়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
তাছাড়া এই সময়টাতে অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার ও বাইরের ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
চিকেন পক্স এর চিকিৎসা?
চিকেন পক্স হলে বিশেষ কোনো ঔষধের দরকার পড়ে না। রোগী যদি নিজের শরীরের সঠিক যত্ন নিতে পারে ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই রোগীর দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়।
তবে এই ক্ষেত্রে ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিভাইরাল খাওয়া যেতে পারে। আর রোগীর যদি অতিরিক্ত জ্বর হয়ে থাকে তাহলে নাপা ট্যাবলেট খেতে পারে। তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে আশা করা যায়।
চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে?
অনেকের ধারণা চিকেন পক্স হলে গোসল করা যায় না।চিকেন পক্স হলে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করবেন না।রোগীকে এক বালতি হালকা গরম পানিতে এক কাপ ওটমিল পাউডার ভিজিয়ে গোসল করাতে হবে।
এতে চুলকানির সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। কেউ চাইলে ওটমিল পাউডারের স্থানে বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন।
চিকেন পক্স হলে কি সাবান দিয়ে গোসল করা যাবে?
চিকেন পক্স হলে সাধারণ পানি দিয়ে রোগী চাইলে গোসল করতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রে পানি অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে কোনভাবেই চিকেন পক্স আক্রান্ত রোগীকে গোসল করানো যাবে না।
রোগীকে চাইলে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে পারেন। তবে গরম পানিতে যদি নিম পাতা সেদ্ধ করে রোগীকে গোসল করানো যায় তাহলে রোগী সর্বোত্তম উপকার পাবে।
তবে চিকেন পক্স হলে কখনোই সাবান দিয়ে রোগীকে গোসল করানো উচিত নাই এতে করে সমস্যা আরো বাড়তে পারে।
চিকেন পক্স কতদিন থাকে?
চিকেন পক্স হওয়ার প্রথম দিকে পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত র্যাশ বের হয়ে থাকে। তারপরে সেটা ধীরে ধীরে ফোসকার আকার ধারণ করে থাকে। পরবর্তীতে ফোসকার ভিতর থাকার রস ঘন হয়ে পুজের মতো হয়ে থাকে।
তারপরে সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত সেটা ধীরে ধীরে শুকাতে থাকে। এই প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ হতে সাধারণত ১৪ দিনের মতো সময় লেগে থাকে।
চিকেন পক্স এর লোশন?
অনেক রোগী চিকেন পক্সের ওষুধের সন্ধান করে থাকেন।চিকেন পক্সের লোশন হিসাবে অনেকে Ocuvir 5% Cream এটা ব্যবহার করে থাকেন। কেননা এটি হচ্ছে এক ধরনের আন্টি ব্যাকটেরিয়াল ড্রাগ যা সংক্রমিত কোষকে আক্রমণ করে ভাইরাসের বৃদ্ধিকে রোধ করে থাকে।
তবে এই ক্রিমটি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত না হলে বিপরীত হতে পারে। তাছাড়া অনেকে কেলমাইন নামক লোশন টি ব্যবহার করে থাকেন চিকেন পক্সের যন্ত্রনা দূর করার জন্য।
চিকেন পক্স একবার হলে কি আবার হয়?
অনেকের ভিতরে এই ধারণাটা রয়েছে যার একবার চিকেন পক্স হয় তাদের পরবর্তীতে আর চিকেন পক্স হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কথাটা আসলেই সত্য কেননা যার শরীরে একবার চিকেন পক্স হয়েছে তার শরীরে প্রতিরোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গিয়েছে তাই পরবর্তীতে আর চিকেন পক্স হবে না।
শেষ কথা, আশা করি ইতিমধ্যে চিকেন পক্স কেন হয়, চিকেন পক্সে এর লক্ষণ ও চিকেন পক্স এর চিকিৎসা কেমন হওয়া উচিত এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।
তারপরেও এই নিয়ে যদি কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।