বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় | বিলিরুবিন তৈরি হয় কোথায়

রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা যখন অনেক বেড়ে যায় তখন জন্ডিসের সৃষ্টি হয়ে থাকে। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা যদি স্বাভাবিক পর্যায়ে না আনা যায় তাহলে সেটা শরীরের  পক্ষে খুবই খারাপ হতে পারে।বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়তাই অবশ্যই রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে হবে। আজকের পোস্টে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায়, বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়?

বিলিরুবিন কেন বাড়ে ও বিলিরুবিন টেস্ট কত টাকা এই নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

বিলিরুবিন কেন বাড়ে?

আমরা সকলেই জানি যকৃতের প্রধান কাজ হলো খাদ্য হজম করা। তাছাড়া যকৃত দূষিত রক্তকে বজ্র পদার্থে রূপান্তরিত করতেও সাহায্য করে থাকে।

এই কার্যকারিতা যদি কখনো বা কোন কারণে ব্যাহত হয়ে থাকে তাহলে রক্তের বিলুরুবিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তখনই সাধারণত জন্ডিসের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

বিলিরুবিন বেড়ে গেলে করণীয়?

ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন যে রক্তে যখন বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয়ে যায় তখন জন্ডিস হয়ে থাকে। বিলিরুবিন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারেঃ

অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে কোন চিকিৎসা গ্রহণ ছাড়াই ৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। তাই এ ক্ষেত্রে রোগী যদি কোন ধরনের চিকিৎসা ছাড়া স্বাভাবিক হয়ে যায় কোন সমস্যা নেই।

রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে অবশ্যই এই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। কেননা অনেক ডাক্তার বলে থাকেন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিলে রক্তের বিলিরুবিনের মাত্রা কমতে শুরু করে।

সাধারণত এই সময়টাতে এসপিরিন, প্যারাসিটামল, এই সকল ব্যথার ঔষধ ও ঘুমের ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন ধরনের ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর সেবন করতে হবে। তাহলে কোন ধরনের সমস্যা হবে না।

বিলিরুবিন কোথায় তৈরি হয়?

বিলিরুবিন কোথায় তৈরি হয় এই বিষয়ে অনেকেই জানেন না। বিলিরুবিন সাধারণত লিভারে তৈরি হয়ে থাকে। বিলিরুবিনের মাত্রা যখন অনেকাংশে বেড়ে যায় তখন লিভারের ক্ষতিসাধন হতে থাকে। তাছাড়া এর ফলে ক্ষুধা অনেক কমে যায় এবং রোগীর শরীর হলুদ হয়ে যেতে থাকে।

বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায়?

রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায় বা রক্তে কিভাবে বিলিরুবিনের পরিমাণ খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিয়ে জন্ডিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই বিষয়ে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। নিম্নে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বা পরিমাণ কমানোর কয়েকটি উপায় বলে দেওয়া হলঃ

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে

রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমাতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে লিভারের যত্ন নিতে হবে। তাই এই সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে যার মাধ্যমে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের হয়ে যাবে এবং ধীরে ধীরে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমে যাবে।

কফি বা গ্রিন টি খেতে হবে

গ্রিন টি বা কফি লিভার সুস্থ রাখতে খুবই দারুণ কার্যকরী। নিয়মিত কোন ব্যক্তি যদি গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন তাহলে তার রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অনেক কমে যাবে। তাই রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমানোর জন্য নিয়মিত গ্রিন টি ও কফি খেতে পারেন।

পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে

যত পদ্ধতি অবলম্বন করুন না কেন যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে শরীরকে বিশ্রাম দিতে না পারেন তাহলে রক্তে বিলরুবিনের মাত্রা কোনোভাবেই কমবে না। তাই রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা কমাতে হলে বিশ্রাম নিতে হবে।

ত্রিফলা চূর্ণ খেতে হবে

রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা কমাতে ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়া যেতে পারে। এক চা চামচ ত্রিফলা চূর্ণ এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জল সেবন করতে হবে। এতে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অনেক কমে আসবে এবং ধীরে ধীরে শরীর স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

আখের রস খেতে হবে

যারা দ্রুত সময়ের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমাতে চান তারা আখের রস খেতে পারেন। আখের রস জন্ডিস রোগীদের খাবার তালিকার মধ্যে অন্যতম। জন্ডিস রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে হলে নিয়মিত আখের রস খাওয়ানো যেতে পারে।

বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়?

বিলিরুবিনের মাত্রা যখন 3 mg এর উপরে চলে যাই তখনই সাধারণত জন্ডিসের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে।তাই যখন বিলিরুবিনের মাত্রা 3 mg এর উপরে চলে যাবে তখনই মনে করতে হবে যে জন্ডিস হয়ে গিয়েছে।

বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত?

বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত এই নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে।রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.২ থেকে ০.৮ মিলিগ্রাম। যদি কখনো এর মাত্রা ২ এর উপরে উঠে যায় তাহলে চোখের পাতা হলুদ হয়ে যায় ও জন্ডিসের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।

বিলিরুবিন টেস্ট কত টাকা?

রক্তে বিলিরুবিন টেস্ট খরচ একক স্থানে একেক রকম হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেক স্থানে রক্তের বিলিরুবিন টেস্ট ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে নেওয়া হয়ে থাকে।

নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়?

নবজাতকের জন্ডিসের সমস্যা দেখা দিলে আমাদের অবশ্যই সচেতন হয়ে যেতে হবে। রক্তে যখন বিলিরুবিনের মাত্রা ১৫ গ্রাম ডেসির নিচে থাকে তখন এটা সাময়িক জন্ডিস হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

এক্ষেত্রে নবজাতকের কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে যদি বিলুরুবিনের মাত্রা ২৫ মিলিগ্রামের বেশি হয়ে যায় তাহলে সেটাকে বিভাজনক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ২.৫ mg এর উপরে গেলে নবজাতকের জন্ডিসের সমস্যা সৃষ্টি হয়।

শেষ কথা, আশা করি ইতিমধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমানোর উপায় ও রক্তে বিলিরুবিন কেন বাড়ে এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।

তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে কমেন্ট সেকশনে গিয়ে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

This website mainly provides information on exercise, fitness, wellness, healthy living, etc. in the Bengali language.

Leave a Comment