ফ্যাটি লিভারের খাদ্য তালিকা | ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত

আমাদের দেশে সাধারণত নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজই বেশি দেখা যায়। এর মূল কারণ হচ্ছে স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও কায়িক শ্রমের অভাব। এই ফ্যাটি লিভারের আদতে মূলত কোন চিকিৎসা নেই, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ছাড়া।ফ্যাটি লিভারের খাদ্য তালিকাওজন কমানো, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়ামই পারে একমাত্র এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে। তাহলে জেনে নিন ফ্যাটি লিভার হলে কী কী খাবেন এবং কী কী খাবেন না।

কী খাবেন?

সেদ্ধ করে পানি না ফেলে কিংবা সম্ভব হলে কাঁচা সালাদে যতটা সম্ভব হয় সবুজ পাতাওয়ালা সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

সবুজ শাকসবজি

গবেষণা বলছে যে, সবুজ পাতাওয়ালা শাকসবজির মধ্যে যে পলিফেনল এবং নাইট্রেট পাওয়া যায়। তা যকৃতের চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে। তবে রান্না ও সেদ্ধ করে ফেললে এর পলিফেনলের পরিমাণ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে আসে।

তাই আপনি সেদ্ধ করে পানি না ফেলে কিংবা সম্ভব হলে কাঁচা সালাদে যতটা সম্ভব সবুজ পাতাওয়ালা সবজি, যেমন শাক, লেটুস ও অন্যান্য পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন।

ডাল ও বীজজাতীয় খাবার

ছোলা, ডাল, মটরশুঁটি ইত্যাদি খাবারে স্টার্চ এবং আঁশ প্রচুর। এসব খাবার পরিপাকতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর, একই সঙ্গে ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও সয়াপ্রোটিন ও টফুও উপকারী।

সয়াতে যে বিটা কনগ্লাইসিন থাকে, সেটা ট্রাইগ্লিসারাইড ও ভিসেরাল ফ্যাট কমায়। সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই, যা ফ্যাটি লিভারের জন্য অনেক ভাল।

সামুদ্রিক মাছ

ইলিশ, টুনা, রূপচাঁদা, স্যামন, সার্ডিন ইত্যাদি ওমেগা তিন তেলযুক্ত সামুদ্রিক মাছ উপকারি এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে যকৃতে চর্বি ও প্রদাহ কমায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন মাছ খাওয়া উচিত।

ওটস ও জটিল শর্করা?

ফ্যাটি লিভার থেকে রেহাই পেতে আপনাকে অবশ্যই জটিল শর্করা যেমন ওটমিল বা লাল আটার বা যবের রুটি খেতে হবে।

বাদাম

আপনারা নানান ধরণের বাদাম রাখুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। বাদাম মূলত ইনসুলিন রেজিসট্যান্স কমায়, প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে থাকে। চার থেকে পাঁচটা আখরোট, কাজুবাদাম হতে পারে আপনার রোজকার বিকাল বেলার নাশতা।

মসলা

প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, কাঁচা হলুদের কারকিউমিন আর কাঁচা রসুন যকৃতের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে।

যে ছয়টি খাবার খাবেন না?

চিনি

ফ্যাটি লিভারের সবচাইতে বড় শত্রু কিন্তু চিনি বা শর্করা, ফ্যাট নয়। সাদা চিনি অথবা চিনিযুক্ত যেকোন খাবার, ডেজার্ট, জুস বা পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়তি চিনিই ট্রাইগ্লিসারাইড হিসেবে যকৃতে জমা হয়ে থাকে।

ভাজাপোড়া খাবার

আপনারা উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা যেকোন খাবার এড়িয়ে চলুন। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, যেকোন ফাস্ট ফুড আপনার জন্য একেবারে নিষেধ।

লবণ

দৈনিক দুই হাজার ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ কোনভাবেই খাওয়া যাবে না। এর মানে হচ্ছে রান্নায় যে লবণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে এর বাইরে যেকোন লবণ বা লবণযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার নিষেধ।

সহজ শর্করা

সাদা ভাত, ময়দার তৈরি পাউরুটি ও পরোটা, পাস্তা, নান, নুডলস ইত্যাদি যকৃতে চর্বি বাড়াবে। এর পরিবর্তে আপনারা বেচে নিতে পারেন। লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড অথবা লাল চাল, তা-ও পরিমিত পরিমাণে।

রেড মিট

রেড মিট, যেমন গরু কিংবা খাসির মাংস খাওয়া কমিয়ে ফেলুন। মাসে এক থেকে দুই দিন তাও দু-তিন টুকরা চর্বি ছাড়ানো মাংস খেতে পারেন। এর সম্পৃক্ত চর্বি আপনার জন্য খুবই ক্ষতিকর।

অ্যালকোহল

অ্যালকোহল হল যকৃতের শত্রু। তাই যেকোন ধরণের অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন ফ্যাটি লিভার হলে।

ফ্যাটি লিভারের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা?

এক সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন মাছ খাওয়া উচিত।

সকালের নাশতা?

এক বাটি ওটস অথবা দুটি লাল আটার রুটি বা ব্রাউন ব্রেড (পিনাট বাটার দিয়ে খেতে পারেন), এক চামচ চিয়া সিড, যেকোন একটা ফল, এক কাপ কফি কিংবা গ্রিন টি।

দুপুরের খাবার?

মাঝারি আকারের এক থেকে দুই পিস মাছ অথবা মুরগির মাংস দিয়ে এক কাপ লাল চালের ভাত, সবুজ পাতাওয়ালা সবজি সেদ্ধ কিংবা সালাদ (অলিভ অয়েল ড্রেসিং দিয়ে নিতে পারেন), ডাল।

বিকেলের নাশতা?

একটা আপেল অথবা পাঁচ থেকে ছয়টা কাজুবাদাম অথবা আখরোট খেতে পারেন।

রাতের খাবার?

বিনস, শসা, ব্রকলি, টমেটো ইত্যাদি দিয়ে এক বাটি সালাদ, এক কাপ টক দই আপনি খেতে পারেন।

শেষকথা

আশাকরি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনি সম্পূর্ণ মনযোগ সহকারে পড়েছেন। এবং এই আর্টিকেল পড়ে আপনি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। এরকম জানা অজানা তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট এর সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

This website mainly provides information on exercise, fitness, wellness, healthy living, etc. in the Bengali language.

Leave a Comment