প্রেসার লো হলে করণীয় কি- এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব আমাদের আজকের আর্টিকেলে। সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি, আমাদের পোস্টে। আশা করি সবাই ভাল এবং সুস্থ আছেন।
তাহলে আসুন এবার মূল আলোচনা শুরু করা যাক। দেখুন আমরা সবাই প্রায় কমবেশি এটা জানি যে লো প্রেসার অথবা হাই প্রেসার দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই সব সময় প্রেসার স্বাভাবিক রাখাটা খুবই জরুরী।অনেকের মনে আবার এমন ধারণা থেকে থাকে যে, যারা শারীরিক দিক দিয়ে অত্যন্ত মোটা তারা হাই প্রেসারের মানুষ। আর যারা দেখতে রোগা পাতলা তারা হলো- লো প্রেসার এর মানুষ। কিন্তু এই ধারণাটি একেবারেই ভুল।
কেননা স্থুল মানুষেরও নিম্ন রক্তচাপ অর্থাৎ লো প্রেসার থাকতে পারে। তাই শারীরিক গঠন বা আকৃতির ওপর নির্ভর করে কারো প্রেসার নির্বাচন করাটা সম্পূর্ণই বোকামি। তাই প্রেসার মাপার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- এই লিংকে।
প্রেসার লো হলে করণীয়?
এখন কথা হচ্ছে আপনার যদি প্রেসার লো হয়ে থাকে তাহলে আপনি কি করবেন? আপনার কোন কোন বিষয়ে সবসময় নজরে রাখতে হবে? কোন দিকগুলো খেয়াল রাখলে আপনি আপনার প্রেসারকে স্বাভাবিক করতে পারবেন!
ইত্যাদি এ বিষয়ে আমরা পর্যায়ক্রমে আপনাদেরকে জানাবো। কিন্তু তার আগে জানতে হবে প্রেসার লো হলে আপনি বুঝবেন কিভাবে? অর্থাৎ প্রেসার লো এর লক্ষণ গুলো কি কি? তাহলে চলুন এ পর্যায়ে জেনে নেই নিম্ন রক্তচাপের কারণ বা লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে।
প্রেসার লো হওয়ার কারণ?
প্রেসার লো হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলোঃ
- পানি শূন্যতা
- ডায়রিয়া বা কতদিক বমি হওয়া
- সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া
- অস্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইল
- রক্তশূন্যতা
- শরীরে হরমোন জনিত ভারসাম্যহীনতা
- দীর্ঘমেয়াদি কোন রোগে আক্রান্ত থাকা
- হজমে দুর্বলতা।
তবে হ্যাঁ, এর বাইরে শারীরিকভাবে কোন দুর্ঘটনার ফলে রক্তপাত ঘটলেও কখনো কখনো প্রেশার লো হয়ে যায়। পাশাপাশি অপুষ্টিজনিত কারণেও লো প্রেসার হয়ে থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের প্রথম ছয় মাস হরমোনের প্রভাবে প্রেশার লো হতে পারে।
লো প্রেসারের লক্ষণসমূহ কি কি?
লো প্রেসারের লক্ষণগুলো হলোঃ
- মাথা ঘোরানো
- মাথা হালকা অনুভব করা
- হুটহাট অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- কিছুক্ষণ যাবত বসে বা শুয়ে থাকার পর দাঁড়ালে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া।
- চোখে অন্ধকার দেখা
- ভারসাম্যহীনতা
- শারীরিক দুর্বলতা
- মানসিক অবসাদগ্রস্ততা
- অমনোযোগী
- ঘনঘন শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া
- হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হৃদস্পন্দন
- নালি বা পালসের গতি বৃদ্ধি পাওয়া।
প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে?
লো প্রেসারের লক্ষণ এবং কারণ সমূহ সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি। এখন কথা হচ্ছে লো প্রেসার হলে কি খেতে হবে। কোন কোন খাবার খেলে লো প্রেসার কে স্বাভাবিক প্রেসারে নিয়ে আসা সম্ভব হবে?
এ পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরবর্তীতে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রেসার লো হলে খাবারের চার্ট পরিবর্তন করাটা উচিত।
অর্থাৎ খাবারের অবশ্যই কিছু আইটেম রাখতেই হবে যেগুলো প্রেসার লো হলে তার স্বাভাবিক নিয়ে আসায় ভূমিকা লাগবে। তাই যদি আপনার প্রেসার লো হয়ে যায় এ সময় খাবেনঃ
- ডিম
- আঙ্গুর ফলের রস
- ডার্ক চকলেট
- স্যালাইন
- প্রচুর পানি
- ক্যাফিন
- পনির
- লিকার চা
পাশাপাশি এক চিমটি লবণ খেতে পারেন সেই সাথে দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় অবশ্যই গ্লুকোজ ও স্যালাইন রাখবেন।
লো প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় কি?
লো প্রেসার কমানোর ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো মেইনটেন করে চলতে পারলে আপনি আপনার প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। আর সেগুলো হলোঃ
উপায় ১ঃ নুন পানি
সেবন বিধিঃ
নুনপানে একসঙ্গে গুলিয়ে খেলে লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কেননা নুনে রয়েছে সোডিয়াম যার রক্তচাপকে কিছুটা বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনার যদি প্রেসার লো হয়ে থাকে তাহলে করণীয় হবে নুন পানি খাওয়া।
তবে হ্যাঁ এটাও মাথায় রাখবেন অতিরিক্ত নুন গ্রহন করাও উচিত নয়। তাই এক গ্লাস পানিতে শুধুমাত্র অর্ধেক চামচ নুন মিশিয়ে পান করবেন।
প্রতিদিন দুই গ্লাস পানি খেতে পারবেন এভাবে তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার প্রেসার লো থেকে কিছুটা হাই অর্থাৎ স্বাভাবিক এ পৌঁছাচ্ছে।
উপায় ২ঃ কিসমিস
সেবন বিধিঃ
কিসমিসে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো লো প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আপনি হয়তো জানবেন নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রাচীনকাল থেকে কিসমিস ব্যবহার করা হয়ে আসছে।
এটা মূলত খেতে হবে ভিজিয়ে রেখে। আপনি যদি লো প্রেসার এর সমস্যা ঠিক করতে চান তাহলে 30 থেকে 40 টি কিসমিস এক কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।
তারপর পরদিন সকালবেলা খালি পেটে তা খেতে হবে। এভাবে যদি আপনি এক সপ্তাহ কিসমিস খান তাহলে কিছুদিনের মধ্যে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে ইনশাআল্লাহ।
উপায় ৩ঃ কফি
সেবন বিধিঃ
দুধ চিনি ছাড়া ব্লাক কফি ব্লাড প্রেসার দ্রুত বৃদ্ধি করে দিতে পারে। তাই যাদের প্রেশার লোক তারা ঘরোয়া এই উপায়টি অবলম্বন করে মুহূর্তের মধ্যে তাদের প্রেশার কিছুটা হলেও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।
তাই আপনি চাইলে এক থেকে দুই কাপ ব্ল্যাক কফি প্রতিদিন খেতে পারেন। আশা করা যায় এতে করে আপনার লো প্রেসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে।
উপায় ৪ঃ গাজর
সেবন বিধিঃ
আপনি যদি গাজরের রস সকালে খালি পেটে এক গ্লাস খেতে পারেন তাহলে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই আসবে এটা গ্যারান্টি।
তবে হ্যাঁ গাজরের রসের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে নিলে আরো বেশি কাজে আসবে। এটা মূলত আপনাকে খেতে হবে দিনে দুইবার। যা আপনার লো প্রেসার কে স্বাভাবিক করবে।
উপায় ৫ঃ বাদাম
সেবন বিধিঃ
আপনি যদি প্রতিদিন বাদাম দুধ খেতে পারেন তাহলেও লো প্রেসারের সমস্যা অনেকটাই ঠিক হয়ে যাবে। এর জন্য আপনাকে প্রত্যেকদিন ৭ থেকে ৮ টি কার্ড বাদাম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
এরপর সকালে খোসা ছাড়িয়ে সেটা পেস্ট করে এক গ্লাস দুধের দাম মিশিয়ে খেতে হবে। তাই আমাদের সাজেস্ট করা এই যে কোন উপায়ের মধ্যে থেকে আপনি একটা উপায় বেছে নিয়ে ট্রাই করতে পারেন। আশা করা যায় লো প্রেসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
লো প্রেসারের ঔষধের নাম?
অনেকেই লো প্রেসারের ওষুধের নাম জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রকৃত সত্যি কথা হচ্ছে লো প্রেসারের এমনি কোনই ওষুধ নেই। যা আছে সেগুলো হচ্ছে প্রেসার বৃদ্ধি করার।
তবে কখনো কখনো চিকিৎসকরা লো প্রেসারের প্রতিকারের জন্য ওআরএস খাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন। তবে আপনি চাইলে মূলত ঘরোয়া পদ্ধতিতেই নিজের প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবেন।
তাই আমরা সাজেস্ট করব লো প্রেসারের ঔষধ সেবন না করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তার নিয়ন্ত্রণে রাখার।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করবেন।
লো প্রেসারে কি হার্ট অ্যাটাক হয়?
লো প্রেসারে কি হার্ট অ্যাটাক হয়? খুবই কমন একটি প্রশ্ন এটি। দেখুন আপনি যদি একটু খেয়াল করেন তাহলে লো প্রেসার হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অবশ্যই হৃদরোগের বিষয়টি দেখতে পাবেন।
আর হার্ট অ্যাটাক মূলত হৃদরোগ জনিত সমস্যা। তাই লো প্রেসারের কারণে হার্ট অ্যাটাক হয় এমনটা নয় বরং হার্ট অ্যাটাক থেকে প্রেসার অনেকটাই লো হয়ে যায়। সুতরাং নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাকের ফলে।
লো প্রেসারে কি স্ট্রোক হয়?
রক্তচাপ যদি ১১০/৬০ এর নীচে নেমে যায়, তা হলে লো ব্লাড প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ বলে তাকে ধরে নিতে হয়। আর রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে গেলে মস্তিষ্ক, কিডনি, হৃৎপিণ্ডে ঠিকভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে না।
ফলে বুক ধড়ফড় করে, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসা, বমি ভাব, স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। আর এর থেকে কখনো কখনো স্ট্রোক ও হতে পারে।
লো প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত নয়?
লো প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত তা আমরা ইতিমধ্যে বলেছি। কিন্তু কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয় তা এ পর্যায়ে আমরা বলব। আসলে লো প্রেসার হলে মূলত স্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খেতে হবে।
সেগুলো অবশ্যই পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার হতে হবে। আর এড়িয়ে চলতে হবে অস্বাস্থ্যকর ফুড গুলো। তাই লো প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত নয় এই প্রশ্নের উত্তরে বলব?
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাবারগুলো লো প্রেসার হলে খাওয়া উচিত নয়। এ সময় পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং জীবাণুমুক্ত খাবার খাওয়াটা অধিক বেশি জরুরী।
লো প্রেসার হলে কি ফল খাওয়া উচিত?
লো প্রেসার হলে অবশ্যই যে কয়েকটি ফল খেতে হবে সেগুলো হলোঃ
- আঙ্গুর ফল
- নারকেল (নারকেলের পানি)
- তরমুজ
- পেয়ারা সহ প্রভৃতি।
গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো হলে করণীয়?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় নিম্ন রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য কোন বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে না। কেননা গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন সময়ে রক্তচাপ কিছুটা লো হয়ে যায় তবে তৃতীয় ত্রইমাসিকের পরে রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে।
তবে কখনো কখনো চিকিৎসকরা দুইটি ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেগুলো হলো হরমোন বুস্টার এবং অ্যানিমিয়া।
পরিশেষে সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ লো প্রেসার হলে করণীয় সম্পর্কিত আমাদের আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করছি। অবশ্যই আপনাদের মন্তব্য কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দেবেন সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।