আমরা জানি দুধ একটি পুষ্টিকর খাবার, এটা খেলে আমাদের শরীরের ও অনেক উপকার হয়ে থাকে, এবং জাল দেওয়ার সময় কতটুকু পরিমাণের পানি দিতে হয়?কিন্তু আমরা এগুলো জানি না যে দুধটা কিভাবে জাল দিয়ে খেতে হয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দুধ অনেক উপকারে আসে, কারণ দুধে অনেক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে।
আসুন আমরা নিচে জেনে নেই যে গরুর দুধ জ্বাল দেওয়ার নিয়ম, দুধ জাল দিতে কতটুকু পরিমাণের পানি দিতে হয় এবং দুধ কতটুকু পরিমাণে জাল দিলে দুধের পুষ্টিগুন ঠিক থাকবে।
দুধ বেশি জ্বাল দিলে কি হয়?
আমরা সবাই জেনে থাকি যে দুধ অতিরিক্ত পরিমাণে জাল দিয়ে ঘন করে ঘি, মাখন, ক্রিম বা সর তোলা হয় তখনই এটি ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। কারণ যখন দুধ অতিরিক্ত পরিমাণে জাল দেওয়া হয় তখন ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই, অনেকটা পরিমাণের কমে যায়।
আবার আমরা অনেকেই জানিনা যে দুধ যদি জাল না দেওয়া হয়, তাহলে দুধে অনেক রকম রোগ জীবাণু থাকতে পারে,এগুলো আমাদের শরীরের পক্ষে অনেক ক্ষতিকর, তবে দুধ একবারের বেশি জাল দেওয়া ঠিক নয় কারণ এতে দুধের অনেক পুষ্টি গুনাগুন ও অনেক ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়।
আমরা চাইলে দুধ একবার জ্বাল দিয়ে ফ্রিজে রেখে দেওয়ার পরে দ্বিতীয়বার জাল না দিয়ে ফ্রিজের ওই ঠান্ডা দুধ খাওয়ায় অনেক উপকার আছে।
দুধ কিভাবে পরীক্ষা করা হয়?
দুধ পরীক্ষা করার অনেক রকম উপায় আছে, তার ভিতর দুধ পরীক্ষা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ঢালু জায়গা দেখে সেখানে দুধ ঢেলে দিন দুধটা যখন গড়িয়ে যাবে সেটা যদি খাঁটি দুধ হয় তাহলে সাদা রংয়ের আবরণ দেখা যাবে।
আর যদি দুধ ভেজাল হয় তাহলে সেখানে কোন আবরণ অথবা দাগ দেখা যাবে না। দুধ জাল দেওয়ার মাধ্যমেও আরেকটি পরীক্ষাও আপনারা করতে পারেন এই পরীক্ষাটি করা অনেকটাই সহজ।
আপনারা দুধ গরম অথবা জাল দেওয়ার সময় যদি দেখেন দুধ আস্তে আস্তে হলদে হয়ে যাচ্ছে তবে ওই দুধ আপনারা পান করবেন না। তখনই আপনারা বুঝে নেবেন যে এটা ভেজাল দুধ এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ ওই দুধে মেশানো হয়েছে কার্বোহাইড্রেট।
আরেকটি পরীক্ষা হচ্ছে সল্ট টেস্ট। কারণ দুধে শুধু কার্বোহাইড্রেট মেশানো হয় না। দুধের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য এতে মেশানো হয় স্টার্চ। তবে এটা আপনি ঘরে বসেও পরীক্ষা করতে পারবেন।
একটি পাত্রে দুধ নিয়ে ওই পাত্রের ভিতরে দুই থেকে তিন চামচ লবণ দেবেন। লবন দেওয়ার পর যদি দেখেন লবণের সংস্পর্শে দুধের সাদা কালার টি নীলচে রং ধারণ করছে তবে বুঝবেন দুধে কার্বোহাইড্রেট ও স্টার্চ মেশানো আছে।
আরো কিছু পরীক্ষা আছে তার ভিতরে যেমন:-কিছু পরিমাণের দুধ একটি বোতলের ভিতরে নিন এবং বোতলের মুটকিটা লাগানোর পরে বোতলটা অনেক জোরে ঝাকি দিন।
যদি দেখেন বোতলের ভিতর অতিরিক্ত মাত্রায় ফেনা হচ্ছে তাহলে তখন বুঝবেন সেই দুধে ডিটারজেন্ট মেশানো আছে। আর এই সমস্ত দুধগুলি খাওয়া মানুষের শরীরের পক্ষে অনেক ক্ষতিকর।
দুধে পানি দিলে কি হয়?
দুধে পানি মেশালে দুধের গুণগত মানের কোন তারতম্য হয় না। এতে করে শুধু দুধের স্বাদটা একটু পানসে ও ফিকে হয়ে যাবে। দুধে পানি মিশালে এতে দুধের পুষ্টিমান বাড়ে। দুধের যে পুষ্টি গুনাগুন থাকে সেটা তাদের থেকেই যায়।
দুধ একটি নির্ভেজাল খাদ্য বলে আমরা জেনে থাকি। তবে এই দুধের সাথে যদি আমরা গুড় অথবা চিনি মিশিয়ে খায় তাহলে আমাদের পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে।
দীর্ঘদিন চিনি বা গুড় মিশিয়ে দুধ পান না করলে পরিপাক ক্রিয়ায় সমস্যা দেখা যেতে পারে। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দুধ পান করানোর সময় সে দুধে একটু বেশি পরিমাণে পানি দেওয়াই উচিত। এতে বাচ্চাদের শরীরের কোন সমস্যা হবে না।
গরুর দুধ জ্বাল দেওয়ার নিয়ম?
গরুর দুধ জাল দেওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। গরুর দুধ যদি সঠিকভাবে জাল দিতে না পারেন তাহলে দুধের উপকারিতা কোনভাবেই পাবেন না।গরুর দুধ জাল দিয়ে নেওয়ার আগে দুধের ৪ ভাগের এক ভাগ পানি দিয়ে দিতে হবে।
অর্থাৎ দুধের পরিমাণ যদি এক কেজি হয়ে থাকে তাহলে পানি দিবেন ২৫০ গ্রাম। তারপরে আস্তে আস্তে চাল দিতে হবে এবং যখন দেখতে হবে দুধ লালচে বর্ণের হয়ে যাচ্ছে তখন দুধ তুলে ফেলতে হবে।
দুধ কতক্ষণ ফুটাতে হয় | দুধ কতক্ষণ ভালো থাকে
আপনারা দুধ ফুটানোর সময় এই জিনিসটি খেয়াল রাখবেন যে যদি দুধ ফোটানোর অভ্যাস থাকে পেস্টুরাইজড দুধ ফোটাতে পারেন। তবে এটি ৮ থেকে ১০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ফোটাবেন না।
যদি দেখা যাই এক গ্লাস দুধ চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে ও মাঝারি আচেঁ, উত্তপ্ত করা হয় যা পানযোগ্য। এতে দুধের পুষ্টিগুন অটুট থাকে।
দুধ না ফুটিয়ে খাওয়া শরীরের পক্ষে অনেক ক্ষতি, কারণ দুধে অনেক রকম রোগ জীবাণু থাকতে পারে যেগুলা শরীরের ভিতরে গেলে আমাদের শরীরের পক্ষে অনেক ক্ষতিকার দিক দাঁড়িয়ে পড়ে।
পুষ্টিবিদদের মতে, দুধ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী সুষম খাবার। অনিদ্রার সমস্যা থেকে হজমের গন্ডগোল সবেতেই দুধ অপরিহার্য। তবে দুধ অতিরিক্ত পরিমাণের গরম হওয়া এতেও শরীরের পক্ষে অনেক ক্ষতিকর।
কারণ অতিরিক্ত পরিমাণের ফোটালে এতে যে পুষ্টি গুনাগুন থাকে সেগুলো সবই নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য আমরা দুধ পান করার আগে হালকা পরিমাণের দুধটা গরম করে তারপরে পান করব।
এতে করে দুধে থাকা রোগ জীবাণু ধ্বংস হবে এবং পুষ্টিগুণ ও দুধে থাকবে। আর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলাও ধ্বংস হয়ে যাবে। আর আমাদের দেশে যে সমস্ত প্যাকেটজাত দুধগুলো রয়েছে এগুলা না ফুটিয়ে খাওয়াতে আমাদের কোন সমস্যা হবে না।
এ সমস্ত প্যাকেট জাত দুধগুলো প্যাকেটজাত হওয়ার আগেই এগুলা ফুটিয়ে নেওয়া হয়। এতে করে এর ভিতর ব্যাকটেরিয়া গুলা আগেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
শেষ কথা, আশা করি পোস্টটি যারা বিস্তারিত ও মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা দুধ জাল দেওয়ার নিয়ম ও দুধ কিভাবে জাল দিতে হয় এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।
তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।