এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায় | এনাল ফিসার থেকে কি ক্যান্সার হয়

এনাল ফিসার হল মলদ্বারের একটি রোগ। যার কারণে মলদ্বারের নিচের অংশ ফেটে গিয়ে তীব্র ব্যথা হয়। এ ব্যথার কারণে রোগী মলত্যাগে ভয় পায়। কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ায় কারণে মলদ্বার আরও বেশি ছিঁড়ে যায়।এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায়আমাদের দেশে এনাল ফিসার রোগের চিকিৎসার জন্য অনেকেই হাতুড়ে চিকিৎসক বা কবিরাজের কাছে যান। অনেকেই এনাল ফিসারকে পাইলস ভেবে মলদ্বারে ইনজেকশন বা গাছের পাতা লাগিয়ে দেয়।

এতে করে রোগটি আরও জটিল হয়ে উঠে। বর্তমানে এনাল ফিসারের আধুনিক কাটা ছেঁড়াবিহীন চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব।

এনাল ফিসারের লক্ষণ?

  • মলতাগের সময় এবং মলত্যাগের পর মলদ্বারে তীব্র ব্যাথা (যা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে)।
  • এ সময় মলের সঙ্গে তাজা লাল রক্ত যেতে পারে।
  • মলদ্বারে বাইরে এবং ভিতরে গোঁটা বা ফোলা থাকতে পারে।
  • মলত্যাগে ভীতি, ব্যথার কারণে মলত্যাগে অনীহা আসতে পারে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা অল্প বা ব্যথা নাও থাকতে পারে।

এনাল ফিসার কেন হয়?

মল যদি শক্ত এবং শুষ্ক হয় তাহলে মলদ্বারে আঘাতের ফলে মলদ্বার ছিঁড়ে গিয়ে এনাল ফিসার হয়। মল নরম বা ডাইরিয়া হলেও ফিসার হতে পারে। যাদের মলদ্বারের চারপাশের মাংশপেশি বেশি শক্ত থাকে। তাদের এনাল ফিসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আর মলদ্বার টাইট থাকলে রক্ত সরবরাহ কমে যায়, যার ফলে এনাল ফিসারের ঘা শুকাতে পারে না। এছাড়াও মলদ্বারের প্রদাহ বা টিউমারের কারণে এনাল ফিসার হতে পারে।

এনাল ফিসার কত প্রকার ও কি কি?

এনাল ফিসার দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ

  • তীব্র একিউট (Acute) এনাল ফিসার
  • দীর্ঘস্থায়ী ক্রনিক (Chronic) এনাল ফিসার

তীব্র একিউট (Acute) এনাল ফিসার কি?

তীব্র একিউট এনাল ফিসার প্রাথমিকভাবে একটি তাজা টিয়ারকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। যা কাগজ কাটা টিয়ারের মতো দেখতে হয়।

দীর্ঘস্থায়ী ক্রুনিক এনাল ফিসার কি?

দীর্ঘস্থায়ী ক্রুনিক এনাল ফিসারে মলদ্বারের ভেতরে ও বাইরে গোঁটা থাকে। এর চিকিৎসা বেশ কঠিন।

এনাল ফিসারের ঝুঁকির কারণ গুলো কি কি?

মলদ্বারে এনাল ফিসারের বিকাশের সাথে যুক্ত কিছু ঝুঁকির কারণগুলো হলঃ

  • হেমোরয়েডের ইতিহাস
  • আঘাত (প্রসবের সময়)
  • ভারী ওজন উত্তোলন
  • দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য
  • বারবার ডায়রিয়া

এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায়?

  • মল নরম রাখার জন্য বেশি বেশি করে শাক সবজি, সালাদ ও পানি বেশি করে খেতে হবে।
  • মল নরম রাখার জন্য ইসবগুলের ভুশি কিংবা ঔষুধ খেতে হবে।
  • মলদ্বারে ব্যাথা কমার জন্য মলম ও মলত্যাগের পর দিনে কয়েক বার সিজ বাথ নিতে হবে।
  • যেমনঃ কুসুম গরম পানিতে লবন দিয়ে দিয়ে কোমর ডুবিয়ে ১০ থেকে ২০ মিনিট বসে থাকতে হবে।
  • সিজ বাথ মলদ্বারের আঁট সাঁট ভাব কমিয়ে দিবে।
  • এবং মাংসপেশিকে শিথিল করে ফলে ফিসার ভাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অন্যান্য ঔষধ যেমনঃ নাইট্রোগ্লিস্যারীন মলদ্বার শিথিল করার জন্য ব্যবহার করার হয়।
  • এ সময় বেশি ব্যথার ঔষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • দীর্ঘস্থায়ী এনাল ফিসারের ক্ষেত্রে অপারেশন দরকার হতে পারে।

এনাল ফিসার এর সমস্যা কি আবার হতে পারে?

নিয়ম কানুন মেনে চলা ও ঔষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পর মল যদি আবার শক্ত হয় বা মলদ্বারে আঘাত পেলে আবার এনাল ফিসার হতে পারে। এ কারণে মলদ্বার ব্যাথা, রক্তপাত বন্ধ হলেও মল নরম রাখা উচিত।

এ সময় শাকসবজি, সালাদ, পানি বেশি খাওয়া ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে। যদি কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া এনাল ফিসার হলে অবশ্যই ডাক্তারকে দেখাতে হবে।

ঔষুধের মাধ্যমে এনাল ফিসার ভাল না হলে কি করার আছে?

নিয়ম কানুন মেনে চলা ও ঔষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পরও আপনার যদি এনাল ফিসার ভাল না হয়। তাহলে রোগীকে আবার পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ। মল সব সময় শক্ত বা তরল হলে, মলদ্বার ছোট হয়ে গেলে বা মাংশপেশি শক্তি থাকলে এনাল ফিসার ভাল নাও হতে পারে।

অন্ত্রের প্রদাহ রোগ, অন্ত্রের সংক্রমণ বা মলদ্বারে টিউমার হলে এনাল ফিসার ভাল হয় না। যে সকল রুগী অনেক দিন ধরে মলদ্বারে ব্যাথার অভিযোগ করেন। তাদের কলনস্কপি পরীক্ষা বা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা উচিৎ।

এনাল ফিসারে সার্জারির ভুমিকা কি?

এনাল ফিসার রোগের সার্জারি দুই ধরনের হয়। এক হল মলদ্বারের পেশীতে বটুলিনাম ইনজেকশন (Botulinum toxin) দেয়া ও দুই হল অপারেশন করে মলদ্বারের পেশীর কিছু অংশ কেটে দেয়া (Lateral internal sphincterotomy)।

এনাল ফিসারের অপারেশন করে রুগী এক দিনের মধ্যে বাড়ি চলে যেতে পারে। আর এই রোগের অপারেশনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মলদ্বার বা পায়ূপথের পেশীকে শিথিল করা। যার ফলে মলদ্বার ব্যথা কমে যায় এবং মলদ্বার স্বাভাবিক হয়।

এ সময় এনাল ফিসারের ঘা শুকিয়ে যায়। এনাল ফিসারের অপারেশন করলে ৯০% ভাগের বেশি রুগী সম্পূর্ণ ভাল হয়। সকল অপারেশনেরই কিছু না কিছু ঝুঁকি থাকে, কদাচিৎ এই অপারেশনের পর বাতাস বা তরল মল ধরে রাখা কষ্ট হতে পারে।

তবে আপনাকে কলোরেকটাল সার্জন এসব ঝুঁকির ব্যাপারে আলাপ করবেন। ও আপনার জন্য যথার্থ চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।

এনাল ফিসার অপারেশনের পর ভাল হতে কতদিন লাগবে?

এনাল ফিসারের চিকিৎশার ক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, ঔষধ বা অপারেশন যাই হোক না কেন? এনাল ফিসার থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে ৬ থেকে ১০ সপ্তাহ লাগতে পারে।

অপারেশনের পর ব্যথা ও রক্তপাত হ্রাস পায়, এরপরেও মল স্বাভাবিক রাখা, শাকসবজি, সালাদ এবং পানি বেশি আছে এমন খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

ক্রমাগত শক্ত বা তরল মলত্যাগ কিংবা পায়ূ পেশী টাইট হয়ে থাকলে, ঘা শুঁকাতে বিলম্ব হতে পারে। কিন্তু অপারেশনের ২ থেকে ৩ দিন পরেই কাজে যোগ দিতে পারে। অপারেশনের পরে মলত্যাগে কোন সমস্যা ধরনের থাকে না বা তরল খাবার খেতে হয় না।

এনাল ফিসারের যে অপারেশন করা হয় তাতে সিজ বাথ কিংবা গরম পানিতে বসতে হয় না বা ড্রেসিং এর দরকার নেই ও সেলাই কাটারও তেমন কোন ঝামেলা থাকে না।

এনাল ফিসার থেকে কি ক্যান্সার হতে পারে?

এনাল ফিসার রোগ থেকে কখনই ক্যান্সার হতে পারে না। কিন্তু যদি ক্রমাগত ব্যাথা থাকে তাহলে রুগীকে সাবধানতার সাথে পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাথার অন্য কারণও থাকতে পারে।

এনাল ফিসার যদি ভালও হয়ে যায়। তবে আপনাকে কলোরেকটাল সার্জন আরও পরীক্ষা করতে পারে। যদি মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায়, তবে কলনস্কপি পরীক্ষা করতে হতে পারে।

মলদ্বারে এনাল ফিসারের জন্য ওষুধ?

এনাল ফিসারের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে, আপনাকে সঠিক পরীক্ষা ও ওষুধের জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তার আপনাকে উপসর্গ উপশম করার জন্য সাময়িক অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যাথানাশক মলম প্রয়োগ করতে বলতে পারেন।

তবে মলদ্বারের এনাল ফিসার কিছু দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে ফিসার, ক্লট ও প্রল্যাপস ইত্যাদি অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

Leave a Comment