বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

বাদাম এই ফলটার সাথে আপনারা কম বেশি সবাই পরিচিত। বাদাম আমাদের অনেকের পছন্দের একটি ফল। অবসরে আড্ডায় সব আমরা বাদাম পেলে অন্য রকম একটা ফিলিংস আসে মনে। তাছাড়া বাদামের পুষ্টিগুণ এবং শারীরিক উপকারিতার দিক থেকে দেখতে গেলে এর কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে।বাদাম খাওয়ার উপকারিতাবাদামের মজুদ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ই, ফাইবার, সেলেনিয়াম, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো এসিড ইত্যাদি আরও অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের শরীরের অনেক কাজে লাগে।

তাছাড়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিয়মিত যদি কেউ এক বাটি করে বাদাম খেতে পারেন। তাহলে তার শরীরে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এর প্রবেশ ঘটে, যা শরীরকে চাঙ্গা রাখে। তার সাথে একাধিক রোগ থেকে শরীরকে মুক্তি দিয়ে থাকে।

আজকে আমি এই আর্টিকেলের আপনাদের সাথে আলোচনা করব এই সুন্দর ফলটির উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরী না করে জেনে নেয়া যাক বাদাম খাওয়ার উপকারিতাঃ

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা?

হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে থাকে

বাদামের ভিতরে থাকা ফসফরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে থাকে। যার ফলে সাধারণত হাড়ের ক্ষমতা দিন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। নিয়মিত বাদাম খেলে হাড়ের গঠন শক্তিশালী হয়।

তাই আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে ১ বাটি করে বাদাম খাওয়া শুরু করেন। তাহলে আপনার জীবনে আর কোন দিন হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। তাছাড়া নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে আপনার হাড় আরো অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

ব্রেনের পাওয়ার বৃদ্ধি পেয়ে থাকে

কিছুদিন আগে আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে বাদামের সাধারণত এমন কিছু উপাদান রয়েছে। যা কগনিটিভ পাওয়ার, আরও সহজভাবে যদি বলা যায় মস্তিষ্কের পাওয়ার বৃদ্ধি করতে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তাছাড়া আপনি বাদামের ভেতর এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাবেন। যার মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নতির সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। তাইতো সাধারণত শিক্ষকেরা পরীক্ষার্থীদের নিয়ম করে পরীক্ষার কিছুদিন আগে থেকে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে বলেন।

ক্যান্সারের মতো রোগ থেকে দূরে রাখে

বাদামের আরেকটি বিশেষ গুণ হলো এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। বাদামের ভিতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানো মধ্য দিয়ে নানাবিধ সংক্রমণকে দূরে রাখতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

শুধু তাই নয় বাদামের থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের আরো অনেক উপকারে লেগে থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ট্রেস কমিয়ে ত্বকের ক্ষত প্রতিরোধ করে থাকে, সেই সাথে এটি ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পুষ্টিহীনতা দূর করে থাকে

বাদামের শরীরে উপস্থিত ১৪ গ্রাম ফ্যাটসহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ভিটামিন বি2 এবং ফসফরাসের মতো কার্যকারী সব উপাদান। আর এই সব কয়টি উপাদানের সাধারণত শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো একাধিক মারাত্মক রোগ গুলোকে দূরে রাখতেই এই উপাদানগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি যদি এক মুঠো বাদাম খান, তাহলে আপনার শরীরে ১৬১ ক্যালোরি প্রদেশ করে থাকে। যার ফলে এই খাবারটি আপনি যদি খান আপনার তেমন ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে থাকে

বাদাম হলো এমন একটি উপাদান যা সাধারণত ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্য দিয়ে নানাবিধ রোগে দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

আর এর ভিতরে উপস্থিত থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণের কথা তো বলে শেষ করা যাবে না। এই উপাদানটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের স্ট্রেস কমিয়ে ত্বকের ক্ষত রোধ করে, সেই সাথে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতে সাহায্য করে থাকে।

খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়

বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলের ফলে অনিয়ন্ত্রিত হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই সাধারণত এই বিষয়ে সাবধান থাকাটা অনেক জরুরী। শরীরের যেন কোনভাবেই আমাদের বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি না পায় সেদিকে আমাদের বাড়তি সচেতন থাকতে হবে। আর আপনি যদি প্রতিদিনের ডায়েটে বাদাম রাখেন।

তাহলে আপনার এজন্য আর কোন চিন্তাই করতে হবে না। সাধারণত বাদামি উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরের ভিতরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। যার ফলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের হার্টের রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে

বাদামে থাকা উপাদান শুধু ডায়াবেটিস নয় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। কেননা এতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। সাধারণত একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে শরীরে খনিজ লবণের ঘাটতি হলে অল্প সময়ের মধ্যেই শরীরের ব্লাড প্রেসার মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে থাকে।

আর বেশি দিন যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তাহলে হঠাৎ করেই স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়ে থাকে। তাই আমাদের শরীরে কোন সময় যেন ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি দেখা না দেয় সেই দিকে আমাদের একটু বাড়তি নজর দেওয়া উচিত।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে

আপনি যদি নিয়মিত বাদাম খান, তাহলে আপনার খিদে অনেক কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা আমাদের কমে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে থাকে।

কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে

বাদামে উপস্থিত প্রচুর মাত্রার ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে থাকা শরীরের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তাদের শরীরে যেন কোনভাবে ক্ষতের সৃষ্টি না হয় সেদিকেও এটি খেয়াল রেখে থাকে। আর তাই সাধারণত বয়স বাড়লেও আপনার শরীরের ওপর তেমন কোন প্রভাব পড়ে না।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে থাকে

বাদাম খাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ গুণ হলো এটি হজম ক্ষমতার উন্নতি সাধন করে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত জলে ভেজানো কাজু বাদাম খেতে পারেন। তাহলে আপনার হজম ক্ষমতা উন্নতি ঘটতে শুরু করবে।

সেই সাথে আমাদের গ্যাস এবং পেটের অম্বের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। যার ফলে শরীর থাকে সকল সময় সুস্থ এবং হজম তন্ত্র থাকে সঠিক।

শেষ কথা

বাদাম খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। বাদামে থাকা উপাদান আমাদের শরীরের যথাযথ পুষ্টি উপাদান মেটানোর পাশাপাশি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের শরীরকে রাখে সব সময় সুস্থ এবং প্রাণবন্ত।

ছোট এই ফল বাদামে যে কত ধরনের কার্যকারী সব উপাদান রয়েছে তা আপনি নিজেও জানেন না। আর এই বাদাম যদি আপনি নিয়মিত খাওয়া শুরু করেন। আপনার শরীর যে কত ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাবে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আর তাই নিয়মিত বাদাম খান এবং সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করুন।

Sharing Is Caring:

This website mainly provides information on exercise, fitness, wellness, healthy living, etc. in the Bengali language.

Leave a Comment