ব্রেস্ট ক্যান্সার খুবই মারাত্মক একটি রোগ।যখন স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পান্ডাতে পরিণত হয়।বাংলাদেশের নারীরা বেশিরভাগই স্তন ক্যান্সারের সমস্যায় ভুগে থাকেন। ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে অনেকের সফলতা না থাকায় সমস্যাটা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
তাই আজকের পোস্টে ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়, ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও বেস্ট ক্যান্সার হলে করণীয় কি এই নিয়ে কিছুটা মূল্যবান তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ
ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়?
ব্রেস্ট ক্যান্সার হঠাৎ করেই হয় না। মানুষের স্তনের ভেতরে থাকা কোষগুলো যখন হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে।
স্তনের ভিতরে থাকা বিভিন্ন কোষের মধ্যে যেকোনো কোষে এই সমস্যাটা সৃষ্টি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ উৎপন্ন কোষে এই সমস্যাটার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ?
ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুকি থেকে সচেতন থাকতে হলে অবশ্যই ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে জানতে হবে। নিম্নে বেস্ট ক্যান্সার হলে যে সকল লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে তা উল্লেখ করা হলোঃ
- ব্রেস্টের আকার আকৃতির হঠাৎ করেই পরিবর্তন ঘটা।
- স্তন বৃত্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বাহির হওয়া।
- বগল ফুলে যাওয়া বা চাকার মত অনেকটা দেখতে পাওয়া।
- স্তনের ভেতরের দিকে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে ওঠা।
- স্তনের বোটার আশপাশে রাশ বা ফুসকুড়ির সমস্যা দেখা দেওয়া।
- স্তনের কোন অংশে চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা লাম্পের মত দেখতে পাওয়া।
- স্তনের বোটার আকৃতিতে পরিবর্তন ঘটতে পারে।
সাধারণত ব্রেস্ট ক্যান্সার দেখা দিলে এই লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে চলে যাবেন।
ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে করণীয় | ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে আমাদের সবার আগে সর্বপ্রথম সচেতন হতে হবে। তাছাড়া সকল সময় চেষ্টা করতে হবে নিয়মিত শরীর চর্চার পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার। তাছাড়া যারা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন তাদেরকে এই সকল খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে।
ধূমপান ও মধ্যপান থেকে বিরত থাকা লাগবে। তাছাড়া কেউ যদি এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়ার সময় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা?
ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা সাধারণত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে থাকে। স্থন ক্যান্সারের ধরন, পর্যায়, টিউমারের আকার, ও রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। নিচে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা কিভাবে করা হয় তা উল্লেখ করা হলোঃ
অস্ত্রোপচার করা হতে পারে
স্তনের টিউমার অপসারণ করার জন্য অনেক ধরনের অস্ত্র পাচার করা হয়ে থাকে। এই অস্ত্র পাচারগুলো সাধারণত ব্রেস্টের টিউমারের সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। যেমনঃ
লাম্পেকটমি
এই পদ্ধতিতে সাধারণত টিউমার ও আশেপাশের কিছু টিস্যু অপসারনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে রোগীকে মুক্তি দেওয়া হয়।
সেন্টিনেল নোড বায়োপসি
স্তন ক্যান্সারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এটি খুবই কার্যকারী চিকিৎসা। এক্ষেত্রে স্থনের টিউমার থেকে কয়েকটি লিম্ফ নোড কেটে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়ে থাকে। আর যদি ক্যান্সারের রিপোর্ট নেগেটিভ হয়ে থাকে তাহলে অপারেশনের জন্য কোন অস্ত্র পাচারের প্রয়োজন হয় না।
বিকিরণ থেরাপি
এই পদ্ধতিতে সাধারণত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিকিরণ রশ্মি ক্যান্সার কোষ গুলোকে লক্ষ্য করে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়ে থাকে। তাই এই চিকিৎসায় সাধারণত একটি বড় মেশিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ব্রাকি থেরাপি
শরীরের ভেতর থেকে ক্যান্সার অপসারন করার জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে সাধারণত টিউমারের স্থানের কাছে শরীরের ভেতরের অল্প সময়ের জন্য তেজস্ক্রিয় বীজ বসানো হয়ে থাকে ও ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়ে থাকে।
কেমোথেরাপি
ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ক্যান্সার অপসারণ করার জন্য অস্ত্র পচারের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে।
ক্যান্সার কোষগুলোকে সংকুচিত করার জন্য অস্ত্রোপচারের আগে কেন থেরাপি করা যেতে পারে যার ফলে পরবর্তীতে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে সেগুলো খুব সহজেই অপসারণ করা যায়।
হরমোন থেরাপি
স্তন ক্যান্সার দূর করার জন্য সবথেকে কার্যকারী চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে হরমোন থেরাপি। হরমোন থেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সারের বৃদ্ধি ধীরবা বন্ধ হয়ে থাকে।
তাছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার দূর করার জন্য আরো অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে তবে এই সকল চিকিৎসা ডাক্তার রোগীর ব্রেস্ট ক্যান্সারের ধরন দেখে নির্ধারণ করে থাকে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার কি ভাল হয়?
ব্রেস্ট ক্যান্সারের সমস্যা যেমন ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে তেমনি ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিতেও এসেছে নতুন মোড়। আগে অনেকেই ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়তো।
কেননা তখন অনেকেই জানতো ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে অবধারিত মৃত্যু। বর্তমানে স্তন বাদ না দিয়ে তা বাচিয়ে অপারেশন করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় আরো ব্যবহার করা হচ্ছে এন্টি বডি ককটেল যা অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ভালো সুফল দিচ্ছে।
এখন ব্রেস্ট ক্যান্সারে রোগীর মৃত্যুর হার খুবই কম। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজেই ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসা খরচ?
ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসা খরচ কত বা ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে নিরাময় হতে কত টাকা খরচ হতে পারে এই নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।
বর্তমানে ভারতের কলকাতাতে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি।
ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা?
ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদেরকে অবশ্যই খাবারের দিকে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। নিম্নে ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগের খাবার তালিকা তুলে ধরা হলোঃ
উজ্জ্বল রঙ্গের ফল ও শাকসবজি খেতে হবে
ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই উজ্জ্বল রঙ্গের ফল ও শাকসবজি খেতে হবে। কেননা লাল হলুদ ও কমলা রঙ্গের সবজি ও ফলে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ ক্যারোটিনয়েড নামক পদার্থ।
যা সাধারণত স্তন ক্যান্সারের সমস্যা প্রতিহত করতে সাহায্য করে থাকে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা কমলা, তরমুজ, লেবু, লাল লঙ্কা, মিষ্টি আলু, ও গাজর বেশি পরিমাণে খাবেন।
আখরোট খেতে হবে
আখরোট স্তনের টিউমারের উপর থেকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকে। তাই যাদের স্তন ক্যান্সারের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন অল্প পরিমাণ হলেও আখরোট খাওয়ার চেষ্টা করুন তাহলে অনেক উপকারিতা পাবেন।
অলিভ অয়েল খেতে হবে
অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা স্তনে টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে স্তন ক্যান্সার ঠেকাতে সাহায্য করে থাকে। তাই যাদের স্তন ক্যান্সারের সমস্যা রয়েছে তারা অলিভ অয়েল প্রতিদিন অল্প পরিমাণে খাবেন।
টমেটো খেতে হবে
যারা ইতিমধ্যে স্তন ক্যান্সারের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে গিয়েছেন ও চিকিৎসা গ্রহণ করছেন তারা নিয়মিত টমেটো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। টমেটোতে থাকা অসংখ্য কার্যকারী উপাদান স্থূল ক্যান্সারের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে থাকে।
শেষ কথা, ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি হয়তো ইতিমধ্যে জেনে ফেলেছেন তাই অবশ্যই ব্রেস্ট ক্যান্সার যেন না হয় সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগ থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে।