আপনি যদি অকৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ডেলিভারি পেইন উঠানোর ব্যাপারে ভাবছেন, হবে আজকের এই নিবন্ধে আপনার জন্য থাকছে ৫ কার্যকরী পরামর্শ। নিয়মিত পালনে আপনি আপনার লেবার পেইন উঠানোর চিন্তা থেকে পেতে পারেন মুক্তি।গর্ভকালীন সময় প্রতিটি মায়ের জীবনে একটি গুরত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে একজন মা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তায় থাকে। এই সময়ের বিভিন্ন চিন্তার মধ্যে একটি হচ্ছে সময়মতো ডেলিভারি পেইন না উঠা।
ডেলিভারি পেইন বা লেবার পেইন হচ্ছে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে উঠা এক ধরনের যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা। তবে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বে ডেলিভারি পেইন উঠা মানে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় নিকটে বলে ধরে নেওয়া হয়।
এটি একটি সংকেত হিসেবে ধরা হয়। গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকেই এই ডেলিভারি পেইন উৎপন্ন হয়। অনেকের ক্ষেত্রেই এই ডেলিভারি পেইন সময়মতো উৎপন্ন হলেও কিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে সময়মতো ডেলিভারি পেইন উৎপন্ন হয় না।
এতে দেখা দেয় দুশ্চিন্তার। তবে কিছু পরামর্শ মেনে সমাধান করা যেতে পারে এটির।নিম্নে ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায় ও ডেলিভারি পেইন না ওঠার কারণ নিয়ে কিছু মূল্যবান তথ্য দেওয়া হলোঃ
ডেলিভারি পেইন কেমন হয়?
ডেলিভারি পেইন কিংবা লেবার পেইন হচ্ছে সন্তান প্রসবের সময় নিকটে আসার একটি লক্ষণ। তবে এই সময়ে পেটে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিবে এই ডেলিভারি পেইন শুরু হলে।
যদিও এটি একজন মায়ের জন্য কিছুটা বেদনাদায়ক, তবে এটি একজন মায়ের সন্তান চিন্তা দূর করে থাকে। নিচে এটির কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো।
ডেলিভারি পেইন এর লক্ষণ?
সন্তান প্রসবের সময় নিকটে আসলে কিংবা প্রসবের সময় পেটে যে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয় সেটিকেই লেবার পেইন বা ডেলিভারি পেইন বলা হয়ে থাকে।
সাধারণত প্রসব এর সময় যতটা এগিয়ে আসে ততটাই বাচ্চা পেটের নিচের দিকে নামতে শুরু করে। ফলে একসময় বাচ্চা চলে আসে যৌনিপথের কাছাকাছি।
এই সময় পেটে ব্যথার উৎপত্তি হয়ে থাকে, যেটি মূলত লেবার পেইন কিংবা ডেলিভারি পেইন বলে ধরা হয়। তবে পেটে ব্যথা মানেই ডেলিভারি পেইন নয়। এর কিছু সাধারণ লক্ষণ হলোঃ
- পেটে এবং পিঠে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হওয়া।
- স্বাভাবিকের তুলনায় পেটে বাচ্চার কম নড়াচড়া।
- যৌনিপথে হলুদ বা বাদামি রঙের এবং রক্তের মিশ্রণ।
- মলত্যাগের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
- পায়ের মধ্যে পানিজমাট দেখা দিবে।
- এই সাধারণ লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডেলিভারি পেইন উঠেছে বলে ধরে নেওয়া হবে।
ডেলিভারি পেইন উঠানোর উপায়?
ডেলিভারি পেইন কিংবা লেবার প্রাকৃতিকভাবে অনেকের মধ্যে দেখা দেয়। তবে প্রত্যেকের স্বাস্থের পরিস্থিতি এক নয়। আর তাই একেক জন মায়ের স্বাস্থ্যগত অবস্থা ভিন্ন হওয়ার কারণে লেবার পেইন বা ডেলিভারি পেইন উঠার ক্ষেত্রেও ভিন্ন সময় লক্ষ্য করা যায়।
ইতিমধ্যেই জেনেছেন সাধারণভাবে গর্ভপাতের ৩৯ মাস চলাকালীন সময়ে ডেলিভারি পেইন উঠা শুরু হয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
তবে এই সময়কাল অতিবাহিত হওয়াকালীন যদি ডেলিভারি পেইন না উঠে সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম পালন করা যেতে পারে। নিচে লেবার পেইন উঠানোর কিছু কার্যকরী পরামর্শ প্রদান করা হলো।
উল্লেখকৃত পরামর্শগুলো মেনে চলা হলে লেবার পেইন উঠানো যাবে অকৃত্তিম উপায়ে।
১. খাবারের রুটিন পরিবর্তন
আমাদের দৈনন্দিন খাবারের রুটিনের উপর আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক কিছুই নির্ভর করে থাকে। আপনার দৈনন্দিন খাবারের রুটিন যেমন আপনার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতিও তেমনি হবে।
খাবারের মাঝে কিছুটা পরিবর্তন আনা হলে এটি লেবার পেইন উঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে। তাহলে আপনার খাবারের রুটিন কেমন হওয়া উচিত? তথাকথিত কিছু খাবার ব্যথা শুরু ক্ষেত্রে কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।
যেমনঃ খাবারের মাঝে মসলাজাতীয় খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। বহুকাল থেকেই প্রসবকালীন সময়ে ব্যথা উঠানোর ক্ষেত্রে এটি মেনে চলা হয়ে আসছে। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
তবে এটিকে রুটিনের মধ্যে যুক্ত করে ফলাফলের অপেক্ষা করা যেতে পারে। এছাড়াও লাল রাস্পবেরীর চা, দারুচিনি পাতার চা, রোজমেরী চা খাওয়া গেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
দলের মধ্যে আনারস খাওয়া প্রসবকালীন ব্যথা শুরুর ক্ষেত্রে কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। আর তাই খাবারের রুটিনে সল্প পরিমাণে আনারস খাওয়া যেতে পারে। তবে এটিকে পরিমাণের অধিক খাওয়া উচিত হবে না।
নিয়ম করে আনারস খেতে পারলে প্রসবকালীন ব্যথা শুরুর ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে। খাবারের রুটিনে এই সাধারণ কিছু আইটেম যুক্ত করতে পারলে এটি ডেলিভারি পেইন উঠানোর ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
সকলের ক্ষেত্রে লেবার পেইন উঠানোর ক্ষেত্রে এটি কার্যকরী হবে সেটি ভাবা অনুচিত হবে। তবে আপনি যেহেতু লেবার পেইন উঠানোর জন্য কাজ করছেন সেক্ষেত্রে এটি একবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
২. প্রয়োজনীয় ব্যায়াম
আমাদের সুস্বাস্থ্যের পথিকৃৎ বলা হয় ব্যায়াম কে। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু সময় ব্যায়াম করলে এটি আপনার স্বাস্থ্যকে অন্য সকলের চেয়ে সুস্থ এবং সবল রাখবে।
গর্ভকালীন সময়ে যদি আপনি লেবার পেইন উঠানোর জন্য প্রাকৃতিকভাবে চেষ্টা করতে চান, হবে প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু সময় ব্যায়াম করুন। এটি অনেকটাই কার্যকরী।
আপনি যদি ব্যায়াম করতে নাই চান, তবে নিয়মিত কিছু সময় হাঁটুন। এটি আপনার জন্য অনেকটাই উপকারী হবে। এটি লেবার পেইন উঠানোর কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি আপনাকে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখবে।
আর তাই নিয়মিত অন্তত ২০ মিনিট হাঁটুন। এছাড়াও হাঁটার পাশাপাশি স্কোয়াট পেলভিক টিল্ট, পেলভিক রক, বাটারফ্লাই ব্যায়াম করা যেতে পারে কিছু সময়।
৩. খেজুর
খেজুর স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। নিয়মিত কিছুটা খেজুর খাওয়ায় অভ্যাস করুন। এটি আপনার লেবার পেইন সময়মতো উঠানোর ক্ষেত্রে কাজে দেবে। এটিকে নিয়মিত খাবারের রুটিনে রাখার চেষ্টা করুন।
৪. স্বাস্থ্যকর সহবাস
স্বাস্থ্যকর সহবাস এই সময়ে বেশ কাজে দিতে পারে। এর ফলে গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রকার চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও দেহের অক্সিটোসিন নিঃসরণ করতে সাহায্য করে এটি। ফলে সঠিক সময়মতো ডেলিভারি পেইন উঠার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন আপনি।
৫. ক্যাস্টার অয়েল
ডেলিভারি পেইন বা লেবার পেইন উঠানোর ক্ষেত্রে ক্যাস্টার অয়েল কার্যকরী। নিয়ম করে এটিকে ব্যাবহার করতে জানলে প্রসবকালীন সময়ে ব্যথা উঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হতে পারে।
তবে অবশ্যই অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এই পাঁচটি প্রাকৃতিক উপায় আপনি অনুসরণ করতে পারেন আপনার ডেলিভারি পেইন উঠানোর জন্য।
তবে অবশ্যই প্রতিদিন আপনার রুটিনে এসব পরামর্শ মেনে চলতে হবে। আর তাহলেই সঠিক চেষ্টায় আপনি ডেলিভারি পেইন উঠাতে সক্ষম হবেন।
ডেলিভারি পেইন না উঠার কারণ?
ডেলিভারি পেইন বা লেবার পেইন সঠিক সময়ে না উঠা কিছুটা চিন্তার কারণ। আর তাই সঠিক সময়ে ডেলিভারি না উঠার কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
তবে ডেলিভারি পেইন না উঠার কোনো নির্দিষ্ট কারণ থাকে না। একেক জন মায়ের স্বাস্থের পরিস্থিতি একেক রকমের হওয়াতে এটির কারণ স্বাস্থ্যভেদে ভিন্ন হয়।
তবে সময়মতো ডেলিভারি পেইন যা উঠলে নিকটস্থ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার স্বাস্থের পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আপনাকে করণীয় সম্পর্কে অবগত করা হবে।
ডেলিভারি পেইন উঠানোর ইনজেকশন ব্যবহার করা উচিত?
ডেলিভারি পেইন উঠানোর ইনজেকশন কিংবা অকৃত্তিম ডেলিভারি পেইন উঠানো স্বাস্থের জন্য ভালো কিনা সেটি সম্পর্কে অনেকের মনে দ্বিধা রয়েছে। প্রসব ব্যথা শুরুর জন্য ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় অনেকসময়।
তবে এটি মা এবং গর্ভে থাকা শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ইনজেকশন ব্যাবহার না করার। এতে আপনি ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারবেন।