ভিটামিন ই আমাদের শরীরের কোষগুলোকে সতেজ রাখতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরি ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে। আমাদের শরীরের ভিটামিন-ই এর সকল অভাব পূরণ করে থাকে। আর তাই আজকের পোস্টে আমরা ই ক্যাপ কি?ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা কি? ই ক্যাপ কেন খায় ও ই ক্যাপ খাওয়ার নিয়ম সব কিছুই বিস্তারিত আলোচনা করবো। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিক্যালটি পড়ুন।
ই ক্যাপ কি?
ই ক্যাপ হচ্ছে ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট। যা আমাদের শরীরের ভিটামিন ই এর অভাব পূরণে খুবই সহায়তা করে। সাধারণত যাদের শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি দেখা দেয় বা খাদ্য থেকে ভিটামিন ই গ্রহণ করতে পারছেন না।
তাদের জন্য ডাক্তার ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ই ক্যাপ ক্যাপসুল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়?
ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে আমাদের শরীরের নানা রকম উপকার হয়ে থাকে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি কি উপকার হয় তা নিচে তালিকা করে উল্লেখ করা হলঃ
- ইহা শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে থাকে।
- মাথার তালুতে স্বাভাবিক রক্ত সরবরাহ বজায় রাখে।
- ইহা খেলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
- শরীর থেকে বয়সের ছাপ দূর করে।
- ইহা হাড়ের জন্য উপকারী।
- বন্ধ্যাত্ব সমস্যা দূর করে থাকে।
- ইহা নিয়মিত খেলে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- দেহের ক্ষয় রোধ হয়।
- ব্রণ সমস্যা দূর করে থাকে।
- রুক্ষ এবং শুষ্ক ত্বক মসৃণ করে।
- চুল পড়া জনিত সমস্যা দূর করে।
- চুলের গোড়া মজবুত করে থাকে।
- চুল লম্বা করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কাজ করে।
- এটি খেলে চর্মরোগ হয় না।
- এই ক্যাপসুল নিয়মিত খেলে হাঁপানি রোগ দূর হয়।
- কিডনি রোগের সম্ভাবনা কম থাকে।
- ইহা হৃদরোগের আশঙ্কা কমিয়ে থাকে।
- ইহা খেলে খাদ্যজনিত অপুষ্টি প্রতিরোধ হয়।
- ভিটামিন ই খেলে ফ্যাটি লিভারের আশঙ্কা কমে।
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে ইহা মেয়েদের কিছু শারীরিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
এতো উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও ভিটামিন ই ক্যাপসুল অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করলে অনেক ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবেন। সেগুলো জেনে অবশ্যই ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাবেন।
তবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবনকে আমরা কখনো সমর্থন করি না।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি মোটা হয়?
অনেকের মনের মধ্যে হয়তো এই ধরনের প্রশ্ন জাগে যে, ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি মানুষ আসলেই মোটা হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বলব না। ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে মানুষ মোটা হয় না।
যদি কেউ আপনাকে বলে যে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে মোটা হবেন। তাহলে আপনি ধরে নেবেন যে তিনি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন কথা বলছে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হয় এটা সত্য কথা।
তবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে মোটা হয় এই কথাটি একদম সঠিক নয়। আপনি স্বাভাবিক মাত্রায় খেলে অবশ্যই এর উপকার পাবেন। যেগুলো সম্পর্কে আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ই ক্যাপ ক্যাপসুল কয় ধরনের হয়?
সাধারণত ই ক্যাপ হল ড্রাগ কোম্পানির একটি ক্যাপসুল। অন্যান্য কোম্পানিরও এ জাতীয় ক্যাপসুল রয়েছে। তবে সব থেকে জনপ্রিয় হচ্ছে ই ক্যাপ । ই ক্যাপ ক্যাপসুল কয়েক ধরনের আছে তা হলঃ
- ই ক্যাপ ২০০
- ই ক্যাপ ৪০০ ও
- ই ক্যাপ ৬০০
তবে এর মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় ই ক্যাপ হল ই ক্যাপ 400।
ই ক্যাপ কিসের ঔষধ?
ই ক্যাপ হচ্ছো ভিটামিন ই জাতীয় একটি ক্যাপসুল। যা আমাদের শরীরের ভিটামিন ই এর ঘাটতি পূরণ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। ইহা সাধারণত আমাদের শরীরের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।
ই ক্যাপ কেন খায়?
ইহা মুলত ভিটামিন ই ক্যাপসুল। এটি আমাদের শরীরের ভিটামিন ই-র সকল অভাব পুরণ করতে সাহায্য করে। ইহা রক্ত জমাট বাঁধা ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
পেশী কিংবা হারের দুর্বলতা দুর করে ও ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়, চুলের গোড়া শক্ত করে এবং পশমের রক্ত চলাচল ঠিক রেখে পুষ্টি সরবরাহ করতে সহায়তা করে। পেনি**স বা লি**ঙ্গের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে লি**ঙ্গ শক্ত করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম?
ভিটামিন ই ক্যাপ খাওয়ার নিয়ম আমাদের জানতে হবে। ই ক্যাপ তিন পাওয়ারের রয়েছে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ হচ্ছেঃ
ই ক্যাপ 200mg
দিনে ২ বার খাবেন সকাল এবং রাতে যে কোন সময়।
ই ক্যাপ 400 mg
দিনে ১ বার সকাল বা রাতে রাতে যে কোন সময় খেতে পারেন।
ই ক্যাপ 600mg
ইহা দিনে ১ বার যেকোন সময়।
তবে অনেকেই বলে থাকে ই ক্যাপ ক্যাপসুল সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা খাওয়ার পর খেলে নাকি উপকার বেশি হয়। তবে উচিৎ হবে ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
ই ক্যাপ কখন খেতে হয়?
ভিটামিন ই ক্যাপ ক্যাপসুল এর পাওয়ার অনুযায়ী খেতে হবে। যদি ই ক্যাপ ২০০ হয়, তাহলে সকালে এবং রাতে খাবেন যে কোন সময়ে। আর যদি ভিটামিন ই ক্যাপ ৪০০ ও ৬০০ হয়। তাহলে সকালে বা রাতে ১ বার খাবেন। কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল কোনটা ভাল?
ভিটামিন-ই ক্যাপসুল মোটামুটি সব কোম্পানি রয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন নামে ভিটামিন ই ক্যাপসুল বাজারজাত করেছে। সব গুলোই মোটামুটি ভাল।
তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-ক্যাপসুল হচ্ছে ই-ক্যাপ ৪০০, তাছাড়াও আরও যেমনঃ ই-জেল, ই-ভিট, ই ট্যাব, ই- গোল্ড ইত্যাদি রয়েছে।
ই ক্যাপ এর দাম?
ই ক্যাপ 200 mg এর প্রতি পিস ৪.৫০ টাকা করে ও ১ প্যাকেটে ১০টি ক্যাপসুল থাকবে এর মুল্য হবে ৪০ টাকা। ই ক্যাপ 400mg এর প্রতি পিস হল ৬.৫০ টাকা করে। এবং এর এক প্যাকেটে ১০টি ক্যাপসুল থাকে এর মুল্য হল ৬০ টাকা।
ই ক্যাপ 600mg এর প্রতি পিসের দাম ৮ টাকা করে। এর ১ প্যাকেটে ১০টি ক্যাপসুল থাকে এর মুল্য হল ৮০ টাকা।
ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা?
ই ক্যাপ হল ভিটামিন -ই যুক্ত একটি ক্যাপসুল। এর উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আমরা সাধারণত জানি, প্রত্যেক ওষুধেরই কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তবে আপনি যদি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইহা ব্যবহার করেন।
তাহলে সাধারণ কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তাই চলুন একনজরে জেনে নেই ই ক্যাপ এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
ই ক্যাপ এর উপকারিতা?
ভিটামিন ই এর অভাব পূরণে
আমাদের শরীরে অনেক সময় ভিটামিন ই এর ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ দেখা দেয়। কেননা ভিটামিন ই এর অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
ই ক্যাপ ক্যাপসুল শরীরে ভিটামিন-ই এর অভাবজনিত সব ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন ই এর অভাব পূরণ করতে ই-ক্যাপ ক্যাপসুল সেবন করতে পারেন এতে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
ত্বকের জ্জ্বলতা বৃদ্ধি
ই ক্যাপে এক ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা আমাদের শরিরের ত্বক ও মুখের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রোদে অনেক সময় আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়। আর তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য ই-ক্যাপ খেতে পারেন।
আবার কখনো কখনো প্রয়োজন অনুযায়ী বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। ই ক্যাপ চুলে ব্যবহারের নিয়ম হচ্ছ ইহা প্রতিদিন খাওয়ার পাশাপাশি তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।
চুলে ভালভাবে ব্যবহার করার ২ থেকে ৩ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করবেন। ১ মাস ব্যবহার করার পর এর আশ্চর্যজনক ফল দেখতে পারবেন।
যৌন সমস্যা সমাধানে
যৌন যেকোন সমস্যা সমাধানে ই ক্যাপ দারুণ কাজ করে। শারীরিক অক্ষমতা কিংবা দূর্বলতা দূর করে ও সহবাসের সময় বৃদ্ধি করে।
বয়সের চাপ দূর করতে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের চেহারায় বয়সের চাপ পরে যায়। ত্বক কুঁচকে যায়, ত্বকে বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা দেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বলিরেখাও দেখা দেয়। তাই বয়সের ছাপ দূর করতে ই ক্যাপ ক্যাপসুল এন্টি এজিং ক্রিম হিসেবে চমৎকার কাজ করে।
ত্বকের চামড়া ঝুঁলে যাওয়া ও কুঁচকে যাওয়া ত্বকে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ই-ক্যাপ তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মালিশ করা হয়। তাহলে উজ্জ্বলতা বাড়ার পাশাপাশি সব ধরনের বলিরেখা বয়সের ছাপ দূর হয়।
ত্বকের হোয়াইটেনিং ক্রিম হিসেবে
যারা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের হোয়াইটেনিং ক্রিম কিংবা নাইট ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য ভিটামিন-ই ক্যাপ মশ্চারাইজিং হিসেবে ত্বকের জন্য খুবই জনপ্রিয়।
আপনার নিয়মিত ব্যবহার করা ক্রীম কিংবা লোশনের সাথে কয়েক ফোঁটা ই-ক্যাপ ক্যাপসুলের তরল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
ক্ষত সারাতে
শরীরের যেকোন ধরনের ক্ষত নিরাময় করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভাল কাজ করে। কোথাও কেটে গেলে কিংবা ক্ষত হলে নিয়মিত ই-ক্যাপ ক্যাপসুল সেবন করতে পারেন। এতে যেকোন ক্ষতস্থান খুব দ্রুত শুকাবে ও দ্রুত সেরে ওঠবে।
চুল পড়া বন্ধ করতে ই ক্যাপ
চুলের যত্নে ই-ক্যাপ সব থেকে বেশি পরিচিত একটি নাম। ই-ক্যাপ ক্যাপসুলে থাকা ভিটামিন ই চুল পড়া বন্ধ করতে ও নতুন নতুন চুল গজাতে সব থেকে ভাল কাজ করে। যারা নিয়মিত চুল পড়া নিয়ে খুব টেনশনে আছেন তাদের ক্ষেত্রে ইহা চমৎকার কাজ করবে।
নখের ভঙ্গুরতা রুখতে
বাসা বাড়িতে কিংবা বাহিরে যার ফলে আমাদের অনেকের নখের ভঙ্গুরতা দেখা দেয়। তাদের ক্ষেত্রে ১ মাত্র কার্যকরি ঔষধ হচ্ছে ভিটামিন-ই ক্যাপ ক্যাপসুল।
যারা এই সমস্যায় ভোগতেছেন তারা নিয়মিত ই ক্যাপ ক্যাপসুলের তেল ভেঙে যাওয়া নখে মালিশ করুন। দেখবেন অল্প দিনেই এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
রোদের ক্রিম
বিভিন্ন কাজের জন্য আমাদেরকে অনেক সময় বাইরে থাকতে হয়। আবার কখনো রোদে কাজ করতে হয়। যার ফলে রোদে ত্বক পুড়ে কাল হয়ে যায়। তাদের জন্য সেরা মশ্চারাইজিং হিসেবে ভিটামিন-ই খুব ভাল কাজ করে।
কুলিং ক্রিমের সাথে কয়েক ফোঁটা ভিটামিন-ই যুক্ত ই-ক্যাপ ক্যাপসুল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে খুব সহজেই রোদে পুড়ে কাল হওয়া কিংবা দাগ পরে যাওয়া থেকে বেঁচে থাকা যায়।
ই ক্যাপ ক্যাপসুল এর অপকারিতা?
ভিটামিন ই ক্যাপ ক্যাপসুলের অপকারিতা বলতে গেলে তেমন কিছু নেই। সাধারণত ই ক্যাপ ক্যাপসুলের তেমন প্বার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে অত্যাধিক পরিমাণে ই ক্যাপ সেবন করলে আপনার বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অধিক পরিমাণে ই-ক্যাপ খেলে আমাশয়সহ এলার্জি জনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর তাই অতিমাত্রা ইহা খাবেন না। খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
সাবধনতা
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ সেবন করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।