চোখ উঠার ড্রপ | চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা

যখন চোখ ওঠার মৌসুম পড়ে থাকে তখন অনেকেই এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই রোগে একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে। চোখ ওঠা রোগটি হচ্ছে এক ধরনের সংক্রমণ।চোখ উঠার ড্রপচোখ ওঠা রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে অনেকেই ভয় পেয়ে থাকেন। এই রোগটি একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে খুব সহজেই ছড়িয়ে যেতে পারে।

আজকের পোস্টে চোখ ওঠা কেন হয়, চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে, চোখ উঠলে কতদিন থাকে ও চোখ ওঠার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

চোখ ওঠা কেন হয়?

চোখ ওঠাকে সাধারণত অনেকেই কনজাংটিভাইটিস বলে থাকেন। সহজভাবে বলতে গেলে কনজাংটিভা নামক চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তখন চোখ উঠে থাকে।

চোখ ওঠার প্রধান কারণ হচ্ছে ভাইরাস। অনেকের ধারণা যাদের চোখ উঠে থাকে তারা কারো দিকে তাকালে অন্যদেরও চোখ উঠে থাকে। তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

চোখ ওঠার লক্ষণ?

কারো চোখ উঠলে কিছু লক্ষণের মাধ্যমে সেটা খুব সহজেই বোঝা যায়। নিচে চোখ ওঠার কয়েকটি সাধারণ উপসর্গ তুলে ধরা হলোঃ

  • চোখে অস্বস্তিবোধ হয়ে থাকে ও খচখচ করে।
  • চোখ লাল হয়ে যায় প্রথম দিকে এক চোখ লাল হয় তারপরে দুই দিকের চোখই লাল হয়।
  • চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে।
  • চোখের পাতা ফুলে যায়।
  • চোখে ব্যাথা হয় ও আলো সহ্য হয় না।
  • চোখ হালকা জ্বালাপোড়া করে থাকে।
  • চোখের পাতা অনেক ফুলে যায়।
  • ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা লেগে থাকে।
  • কারো চোখের কর্নিয়া আক্রান্ত হলে তারা ঝাপসা দেখে থাকেন।
  • চোখে পিচুটি পড়ে থাকে।
  • কারো চোখ উঠলে এই লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই চোখ ওঠা সনাক্ত করা যায়।

চোখ ওঠার উপকারিতা?

চোখ ওঠার কিছু উপকারিতা রয়েছে। অনেকেই চোখ ওঠার এই সকল উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চানঃ

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

কন্জেক্তিফাইটিস হলো ক্ষতিকর পদার্থ এবং সংক্রমণ থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য দারুন একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। অর্থাৎ চোখে কোন ভাইরাস ঢোকার আগে এর মাধ্যমে চোখ প্রতিরোধ করে থাকে।

টক্সিন ফ্লাশিং আউট

যখন চোখ ওঠার সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে তখন কঞ্জেকটিফাইটিসের মাধ্যমে টিয়ার উৎপাদন বৃদ্ধি চোখ থেকে টক্সিন বিরক্তিকর পদার্থ বের করতে সাহায্য করে থাকে।

অর্থাৎ চোখ থেকে অনেক পুরাতন ময়লা ও সংক্রামক এজেন্ট বের করে থাকে। তাই এটি অবশ্যই চোখের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া চোখ উঠলে আমাদের ইমিউন সিস্টেমের বিকাশ ও প্রশিক্ষণে অবদান রেখে থাকে।

তাই চোখ ওঠার যেমন কিছু খারাপ দিক রয়েছে তেমনি চোখ ওঠার কিছু ভালো উপকারিতা ও রয়েছে।

চোখ উঠলে কি খাওয়া যাবে না?

চোখ উঠলে কি খাবার খাওয়া যাবেনা এই বিষয়ে অনেকেই জানেন না যার কারণে সমস্যায় পড়ে থাকেন। চোখ উঠলে অবশ্যই আমাদেরকে কিছু খাবার পরিহার করতে হবে।

চোখ উঠলে ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন, ও শিম জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এই সকল খাবারগুলো এই সময়ে খেলে সমস্যা সমাধান না হয়ে বাড়তে পারে।

চোখ ওঠা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা?

ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে চোখ ওঠার সমস্যাকে অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। নিচে চোখ ওঠার কয়েকটি ঘরোয়া চিকিৎসা তুলে ধরা হলঃ

পেয়ারা পাতা

পেয়ারা পাতাতে রয়েছে জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা। প্রাকৃতিক ঔষধি ক্ষমতাসম্পন্ন পেয়ারার পাতাকে শুকনো তাওয়ার মাধ্যমে নেড়ে তা একটি নরম কাপড় ব্যবহার করে জড়িয়ে ধরে থাকতে হবে চোখের উপরে। দিনে কয়েকবার এটি করা যেতে পারে। তাহলে অনেকটা আরাম পেতে পারেন।

ক্যাস্টর অয়েল

ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করে খুব সহজেই চোখের অঞ্জনি দূর করা সম্ভব। কেননা ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে প্রদাহ দূর করার এক ধরনের ক্ষমতা। প্রথম অবস্থায় আক্রান্ত চোখে গরম ভাব দিতে হবে ১০ মিনিট।

এই দুইটি উপাদান ব্যবহার করে খুব সহজে চোখ ওঠার সমস্যাকে কমিয়ে আনা যায়। তাই চোখ উঠলে প্রথম অবস্থায় আপনারা ঘরে বসেই এই উপাদান গুলি ব্যবহার করতে পারেন তাহলে দেখবেন অনেক উপকার পাচ্ছেন।

চোখ উঠলে কি করতে হয় | চোখ উঠলে করণীয়

চোখ উঠলে করণীয় কি বা চোখ উঠলে কি করতে হবে এই বিষয়ে অবশ্যই পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। কারো চোখ উঠলে কি করতে হবে নিচে কিছুটা ধারণা দেওয়া হলঃ

  • চোখ উঠলে অবশ্যই কালো চশমা ব্যবহার করতে হবে।
  • চোখ উঠলে হাত দিয়ে কখনোই চোখ চুলকানো যাবে না।
  • চোখ মোছার জন্য আলাদা আলাদা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
  • যে সকল রোগীর চোখ ওঠে তাদের অবশ্যই আলাদা থাকতে হবে না হলে অন্য কারো এই সমস্যাটা হয়ে যেতে পারে।
  • চোখ ওঠা রোগীদের কখনো ড জাতীয় ড্রপ ব্যবহার করা যাবে না। কেননা এই ধরনের ড্রপ ব্যবহার করলে চোখের
  • ক্ষতি হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
  • যদি সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে সমস্যা ঠিক না হয়।
  • তাহলে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

চোখ উঠলে অবশ্যই আমাদের এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। যদি সচেতনতা অবলম্বন করা না যায় তাহলে এর মাধ্যমে চোখের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।

চোখ ওঠার ড্রপের নাম | জীবাণুনাশক চোখের ড্রপের নাম

চোখে যখন ভাইরাস আক্রমণের ফলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঢুকে থাকে তখন অবশ্যই ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। এর জন্য আপনারা দিনে তিন থেকে চার বার চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার করতে পারেন।

কারো যদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না হয় তাহলেও সেকেন্ডারি ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই এই ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রপ ব্যবহার করতে হবে না হলে সমস্যা বাড়তে পারে।

বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ?

বাচ্চারা অনেক সময় চোখ ওঠার সমস্যার শিকার হতে পারেন। বাচ্চাদের চোখ ওঠার সমস্যা হয়ে থাকলে সর্বপ্রথম পরিষ্কার তুলা ভিজিয়ে চোখ পরিষ্কার করে দিতে হবে।

তবে কখনোই শক্ত কাপড় দিয়ে বাচ্চাদের চোখ পরিষ্কার করার চেষ্টা করা যাবে না তাহলে চোখের ক্ষতি হতে পারে। তারপরে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চাদের চোখে ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

চোখ ওঠার ঔষধ?

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ ওঠার রোগটি হয়ে থাকে। আবার অনেকের এলার্জির কারণে উচ্চকক্ষ ওঠার সমস্যা সৃষ্টি হয়। যে সময় বাতাসে আদ্রতা খুব বেশি হয়ে থাকে তখন সাধারণত এই রোগটি বেশি হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে ৭ থেকে ১০ দিন পরও যদি চোখ ওঠার ভালো না হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসক কঞ্জাভাইটিসের কারণের উপর নির্ভর করে এই রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। কারো যদি এলার্জির কারণে চোখ উঠে থাকে। তাহলে তার এন্টিহিস্টামিন বা এলার্জির ঔষধ দিলে সমস্যা ঠিক হয়ে যায়।

চোখ উঠলে কতদিন থাকে?

চোখ উঠলে সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিন ও সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ দিন থাকতে পারে। তবে অনেকের এর আগেও ভালো হয়ে যায়।তাই চোখ উঠলে ভয় না পেয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাটিকে প্রতিরোধ করতে হবে।

চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে?

চোখ উঠা একটি ছোঁয়াচে রোগ। কনজাংটিভা নামে যখন চোখের পর্দায় প্রদাহ হয়ে থাকে তখন তাকে চোখ ওঠা রোগ বলা হয়। কারো যদি চোখ উঠে থাকে তাহলে তার চোখের পানি যদি আপনার শরীরের পরে তাহলে চোখ উঠতে পারে।

শেষ কথা, আশা করি ইতিমধ্যে চোখ ওঠা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ও চোখ ওঠা রোগের ঔষধ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা এই বিষয় সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে।

তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনার মূল্যবান প্রশ্নটির খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর প্রদান করার চেষ্টা করা হবে। ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

This website mainly provides information on exercise, fitness, wellness, healthy living, etc. in the Bengali language.

Leave a Comment