পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে, যিনি এখনো পাদ দেন নি। ছোট কিংবা বড়, ধনী, গরিব, সাধারণ মানুষ ও সেলিব্রেটি সবাই এ কাজটি করে থাকেন।বর্তমানে পাদ মেরে অনেকেই গিনেসবুকে নিজের নামটি লিখিয়েছেন। আজকের পোস্টে পাদ কি, পাদ কত প্রকার ও কি কি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পাদ কাকে বলে?
মূলত পাকস্থলীতে লুকিয়ে থাকা বায়ু যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পায়ু পথ হতে নির্গত হয় তাকেই পাদ বলে। পাদ এর ইংরেজি শব্দ হল Feet। যা মানবজাতির জন্য অতি প্রাকৃতিক এক প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুনঃ পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধির খাবার
পাদ কয় প্রকার ও কি কি?
সাধারণত পাদের ধরণ এবং বায়ুত্যাগের সময়কালের উপর নির্ভর করে পাদ চার প্রকার। যেমনঃ
- ঠাস পাদ
- কুইয়া পাদ
- ফুস পাদ
- ঝোল পাদ
ঠাস পাদ কি?
মূলত যে পাদ মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করে তাকে বলে ঠাস পাদ। এই পাদগুলো সাধারণত বিভিন্ন রকমের মন মাতানো সুরের সাথে নিজেদের আগমন ঘটায়। তবে এদের বিরুদ্ধে শব্দ দূষণের নানান অভিযোগ থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষকে বিনোদিত করে।
কুইয়া পাদ কি?
এই পাদের অপর নাম হচ্ছে চুরাবাদ। এসব পাদ লম্বা সময় ধরে পায়খানা আটকে রাখার পরের পাদ। হিরোশিমাল বোমার চাইতেও ভয়ঙ্কর বলা হয় এই পাদকে। মানুষের ভিড়ে এটা ছেড়ে দিলে খুনের মামলার আসামি হয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা থাকে।
ফুস পাদ কি?
নিজেকে মুক্ত করার জন্য পায় পথের কাছাকাছি এসে আকুপাকু করে শব্দ ছাড়াই বের হয় তাকে ফুস পাদ বলে। এ ধরণের পাদের শব্দের কোন অস্তিত্ব নেই। ঘ্রাণ সুকে এদের অস্তিত্ব অনুভব করা সম্ভব। এ ধরণের পাদ মূলত পরিবেশ দূষণ করে থাকে।
ঝোল পাদ কি?
বেশির ভাগ ডায়রিয়ার সময় এই পাদ হয়ে থাকে। চলাফেরার মুহূর্তে এই পাদ ছেড়ে দেওয়া খানিকটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ যেকোন সময়ে হলুদ ঝোল প্যান্টে মাখামাখি হয়ে যেতে পারে। এই পাদের শব্দ সাধারণত ফের ফের অথবা ভের ভের হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ Body mass index বলতে কি বুঝায় | bmi calculator
পাদের উপকারী?
পাদ নিয়ে অনেকেই নাক সিটকায়। আবার অনেকেই আছে হাসাহাসি করে। এছাড়াও অনেকেই আছেন যারা পাদ মারা কে অভদ্রতা বলে মনে করেন। কিন্তু এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পাদ মারা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত উপকারী। যেমনঃ
- পেট ফাঁপা বন্ধ করে
- পেটের এলার্জি নির্ণায়ক
- কি খাওয়া উচিত তা পাদের গন্ধ বলে দেয়
- পাদের গন্ধ রোগ দূর করে
- পরিপাকতন্ত্রের নড়াচড়া ঠিক রাখে
- হার্ট ভাল রাখে
- কোলনের স্বাস্থ্য ভাল রাখে
- ভাল হজম ক্ষমতা ও সুস্থ পেটের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে
- কিডনি ভাল রাখে
- ক্ষুধা বৃদ্ধি করে ইত্যাদি।
সুতরাং বলাই যায়, মানব জীবনে পাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই পাদ দিতে না পারলে মানুষের পেটে মিথেন গ্যাস জমে যেত তখন মানুষ মহাশূন্যে উড়ে যেত। সুতরাং পাদ নিয়ে লজ্জার কিছু নেই।
পাদের গন্ধ হয় কেন?
পাদ হচ্ছে একটি গ্যাসীয় পদার্থ। পাদের প্রধান উপাদান হচ্ছে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, মিথেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি। এই সবগুলো গ্যাস একত্রিত হয়ে পাদের ৯৯% উপাদান সৃষ্টি হয়। বাকি ১পার্সেন্ট হচ্ছে সালফার জাতীয় গ্যাস।
সালফার জাতীয় গ্যাসের মধ্যে অন্যতম হল হাইড্রোজেন সালফেট, মিথেন, মিথাইলওল সালফাইড ও ডাই মিথাইল সালফাইড। এদের মধ্যে হাইড্রোজেন সালফাইড হচ্ছে পাদের গন্ধের প্রধান কারণ। তবে যেসব খাবারে সালফারযুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড।
আরও পড়ুনঃ ব্যায়াম কাকে বলে | ব্যায়াম কত প্রকার ও কি কি
যেমনঃ মাছ মাংস কিংবা প্রাণিজ আমিষ থাকে সেগুলো খেলে পরিপাক হয়ে প্রচুর সালফার গ্যাস তৈরি হয়।এই গ্যাস পাদের সাথে একত্রিত হয়ে পাদের গন্ধ সৃষ্টি করে। আবার অনেক শাকসবজি রয়েছে যেগুলোতে সালফার থাকে উচ্চমাত্রায়।
এগুলোও সালফার জাতীয় গ্যাস সৃষ্টি করে থাকে। আবার অনেক সময় হয় কি খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়ার কারণে সেগুলো ব্যাকটেরিয়া সাহায্যে ফার্মেন্ট হয় এবং প্রচুর মিথেন গ্যাস তৈরি করে এটাও পাদের গন্ধ সৃষ্টি করে।
দীর্ঘ সময় মলত্যাগ না করলে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়, যা ফলে গন্ধযুক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয় যেটা পাদের গন্ধের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এছাড়াও যে সকল কারণে পাদের গন্ধ হয় সেগুলো হচ্ছে যেমনঃ
- সালফার যুক্ত খাবার খাওয়া
- কোলন ক্যান্সার
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- পেটের ক্ষত
- কোন এন্টিবায়োটিক সেবন
- পেটের অসুখ
- খাদ্যের প্রতি এলার্জি
- মাংস বেশি খাওয়া
- বদহজম
- উচ্চ সাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া।
পাদের গন্ধ দূর করার উপায়?
পাদের গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে যেমনঃ
- ব্যায়াম করুন
- রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করুন
- বড় ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন
- বদহজম ও এসিডিটির চিকিৎসা করুন
- পরিমিত পানি পান করুন
- অল্পকার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার কম খান
- বিয়ার বা মদ্যপান করা যাবে না
- পেঁয়াজ ও রসুন কম ব্যবহার করুন
- ডিম কম খাওয়াই ভালো
- চা কফি কম পান করুন
- মাংস কম খেতে হবে
- পেটে কম বাতাস ঢুকতে দিন
- রাতে শাকসবজি কম খাবেন
- ফাস্টফুড পরিহার করুন
- দুধ খাবেন না
- বাদাম কম খেতে হবে
- গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার কম খাবেন।
যাইহোক, সবকিছু শেষে একটা কথাই বলা যায়, পাদ হল বিনোদনের একটি অন্যতম মাধ্যম। তাই নিজে পাদুন ও অন্য কে পাদতে উৎসাহিত করুন। ধন্যবাদ।