সাপে কামড়ালে বোঝার উপায় | সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা

সাপ দেখে ভয় পান না এমন লোক খুব কমই আছেন। অনেকের অজ্ঞাতবশত কারণে বা নিজেদের ভুলের কারণে সাপে কাটতে পারে। সাপে কামড়ালে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আতঙ্কিত হওয়ারই কথা কেননা বিষধর সাপে যদি কাটে প্রাণ সংশয় ঘটতে পারে।সাপে কামড়ালে বোঝার উপায়তাই এক্ষেত্রে আমাদের খুবই সচেতনতার সাথে কিছু কাজ করতে হবে। সাপে কামড়ালে কি কি করবেন ও কি কি করবেন না বা সাপে কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা নিম্নে দেওয়া হয়েছেঃ

সাপে কামড়ালে বোঝার উপায়?

সাপে কামড়ালে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। যার মাধ্যমে খুব সহজেই আমরা বুঝতে পারি কারো সাপে কেটেছে কিনা।বিষধর সাপে কাটলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে এবং যে সাপের বিষ নেই তাদের ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়।

বিষধর সাপে কাটলে লক্ষণ?

  • দু চোখের পাতা খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে আসবে।
  • রোগী সবকিছুই ঝাপসা দেখতে থাকবে।
  • রোগীর ঢোক গিলতে অসুবিধা হবে।
  • গলা বন্ধ হয়ে উঠবে ও শরীর ফুলে উঠবে।
  • কামরের স্থানে প্রচুর জ্বালা যন্ত্রণা অনুভূত হবে।

অন্যদিকে যে সাপের বিষ নেই বা নির্বিশ সাপে কামড়ালে আক্রান্ত স্থানে সামান্য ব্যথা, ফুলে যাবে ও অল্প ক্ষত সৃষ্টি হবে। তবে বিষধর বা নির্বিশ যে সাপেই কাটুক না কেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা?

সাপে কামড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদেরকে কিছু কাজ করতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে এই কাজগুলো করলে রোগীর ক্ষেত্রে খুবই ভালো হয়। অর্থাৎ সাপে কামড়ানোর পর প্রাথমিকভাবে আপনাকে প্রাণ রক্ষার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল অভিমুখে যাত্রা করতে হবে।

১. কোন ব্যক্তিকে যদি সাপে কামড়ায় তাহলে সেই ব্যক্তিকে সর্বপ্রথম কাজ হল সাহস প্রদান করা। সাপে কামড়ানো ব্যক্তি যদি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তাহলে অনেক সমস্যা। কেননা নির্বিষ সাপের কামড়ে রোগীর কখনো মৃত্যু হয় না। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আতঙ্কে রোগীর প্রাণঘাতী হতে পারে।

২. আক্রান্ত স্থান ব্যান্ডেজের সাহায্যে একটু চাপ দিয়ে পেঁচিয়ে নিতে হবে। হাতের গোড়ায় যদি ব্যান্ডেজ না পান তাহলে গামছা ওড়না বা অন্য কিছু দিয়ে বেঁধে ফেলতে পারেন। এর মাধ্যমে সাপের বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে না।

৩. আক্রান্ত স্থান অবশ্যই স্থির রাখতে হবে। সাপে হাতে যদি কামড়িয়ে থাকে তাহলে হাত নড়ানো যাবে না এবং পায়ে কামড়ালে হাঁটাচলা করা যাবে না অর্থাৎ স্থির হয়ে থাকতে হবে।

৪. আক্রান্ত স্থান অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতো ভাবে মুছে নিতে হবে।

৫. রোগীকে আধা শোয়া অবস্থায় থাকতে বলতে হবে।

৬. রোগী যদি শ্বাস না নিয়ে থাকে তাহলে তার মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. সাপে কামড়ানোর স্থান অবশ্যই আলতো ভাবে ধুয়ে দিতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতো ভাবে মুছতে হবে।

৮. রোগী যদি কোন অলংকার বা অন্য কোন জিনিস পড়ে থাকেন তাহলে সেগুলো অবশ্যই খুলে ফেলতে হবে।

৯. সাপটি মেরে ফেললে যদি সম্ভব হয় তাহলে সেটি হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে কেননা অনেক সাপ মরার ভান করে থাকে।

১০. তারপরে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কোন ওঝা বা অন্য কারোর কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা এক্ষেত্রে করবেন না।

সাপে কামড়ালে কি করা উচিত?

কাউকে সাপে কাটলে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপরে দেওয়া প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে হবে। তারপরে রোগীকে খুব তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

কেননা বিষধর সাপে যদি কাটে রোগীকে যদি অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে না যাওয়া যায় তাহলে প্রাণ সংশয় হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে।

সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়?

কারো সাপে কামড়ালে করণীয় কি এই বিষয়ে যদি জানা হয়ে যায় তবে এবার অবশ্যই সাপে কামড়ালে কি করা যাবে না এই বিষয়ে সম্পর্কে জানতে হবে।

১. অনেকে আছেন সাপে কামড়ালে শক্ত বাঁধন বা গিট দিয়ে ফেলেন। এমনটি কখনো করা যাবে না। অনেকে বলে থাকেন হাত বা পায়ে কামড় দিলে কামড়ানো জায়গা থেকে উপরের দিকে দড়ির জাতীয় কিছু দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় যাতে বিষ সারা শরীরে না ছড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি এখনো পাওয়া যায়নি। দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাধলে রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে যার ফলে টিস্যুর পচন সৃষ্টি হতে পারে।

২. অনেকে সাপে কামড়ানো স্থান ছুরি বা ব্লেড দিয়ে কেটে বিষ বাহির করার চেষ্টা করে থাকেন। এটা কখনোই অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তি ছাড়া করানো উচিত নয়। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

৩. অনেকে রয়েছেন যারা সাপে কামড়ানো স্থানে মুখ লাগিয়ে চুষে বিষ বাহির করে ফেলেন। এমনটি কখনো করা যাবে না এর ফলে যে বিষ বাহির করবে তার প্রাণ সংশয় হতে পারে।

কেননা সাপের বিষ রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যা কখনোই মুখ দিয়ে বাহির করা সম্ভব নয়। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন আক্রান্ত স্থানে কেউ মুখ না দেয়।

শেষ কথা, সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা কেমন হওয়া উচিত বা সাপে কামড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে কি কি কাজ করতে হবে আশা করি ইতিমধ্যে জানা হয়ে গিয়েছে।

তবে কখনোই নিজে থেকে বাড়তি কিছু করা যাবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে তাহলে কোন সমস্যা হবে না।

Sharing Is Caring:

This website mainly provides information on exercise, fitness, wellness, healthy living, etc. in the Bengali language.

Leave a Comment