বিড়াল হল আমাদের পছন্দের একটি গৃহপালিত প্রাণী। আর এই সুন্দর প্রাণীটিকে ভালোবেসে আদর করতে গেলে মাঝে মাঝেই বিড়ালের আচর খেতে হয়।আবার কখনো কখনো বিড়াল ক্ষিপ্ত হয়ে কামড় বসিয়ে দেয়। আর এমনটা হলে বিড়ালের মধ্যে থাকা জীবাণু আমাদের দেহে সংক্রমিত হয়ে জ্বলাতঙ্কসহ অন্যান্য রোগ ছড়াতে পারে।
আজকের এই পোস্টে আলোচনা করব বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়, বিড়ালের আঁচল ক্ষতিকর কি না ও বিড়ালের ভ্যাকসিনের দাম কত? ইত্যাদি।
বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ?
অন্যান্য পোষা প্রাণীর মতো বিড়ালেরও জলাতঙ্ক হয়। এই রোগটি অনেক পরিচিত ও ভয়ঙ্কর। ইহা একটি প্রাণঘাতী রোগ। এই রোগের ভাইরাস শেয়াল, বাদুর, ইঁদুর, রেকুন ইত্যাদি বহন করে থাকে।
আর এই প্রাণীগুলোর কামড়ে বা আঁচড়ে বিড়ালের মধ্যে এই রোগ ছড়ায়। জলাতঙ্কে আক্রান্ত বিড়ালের কামড়ে বা আঁচড়ে মানুষ ও অন্য প্রাণীরও এই রোগ হয়ে থাকে।
এই ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পরে মস্তিস্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে। বিড়ালের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তবে আস্তে আস্তে এ লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। আর তাই এই লক্ষণগুলো দেখলেই বিড়ালকে পশু চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করাতে হবে।
এ রোগে আক্রান্ত বিড়াল খুব বেশিদিন বাঁচতে পারে না। তবে বিড়ালের এই রোগ হলে তার কোন ধরনের চিকিৎসা নেই। কিন্তু এ রোগরের প্রতিষেধক আছে।
বিড়ালকে Vaccine / প্রতিষেধক দেওয়ার মাধ্যমে এই জলাতঙ্কের রোগ থেকে বাঁচানো যায়। আর তাই সচেতনতার মাধ্যমেই এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়। বিড়ালের জলাতঙ্কের রোগের লক্ষণসমূহঃ
- এ সময় জ্বর আসা বা প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়া।
- হঠাৎ করে বিড়ালের আচরণে পরিবর্তন হওয়া।
- অস্বাভাবিক পাগলের মতো আচরণ করা।
- হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠা কিংবা কামড় বা আঁচর দিতে চাওয়া।
- অন্যরকম করে ডাকা।
- মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকা।
- ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া।
- প্রচন্ড ভয় পাওয়া ও পানি পান বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়?
বিড়াল যদি কামড় দেয় তবে প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যেই টিকা দিতে হয়। আর এসব পশুর কামড়ে জলাতঙ্ক হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। জলাতঙ্ক থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব মাংসপেশিতে অথবা চামড়ায় টিকা নিতে হয়।
তবে ব্যক্তি বা শিশুর ক্ষেত্রে কামড়ানোর প্রথম ১ম, ৩, ৭, ১৪ ও ২৮তম দিনে টিকা দিতে হবে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, বাঁদুর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, খরগোশ, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি পশু কামড়ালে জলাতঙ্ক (Rabies) রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
তবে পশু শুধু চামড়ায় স্পর্শ করলে ও শরীর অক্ষত থাকলে কোন ধরনের টিকা নিতে হয় না। তবে রক্তপাতহীন ক্ষত হলেও প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে এমন সমস্যায় ২ ধরনের টিকা নেওয়া যায়।
একটি হল চামড়ায়- টিকা দেওয়া বেশি কার্যকর এবং খরচ কম হয়, অপরটি হল মাংসপেশিতে খরচ বেশি, তবে দক্ষ চিকিৎসক প্রয়োজন হয়। বিড়াল কামড়ালে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলোর দিকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবেঃ
- আক্রান্ত হওয়ার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে টিকা নিতে হবে।
- গত পাঁচ বছরে এ রোগের কোন টিকা দেওয়া হয়নি, এমন ব্যক্তি বা শিশুর ক্ষেত্রে কামড়ানোর প্রথম দিন, ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮ তম দিনে টিকা নিতে হবে।
- পাঁচ বছরের মধ্যে কোন টিকা নিয়ে থাকলে প্রথম এবং তৃতীয় দিনে বুস্টার ডোজ নিলেই হয়।
- ইমিউনোগ্লোবিন টিকা পাওয়া না গেলে প্রথম দিনে দুই বাহুতে দুইটি টিকা নিতে হবে।
- এরপর ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮ তম দিনে বাকি টিকা গ্রহণ করতে হবে।
- আপনারা যারা বিড়াল পালন করে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি কামড়ের পূর্বেই ০ ও ৩ তম দিনে ২টি টিকা নিয়ে রাখতে হবে।
- পরবর্তীতে আক্রান্ত হলে ০, ৭, ২১ তম দিনে টিকা নিলেই যথেষ্ট হবে।
- গৃহপালিত পশুর ক্ষেত্রে কামড়ানোর দশ দিন পর প্রাণী সম্পূর্ন সুস্থ থাকলে ১৪ এবং ২৮ তম দিনের টিকা না নিলেও হয়।
পরিশেষে বলব উপরোক্ত বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়, তার সঠিক তথ্য জেনে টিকা নিতে হবে।
বিড়াল কামড়ালে করণীয়?
বিড়াল কামড়ালে আমাদের চামড়ার প্রাথমিক চিকিৎসা করার পাশাপাশি জীবানুনাশক ব্যবহার করা ছাড়াও এবং ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। তবে জলাতঙ্ক যেন না হয় সে বিষয়ে লক্ষ রেখে নিম্নোক্ত প্রাথমিক পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করতে হবেঃ
- ক্ষতের গভীরতা যাচাই করা
- ক্ষতস্থান পরিষ্কার করা
- ক্ষতস্থান জীবানুমুক্ত রাখা
- ভ্যাকসিন গ্রহণ
- ক্ষতের গভীরতা যাচাই
বিড়ালের স্বাভাবিক স্পর্শ বা ক্ষতহীন আঘাতে তেমন কোন কিছু করতে হয় না। তবে আঘাত যদি কিছুটা গভীর হয় এবং চামড়া ছুলে বা ডেবে গেলে জীবানুনাশক দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।
ক্ষতস্থান পরিষ্কার করা
বিড়ালের আঁচড়ে ছুলে গেলে ক্ষতস্থানে সাবান ও হালকা উষ্ণ পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর পানির তীব্র ঝাপটায় কমপক্ষে বিশ মিনিট ধরে ক্ষতস্থান ধৌত করতে হবে।
ক্ষতস্থান জীবানুমুক্ত রাখা
ক্ষতস্থানে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে স্যাভলন কিংবা ডেটল ব্যবহার করে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ভালভাবে বেধে রাখতে হবে, যাতে করে কোন ধরনের রোগ জীবানু বা ময়লা ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।
যদি রক্তপাত না হয়, তবে ব্যান্ডেজ খুলে দিতে হবে। কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক বাতাস না পেলে ক্ষতস্থানে ধনুষ্টংকার রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। ক্ষত বেশি গভীর হলে তাতে টাইট করে বাঁধন দেওয়া যাবে না।
ভ্যাকসিন গ্রহণ
ক্ষতস্থানের প্রাথমিক চিকিৎসার পর স্থানীয় হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক থেকে যত দ্রুত সম্ভব র্যাবিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। আর যদি ক্ষতস্থানের রক্তপাত বন্ধ না হয় এবং ক্ষতের চারিপাশে লাল বর্ণ ধারণ করলে সতর্কতা অবলম্বনে ধনুষ্টংকার কিংবা টিটেনাস টিকাও নিতে পারেন।
আর তাই বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে আপনাকে টিকা দিতে হবে, সে বিষয়ে পূর্ব ধারণা রাখুন।
বিড়ালের আঁচড় কি ক্ষতিকর?
বিড়ালের আচঁড়ে ক্ষতের সৃষ্টি হলে তা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। এতে প্রাথমিকভাবে সাধারণ কিছু অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেয়। তবে বিড়ালের আঁচড়ে ক্ষত না হলে তেমন কোন ধরনের ক্ষতি হবে না।
আর ক্ষত যদি গভীর হয়, তাহলে বয়স্কদের শরীরে তেমন কোন ধরনের প্রভাব না পড়লেও শিশু কিংবা ছোটদের ক্ষেত্রে জ্বর আসা, শরীরে ফোসকা পড়া, পিঠ বা পেটে ব্যাথা হওয়া হতে পারে।
এ ধরনের সমস্যায় অতি তাড়াতাড়ি স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। অন্যথায় পরবর্তীতে জলাতঙ্ক বা অন্যান্য বড় সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
বিড়ালের ভ্যাকসিন এর দাম কত?
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে তিন ধরনের বিড়ালের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়ঃ
- RABISIN
- NOBIVAC Feline 1-HCPCh
- QUADRICAT
দেশের বিভিন্ন সরকারি ক্লিনিকে এ ধরনের ভ্যাকসিন দিতে পারবেন। ভ্যাকসিনের মূল্য পরিবর্তনশীল হয়। তবে সাধারণত এই ভ্যাকসিন গুলোর দাম হয়ঃ
- NOBIVAC (১০০০-১৫০০) টাকা
- RABISIN (৩০০-৫০০) টাকা
- QUADRICAT (১০০০-১৫০০) টাকা।
বিড়ালের ভ্যাকসিনের দাম?
বিড়ালের ভ্যাকসিনের ১ম ডোজ- ৪-৬ সপ্তাহ বয়সে। ২য় ডোজ হবে ১০-১২ সপ্তাহ বয়সে এবং তৃতীয় ডোজ নিতে হবে ১৪ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে। এরপর প্রতিবছর একটি করে টিকা দিতে হবে।
বিড়ালের দেহে কিছু কঠিন রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে। এছাড়াও বিড়ালের সংস্পর্শে আসলে, বিড়াল কামড়ালে কিংবা আঁচড় কাটলে র্যাবিস নামক রোগ মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে। আর তাই বিড়ালের ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত।
বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের দাম কত?
বিড়াল কামড়ালে যে টিকা নিতে হয় তা বিভিন্ন কোম্পানির হয়, এজন্য দামও কম বেশি হয়ে থাকে। তবে সাধারণত বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের দাম প্রতিটি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে হয়।
বিড়াল কামড়ালে কয়টি ভ্যাকসিন দিতে হয়?
বিড়াল কামড়ালে মোট ৫টি ভ্যাকসিন দিতে হয়। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ০, ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮তম দিনে ভ্যাকসিন দিতে হয়। তবে ভ্যাকসিনেশনের পূর্বেই জেনে নিবেন বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে আপনাকে টিকা দিতে হবে।
বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি হয়?
বিড়ালের নখের আঁচড়ে ক্ষত না হলে তেমন কোন ধরনের ক্ষতি হবে না। তবে ক্ষত যদি গভীর হয়ে থাকে, তাহলে বয়স্কদের শরীরে তেমন কোন প্রভাব না পড়লেও শিশু কিংবা ছোটদের ক্ষেত্রে জ্বর আসা, শরীরে ফোসকা পড়া, পিঠ কিংবা পেটে ব্যাথা হতে পারে। এছাড়াও পরবর্তীতে ধরনের বড় সমস্যা হতে পারে।
বিড়াল কামড়ালে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়?
হ্যাঁ, বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিলে ক্ষত তৈরি হলে তার জন্য অবশ্যই ভ্যাকসিন দিতে হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ০, ৩, ৭, ১৪ ও ২৮ তম দিনে মধ্যে ভ্যাকসিন দিতে হয়।
বিড়ালের আঁচড়ে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়?
হ্যাঁ, অবশ্যই বিড়ালের আঁচড়ে ক্ষত তৈরি হলে তার জন্য ভ্যাকসিন দিতে হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ০, ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮ তম দিনে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
জলাতঙ্কের প্রতিষেধক?
শুধুমাত্র rabies vaccine / জলাতঙ্কের টিকার মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে বর্তমান সময়ে সব পশু চিকিৎসকের কাছ থেকেই এই টিকা দেওয়া যায়।
শেষকথা
বিড়াল আমাদের একটি পছন্দের পোশা প্রাণী হলেও এটি আমাদের জন্য কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর তাই আপনার পোষা বিড়াকে অবশ্যই ভ্যাকসিন দিয়ে নিবেন।
আপনি যদি একজন পশুর প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় সে বিষয়েও সবসময় লক্ষ্য রাখবেন।