ইসুবগুলের ভুসি আমাদের শরীরের জন্য আশ্চর্য এক ঔষধি। ইসুবগুলের ভুসি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।ইসুবগুলের গাছ সাধারণত দেড় থেকে দুই ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে। ইসুবগুলের বীজ দেখতে অনেকটা নৌকার মতো। আর এই ইসবগুলের ভুসি মানুষের শরীরের জন্য দারুণ উপকারী।
আজকের পোস্টে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম ও ইসুবগুলের ভুসি উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ
ইসুবগুলের ভুসি উপকারিতা?
ইসুবগুলের ভুসির রয়েছে অসংখ্য গুনাগুন।নিয়মিত ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর অনেক ধরনের উপকারিতা পেয়ে থাকে। নিচে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার অসাধারণ কিছু উপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ইসুবগুলের ভুষি খুবই দারুণ একটি ঔষধি।ইসুবগুলের ভুষি নিয়মিত খাওয়ার ফলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
এসিডিটির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে
যাদের গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ইসুবগুলের ভুষি খুবই চমৎকার হতে পারে। ইসুবগুলে উপস্থিত এক ধরনের ফাইবার পাকস্থলিতে একটি স্তর তৈরি করে।
যা সাধারণত আমাদেরকে এসিডিটির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া হজম শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য ইসুবগুলের ভুষি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে ইসুবগুলের ভুসির উপকারিতা
ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে শরীরকে দূরে রাখতে ইসুবগুলের ভুষি খুবই দারুণ উপাদান। কেননা ইসুবগুলের ভুষিতে রয়েছে জিলাটিন নামের এক ধরনের উপাদান যা সাধারণত দেহে গ্লুকোজের শোষণ ও ভাঙ্গার প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করে থাকে।
এর কারণে আমাদের রক্তে খুবই দ্রুত সুগারের পরিমাণ বাড়তে পারে না। তাই যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস শুরু করতে পারেন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে
যাদের উচ্চতার চেয়ে ওজন অনেক বেশি বা বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তারা ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
ইসুবগুলের উপস্থিত থাকা ফাইবারের কারণে আমাদের হজম প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতিতে হয়ে থাকে যার কারণে ক্ষুধা অনেক দেরিতে লাগে। যার কারণে নিয়মিত ইসুবগুলের ভুষি খেলে ওজন কমানো অনেক সহজ হয়ে যায়।
রক্তের কোলেস্টেরল দূর করতে ইসুবগুলের ভুসির উপকারিতা
ইসুবগুলের ভুসি খেলে আমাদের অন্ত্রে এক ধরনের স্তর তৈরি হয়ে থাকে যা সাধারণত কোলেস্টেরল শোষণে বাধা প্রদান করে থাকে।
এর ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমতে কমতে সাধারণ পর্যায়ে চলে আসে। তাই যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস শুরু করতে পারেন।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে থাকে
ইসুবগুলের ভুষি নিয়মিত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া প্রতিরোধ হয়ে থাকে। যাদের ডায়রিয়ার সমস্যা রয়েছে তারা ইসুবগুলের ভুষি এবং দই মিশিয়ে খেতে পারেন।
কেননা এই দুটি উপাদান যদি একসাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তাহলে ডায়রিয়ার সমস্যা খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিরোধ করা যাবে।
ইসুবগুলের ভুসি ও তোকমার উপকারিতা?
ইসবগুলের ভুষি এবং তোকমা দানা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই দুইটি উপাদান একসাথে খেলে নানান ধরনের চর্ম রোগ নিরাময়ে কাজ করে থাকে।
তাছাড়া এটি একজিমা এবং সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে তারা নিজেদের চুলকে শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসি এবং তোকমা দানার শরবত খেতে পারেন।
তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে পেট ফাপার মত সমস্যা দূর করে থাকে এই উপাদান দুটি। ইসুবগুলের ভুষি ও তোকমা দানার শরবত হৃদরোগ কমানো থেকে শুরু করে দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
ইসবগুলের ভুসির অপকারিতা?
ইসুবগুলের ভুষি পরিমিত পরিমাণে খেলে কোন ধরনের অপকারিতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।অনেক ক্ষেত্রে ইসুবগুলের খুশি আমাদের পাকস্থলীতে টানটান ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
তাই তখন ইসুবগুলের ভুসি খাওয়া থেকে বিরত থাকলে সবথেকে ভালো হয়। ইসুবগুলির ভুসি খাওয়ার ফলে যদি এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
যাদের অন্ত্রে রোগ বা সমস্যা রয়েছে তাদের ইসুবগুলের ভুষি না খাওয়াই ভালো। টানা কিছুদিন ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের ওজন অনেক কমে যেতে পারে তাই একটানা কখনোই ইসুবগুলের ভুষি এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহের বেশি খাওয়া যাবে না।
খালি পেটে ইসুবগুলের ভুসি খেলে কি হয়?
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ইসুবগুলের ভুষি খেলে পেটে খাওয়া সব থেকে উপকারী। এর জন্য প্রথমে একটি কাপে ৫ থেকে ১০ গ্রাম ইসুবগুল নিয়ে এক কাপ ঠান্ডা গরম পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খেলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হয়। বিশেষ করে পেট ফাঁপা থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাটা নিমিষেই দূর হয়ে যায়।
ইসবগুলের ভুসি খেলে কি মোটা হওয়া যায়?
ইসুবগুলের ভুষি খেলে মোটা হওয়া যায় কিনা এই নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। ইসুবগুলের ভুষি আমাদের শরীর থেকে বাজে কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।
তাই যাদের বাড়তি ওজন রয়েছে তারা নিয়মিত ইসুবগুলির ভুসি খাওয়ার মাধ্যমে তাদের বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ইসুবগুলের ভুষি খেলে মোটা হওয়ার যায় এই কথাটি সঠিক নয়।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক সময়?
ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের জানা জরুরি। কেননা সঠিক সময় আপনি যদি এই উপাদানটি না খেয়ে থাকেন তাহলে এর সর্বোচ্চ উপকারিতা কোনভাবেই পাবেন না।
ইসুবগুলের ভুষি আপনারা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তাহলে হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলো থেকে শরীর দূরে থাকবে।
তাছাড়া ইসবগুলের ভুষি রাতে দুধের সাথে খেলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে আনে।
গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কি?
গর্ভাবস্থায় ইসুবগুলের ভুষি খাওয়া যাবে কিনা সেটা সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের সঠিক ধারণা রাখা উচিত। সাধারণত গর্ভাবস্থায় অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
তখন ডাক্তার রোগীকে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।তাই যদি গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়া যায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তাহলে কোন ধরনের সমস্যা হবে না।
শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম বা ইসুবগুলের ভুসি খেলে আমাদের শরীর কি কি উপকারিতা পাবে সেই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।
তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরকে আরো ধরনের রোগ থেকে দূরে রাখে কিছুদিন ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।