সাধারণত কিডনি রোগের কারণে একজন রোগীর শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে যদি এটা একেবারে অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চলে যায়। তাহলে কিন্তু ব্যাপক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলে খুবই ভাল। ঔষুধ ছাড়া আলাদা কৌশলে কিভাবে এই জিনিসটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে সম্পর্কে এখন বিস্তারিত আলোচনা করব। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়।আপনারা যারা এই সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরে আছেন তারা আমাদের এখান থেকে কিছু উপকারী তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। যে তথ্যগুলো আপনাকে আপনার শরীরের ক্রিয়েটিন এর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
আমরা সাধারণত আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে, আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ফেলছি। খাদ্য অভ্যাসসহ আমাদের শারীরিক গঠন এবং শারীরিক পরিশ্রম পরিবর্তন হচ্ছে।
যেগুলো আমাদের জন্য খুব খারাপ কিছু বয়ে আনছে। তবে মনে রাখবেন ভাল অভ্যাস আপনাকে অবশ্যই সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভাল অভ্যাসের মধ্যে থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কাজ
ক্রিয়েটিনিন কমানোর ব্যায়াম?
ক্রিয়েটি নেন কমানোর তেমন কোন আলাদাভাবে ব্যায়াম নেই। সাধারণত যাদের কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে এবং ইহার কারণে ক্রিয়েটিনিন বৃদ্ধি পায় তাদের ক্ষেত্রে এমন কিছু ব্যায়াম দেওয়া হয়। যে ব্যায়ামগুলো করলে কিডনির পাথর নিজে নিজেই অপসারণ হতে পারে।
সেই ব্যায়ামের মধ্যে একটি ব্যায়াম হল বল দড়ি খেলা। এবং লাফালাফি করা যদি এর মাধ্যমে কিডনির পাথরের সাইজ ছোট হয়। তাহলে সেটা অনায়াসে বেরিয়ে যাবে কোন ঔষুধের প্রয়োজন পড়বে না।
আরও পড়ুনঃ প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কি কি থাকে
ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায়?
সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম বদলে দিতে পারে কিডনি রোগীদের জীবন। ঠিক তেমনি কিডনি রোগীদের ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেড়ে গেলে তা কমানোর বিভিন্ন উপায় আছে। যেমনঃ
- ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেড়ে গেলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ৫ থেকে ৭ গ্লাসের বেশি পানি পান করা যাবে না।
- প্রতিদিন প্রোটিন ৪০ গ্রাম দেওয়া যেতে পারে তাতে কোন সমস্যা নেই।
- কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিমাণ অবশ্যই বাড়িয়ে দিতে হবে।
- আঁশজাতীয় কিছু দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ শাক, লাল চাল, লাল আটা গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
- সব ধরণের সবজিই খেতে পারবেন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে ভাপ দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে তারপর খেতে হবে।
- আপনার যদি ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে, তখন আপনাকে চর্বিজাতীয় খাবার সীমিত করতে হবে।
- কলা, ডাবের পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- কেননা এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে।
- এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে, যেগুলোতে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম কম থাকবে।
- গরুর দুধ, বেরিজাতীয় ফল,স্কিমড মিল্ক, দই, লাল আঙুর, লাল ক্যাপসিকাম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে, তবে সব ধরণের ফল খাওয়া যাবে না।
- আনারস ৫০ গ্রাম কিংবা এক স্লাইস খাওয়া যাবে।
- সাধারণত টমেটোর মাংসল অংশটা খাওয়া যাবে, কিন্তু তরল পানি অংশটা খাওয়া যাবে না।
- খই কার্বজাতীয় খাবার হওয়ায় এটি অসম্ভব ভাল কাজ করে।
- ভুট্টা, পপকর্ন এগুলোও ভাল কাজ করে থাকে।
- মিষ্টিকুমড়ার শক্ত সবুজাভ অংশ, গাজরের মাঝের নরম অংশ ও পনির, লবণাক্ত আচার, নুডলস মিক্স, পাস্তা, লবণাক্ত বা টিনজাত মাংস, খাবার সোডা, ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ইত্যাদি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
- কাঁচা জিনিস, সালাদ খাওয়া যাবে না।
- কোন প্রকার চা খাওয়া মোটেও আপনার জন্য ঠিক হবে না।
- চা পান করার ফলে আপনার কিডনির কার্যকলাপ বেড়ে গিয়ে শরীরের প্রয়োজনীয় পানিও বেরিয়ে যায়।
- আর এ কারণে চা একেবারেই এড়িয়ে চলা উত্তম।
- পেঁপে একেবারেই খাওয়া ঠিক নয়। এতে ক্রিয়েটিনিন এর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রতিটি খাবারের বিকল্প খুঁজে বের করা প্রয়োজন। রোগীদের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডায়েট দিতে হবে। তবেই ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমানো সম্ভব। ভাল হয় পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিলে।
আরও পড়ুনঃ ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত
ক্রিয়েটিনিন কমানোর ঔষুধ?
সাধারণত ক্রিয়েটিনিন কমানোর সরাসরি কোন ঔষুধ নেই। তবে এমন কিছু খাবার আছে যে খাবারগুলো আপনি নিয়মিত খেলে অবশ্যই আপনার ক্রিয়েটিনিন কমে যাবে। অ্যাপেল সিড ভিনেগার (Apple Seed Vinegar) এ সম্পর্কে আমরা সকলে অবগত আছি।
মূলত অ্যাপেল সিড ভিনেগার দেহের ক্রিয়েটিনের নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। যারা নিয়মিত অ্যাপেল সিড ভিনেগার খান তাদের মতে অ্যাপেল সিড ভিনেগার খাওয়ার পর থেকে তাদের অ্যাসিটিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আনতে অনেক সুবিধা হয়।
যার কারণে কিডনিতে পাথর জমা থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। আপনারা একটি সুন্দর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন এবং সেই অভ্যাস অনুযায়ী প্রতিদিন এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চামচ এপেলসির ভিনেগার যোগ করে খেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
দারুচিনি ক্রিয়েটিনের লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনাকে সাহায্য করবে। তার কারণ হল এটা প্রকৃতিকভাবে প্রসবের পরিমাণ বাড়ায় এবং এটা আপনার শরীরের কিডনির কার্যক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে।
আপনি একটা সুন্দর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন যেখানে যেকোন ধরণের পানীয় সঙ্গে প্রতিদিন আধা চামচ দারুচিনির গুড়া বা এক টুকরা দারুচিনি প্রতিদিন চিবিয়ে খেয়ে ক্রিয়েটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
আপনি যদি প্রাকৃতিকভাবে ফাইবার যুক্ত খাবার প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে সেটা আপনার শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করবে। আর তাই চেষ্টা করতে হবে যাতে করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খাওয়া হয়।
অনেকের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন নিয়ন্ত্রণে না আসলে চিকিৎসা করার চেষ্টা করেন যে ক্রিয়েটিন ইন সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে। ইহা সাধারণত এমন রোগীদের ক্ষেত্রে করা হয় যারা শারীরিকভাবে ক্রিয়েটিন এর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।