ঘুম কম হওয়ার পেছনে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ঘুমের সমস্যা বা নিদ্রাহীনতা (insomnia) হতে পারে শরীরের পুষ্টির অভাবের কারণে, বিশেষ করে যখন শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মাত্রা কম থাকে।ভিটামিনের অভাব ঘুমের চক্র এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আজকের আর্টিকেলে কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়?
ঘুম কম হওয়ার পিছনে বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক এবং পুষ্টিগত কারণ থাকতে পারে, এবং ভিটামিনের অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পুষ্টির অভাব শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ এবং ঘুমের চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ এন্টিবায়োটিক কতদিন কাজ করে
এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো যে কোন কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হতে পারে এবং এর প্রভাব কিভাবে পড়েঃ
১. ভিটামিন D
ভিটামিন D শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন। এটি হাড়ের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে এটি ঘুমের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
কিভাবে ঘুমে প্রভাব ফেলে
ভিটামিন D এর অভাবে শরীরের সেরোটোনিনের (যা মুড এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে) মাত্রা কমে যেতে পারে। সেরোটোনিন পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে মেলাটোনিন (ঘুমের হরমোন) তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
মেলাটোনিনের অভাবে ঘুমের চক্রের সমস্যা হয়, যার ফলে গভীর ঘুম আসতে পারে না বা ঘুমের সময় কম হতে পারে।
গবেষণা
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন D এর অভাবে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। যেমনঃ একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ভিটামিন D এর অভাবে নিদ্রাহীনতা (insomnia) বা ঘুমের সমস্যার হার বেড়ে যায়।
সূত্র
সূর্যের আলো ভিটামিন D এর প্রধান উৎস, তবে এটি মাংস, মাছ, ডিম এবং দুধের মতো খাবার থেকেও পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ নিউমোনিয়া রোগীর খাবার
২. ভিটামিন B12
ভিটামিন B12 একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন যা স্নায়ুতন্ত্র এবং শারীরিক সেলুলার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি শরীরে নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করতে সহায়ক, যা মস্তিষ্কের কার্যক্রম এবং ঘুমের চক্রকে প্রভাবিত করে।
কিভাবে ঘুমে প্রভাব ফেলে
ভিটামিন B12 এর অভাবে শরীরের মেলাটোনিন উৎপাদন প্রভাবিত হতে পারে। মেলাটোনিন ঘুমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং B12 এর অভাব ঘুমের সময়সূচি এবং ঘুমের গুণমানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণা
কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, B12 এর অভাব স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। B12 এর অভাব হলে শরীরের ঘুমের প্রাকৃতিক চক্র বিপর্যস্ত হতে পারে, বিশেষত রাতে ঘুমের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
সূত্র
মাংস, মাছ, দুধ, ডিম, এবং দানাশস্যে ভিটামিন B12 পাওয়া যায়। এর অভাবে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেয়া প্রয়োজন হতে পারে।
৩. ভিটামিন B6
ভিটামিন B6 (পাইরিডক্সিন) মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র এবং ঘুমের সাইকেল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি সেরোটোনিন এবং গ্যামা-অ্যামিনোবিউটারিক অ্যাসিড (GABA) নামক নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সাহায্য করে, যা মস্তিষ্ককে শিথিল করে এবং ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে।
কিভাবে ঘুমে প্রভাব ফেলে
ভিটামিন B6 এর অভাবে মস্তিষ্কের স্নায়ু সংকেত (neurotransmitter) এবং ঘুমের রেগুলেশন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। এর ফলে গভীর ঘুম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে এবং রাতের বেলায় বারবার ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ আসল সাবুদানা চেনার উপায়
গবেষণা
কিছু গবেষণা দেখিয়েছে যে, ভিটামিন B6 এর অভাবে ঘুমের মান কমে যায় এবং ঘুমের সময় আরও অস্থির হয়ে পড়ে। এর ফলে, ভিটামিন B6 এর সঠিক মাত্রা ঘুমের মান বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
সূত্র
মাংস, মাছ, শাকসবজি, বাদাম, এবং তিলের মধ্যে ভিটামিন B6 পাওয়া যায়।
৪. অন্য কিছু ভিটামিন ও মিনারেল
এছাড়া, কিছু অন্যান্য ভিটামিন এবং মিনারেলও ঘুমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যেমনঃ
ভিটামিন C
এই ভিটামিনের অভাব ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি স্ট্রেস হরমোন কমাতে সাহায্য করে, যা ঘুমের মানকে প্রভাবিত করে।
ম্যাগনেসিয়াম
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে শরীরের পেশী শিথিল হতে পারে না, ফলে ঘুমের সমস্যায় পড়তে পারেন।
আরও পড়ুনঃ নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা
শেষ কথা
ঘুমের সমস্যা একটি বহুমুখী বিষয় হতে পারে এবং এর পেছনে ভিটামিন D, B12, এবং B6 এর অভাব একটি বড় কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে, ঘুমের সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা যদি শুধুমাত্র পুষ্টি পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাধান না হয়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত, কারণ এটি শারীরিক বা মানসিক অন্য কোন সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।