মানব দেহে কৃমি অনেক ক্ষতি করে। তাই কৃমির আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমাদের নিয়মিত কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে চলতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলে কৃমি কি, গুড়া কৃমির ওষুধ, কৃমি কত প্রকার ও কি কি, গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ?গুড়া কৃমি কেন হয়, গুড়া কৃমির ট্যাবলেট, গুড়া কৃমি তাড়ানোর উপায়, বাচ্চাদের গুড়া কৃমি দূর করার উপায়, গুড়া কৃমির লক্ষণ, গুড়া কৃমি থেকে মুক্তির উপায়, গুড়া কৃমি কি ক্ষতি করে ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
কৃমি কি?
কৃমি হল এক ধরনের পরজীবী প্রাণী। যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দেহে বাস করে সেখান থেকে খাবার গ্রহণ করে বেঁচে থাকে।
কৃমির কীভাবে ছড়ায়?
কৃমির ডিম খাবার, পানি, বাতাস, মল, বিড়াল এবং গৃহপালিত পশুর শরীর, বাথরুমের কমোড, দরজা এবং হাতলে মিশে থেকে ছড়ায়।
কৃমি কত প্রকার কি কি?
কৃমি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে যেমনঃ কেঁচো কৃমি, সুতা কৃমি বা গুড়া কৃমি, বক্র কৃমি এবং ফিতা কৃমি ইত্যাদি।
গুড়া কৃমি কি?
গুড়া কৃমি হচ্ছে একটি প্যারাসাইট বা পরজীবী। যা সাধারণত সুতা কৃমি নামেই সবার কাছে পরিচিত। ইহা সাধারণত মানুষের মলাশয় কিংবা মলদ্বারে থাকে। এই কৃমির ডিম গুলো আকারে খুব ছোট হয়।
আর এ কৃমি প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। কৃমি সাধারণত মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য। আর এই পরজীবী গুলো আমাদের শরীরে সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
কিন্তু এরা অন্য কোন প্রাণীদের আক্রমণ করে না। যদি কোন ব্যক্তি এই পরজীবী বা গুড়া কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাহলে এই কৃমি গুলো ক্ষুদ্রান্তে অতিদূত বেড়ে ওঠে ও এরা মলদ্বারে বংশ বৃদ্ধির জন্য ডিম পাড়তে থাকে।
একটা কথা যেনে আপনি অবাক হবেন যে, একটি কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে দিনে প্রায় ০.৩ মিঃলিঃ লিটার রক্ত শুষে নেয়। যার ফলে শিশু থেকে বৃদ্ধ অপুষ্টি এবং রক্ত শূন্যতায় ভোগে। তাই বলা যায় যে, ছোট থেকে বৃদ্ধ প্রতিনিয়তই এ সমস্যায় ভুগেন।
কৃমি হওয়ার কারণ?
বিভিন্ন কারণেই কৃমি হয়ে থাকে। যেমনঃ অস্বাস্থ্যকর টয়লেট, অপরিষ্কার ঘরবাড়ি ও টয়লেট ব্যবহার করার পর হাত ভালোভাবে না ধোয়ায়। দূষিত পানি ও রান্না করা খাবার রান্না করার পূর্বে ভাভাবে না ধুয়ে রান্না করলে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করা হলে। আমাদের হাতের নখ বড় রাখলে ও গরুর মাংস অর্ধসিদ্ধ খেলে কৃমি হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যে, মিষ্টি খেলে কৃমি হয়ে থাকে।
আসলে সত্যি বলতে এটি হল আপনার একটি ভুল ধারণা। আমাদের মিষ্টি খাওয়ার সাথে এই কৃমি হওয়ার সম্পর্কই নেই বললেই চলে।
কৃমির লক্ষণ গুলো কি কি?
গুড়া কৃমি বা পরজীবির এই সংক্রমনের সব থেকে অতি সাধারণ লক্ষণ গুলো হলঃ
- চুলকানির জন্য ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া।
- মলদ্বারে চুলকানি।
- মলদ্বারে কিংবা এর আশে পাশে চুলকানি।
- ক্ষুধা কমে যাওয়া বা ক্ষুধা মন্দা।
- কারও প্রতি বিরক্তিভাব হওয়া।
- মৃদু বমু ভাব।
- ওজন কমে যাওয়া।
- একটু পর পর পেটে ব্যথা অনুভব হওয়া।
ঘন ঘন কৃমি হওয়ার কারণ?
- অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থা
- দূষিত পানি করা
- কাঁচা ফলমূল না ধুয়ে খাওয়া
- হাতের বড় নখ হলে
- কাঁচা ফলমূল যথেষ্ট রান্না না করা।
- শৌচাগার শেষে হাত সাবান দিয়ে না ধোয়া।
- খাবার তৈরি কিংবা গ্রহণের পূর্বে সাবান দিয়ে হাত না ধোয়া।
- খালি পায়ে শৌচাগারে যাওয়া।
- মাটিতে খালি পায়ে হাঁটা।
- অপরিচ্ছন্ন গৃহস্থালি হলে।
গুড়া কৃমির ওষুধের নাম?
গুড়া কৃমির ওষুধের নাম অনেকেই জানতে চান। তাদের জন্য উল্লেখ কিছু গুড়া কৃমির ওষুধের নাম দেওয়া হলঃ
- Solas → Opsonin → 1.67 Taka
- Mebendox →Indobangla →1 Taka
- Alben-Ds Tablet
- Sermox →Selton →1 taka
- Promax →Apollo → 1 Taka
- Seemox →Seema →1 Taka
কৃমির ওষুধের নাম?
- সোলাস ট্যাবলেট
- সোলাস সিরাপ (বাচ্চাদের জন্য)
কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম?
কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে প্রতি ৬ মাস পর পর পরিবারের সবাইকে একসাথে খেতে হবে। দিনে ২ বার সকালে একটা ও রাতে একটা করে ৩ দিন মোট ৬ টা ট্যাবলেট খেতে হবে।
কেউ যদি একা খায় তা ও খেতে পারবেন। তবে পরিবারের সবাই একসাথে খেলে সব থেকে ভাল হয়। তা নাহলে অনেক সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের ও যদি কৃমি থাকে। তাহলে তার থেকে আবারও ছড়াতে পারে।
কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়?
একাধিক গবেষণায় জানা গেছে, শতকরা প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের পেটেই কৃমি হয়ে থাকে। আর তাই এটিকে অতি সাধারণ সমস্যা বলে অবহেলা করলে আমাদের সবার জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
তবে আমাদের কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই এই কৃমির সমস্যা অতিদ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
আর তাই বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে কৃমির হতে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
১। গাজর
আমাদের কৃমি সমস্যা দূর করতে গাজর খুবই উপকারী একটি উপাদান। গাজর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি করে খেলে গাজরে থাকা যে ভিটামিন এ, সি, বিটা ক্যারোটিন ও জিংক থাকে তা আমাদের শরীরের কৃমি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে।
২। রসুন
আমাদের প্রতিনিয়ত নিয়ম করে রসুন খেতে হবে। নিয়মিত রসুন খেলে কৃমির সংক্রমণের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। পুষ্টিবিদদের মতে, রসুন হল টিএনটি প্যারাসাইটিক অর্থাৎ পরজীবীনাশক খাবার।
যা আমাদের শরীরে কৃমি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। কাঁচা রসুনে প্রায় ২৫ ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ৬৫ ধরনের ফাংগাস মেরে ফেলার সক্ষমতা আছে। আর তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খাওয়া।
৩। লবঙ্গ
প্রতিদিন সকালে ২টি করে লবঙ্গ খেলে এর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান কৃমি মেরে ফেলতে সাহায্য করে।
৪। মিষ্টি কুমড়ার বীজ
দুই চামচ মিষ্টি কুমড়ার বীজ গুড়া চার কাপ পানি নিয়ে তা একঘন্টা সিদ্ধ করে তা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ সপ্তাহ খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
তাছাড়াও ২ চামচ মিষ্টি কুমড়ার বীজের গুড়ারর সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে কৃমির সমস্যা থেকে অতি দ্রুত উপকার পাবেন।
৫। আনারস
আনারস থাকা ব্রোমেলাইন এনজাইম শরীরে বাসা বেঁধে থাকা প্যারাসাইট কিংবা পরজীবী মারতে সাহায্য করে। তাই ৩ থেকে ৪ শুধু আনারস খেয়ে থাকতে পারলেই কৃমির সমস্যা সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব।
৬। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
আমাদের প্রতিদিন খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে অ্যাপেল সিডার বা ভিনেগার খেতে হবে। এটির ফলে আমাদের পেটে থাকা এসিডের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে ও ওই অ্যাসিড শরীরে প্যারাসাইট এবং ক্ষতিকর জীবনের লার্ভা মারতে সহায়তা করবে।
৭। শসার বীজ
কৃমি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে শসার বীজ খুবই কার্যকরী উপাদান। তাই শসার বীজ বা এর দানা রোদে শুকিয়ে তা গুড়ো করে প্রতিদিন সকালে পানির সাথে খেতে পারলে খুব তারাতাড়ি উপকার পাওয়া যায়।
৭। কাঁচা হলুদ
কাঁচা হলুদে আছে এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। যা কৃমি সমস্যা নিয়ন্ত্রণে খুবই উপকারি একটি উপাদান। ১ কাপ উষ্ণ গরম পানিতে সামান্য পরিমানের হলুদের গুঁড়া ও লবণ মিশিয়ে খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়। আর এই মিশ্রণটি ৪ দিন পর পর খেতে হবে।
কৃমি প্রতিরোধের উপায়?
- ঘন ঘন হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে।
- বাথরুম এবং রান্নাঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
- বছরে দুইবার কৃমি প্রতিরোধক ঔষধ খেতে হবে।
- খাবার ভালভাবে সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে।
- কারণ হচ্ছে অর্ধসিদ্ধ খাবার থেকে কৃমির ডিম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে থাকে।
কৃমির ট্যাবলেট কি খালি পেটে খেতে হয়?
কৃমির ট্যাবলেট খালি এবং ভরা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়।
গর্ভবতী অবস্থায় কৃমির ঔষধ খেলে কি হয়?
গর্ভের প্রথম তিন মাস কৃমির ঔষধ খাওয়া যায় না। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লিভামিসল ও পাইরেনটাল পামওয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারবেন। তবে না খাওয়াই উত্তম।
বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো?
বাচ্চাদের জন্য কৃমির ভাল ঔষধ হল মেবেনডাজল সিরাপ।
নবজাতকের মা কি কৃমির ঔষধ খেতে পারবে?
হ্যাঁ, নবজাতকের মা কৃমির ঔষধ খেতে পারবে। তবে নবজাতকের ক্ষেত্রে এক বছর বয়স হতে হবে।
কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো?
Alben-Ds Tablet কৃমির জন্য ভাল ঔষধ।
১ বছরের বাচ্চার কৃমি খাওয়ানো যাবে কি?
হ্যাঁ, এক বছরের বাচ্চার কৃমি খাওয়ানো যাবে।
কৃমির ট্যাবলেট খেলে কি বাচ্চা নষ্ট হয়?
কৃমির ট্যাবলেট খেলে বাচ্চা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আর তাই গর্ভাবস্থায় কৃমির ঔষধ খাওয়া যাবে না।
কৃমির ঔষধ কতদিন পর খেতে হবে?
তিন মাস পরপর বাড়ির সকল সদস্যকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত।
কৃমির ট্যাবলেট কয়টা খেতে হয়?
এটা আসলে কোন কোম্পানির কৃমির ট্যাবলেট খাবেন তার উপর নির্ভর করে থাকে।
সাবধনতা
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ সেবন করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।