মুখে ঘা হলে করণীয় | মুখে ঘা এর ঔষধ

আমাদের মুখের ভেতর নরম যে আবরণ থাকে, তাকে মিউকাস মেমব্রেন বলা হয়। এই মেমব্রেন ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কারণে মুখ গহ্বরে ঘা বা ক্ষত কিংবা আলসারের সৃষ্টি হয়।মুখে ঘা হলে করণীয়বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইহা কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। মুখের ঘা হল এক ধরনের ক্ষত। যা সাধারণত ব্যাথাযুক্ত হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইহা বেশ যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।

মুখের ঘা কি?

মুখের ঘা হচ্ছে বেদনাদায়ক ক্ষত। যা আপনার মুখের নরম টিস্যুতে তৈরি হয়ে থাকে। এই ঘা আপনার ঠোঁট, মাড়ি, জিহ্বা, গালে ও মুখের তালুতে দেখা দিতে পারে।

মুখের ঘা কোথায় হয়?

আমাদের মুখের ভেতরে, গালের নরম মাংসপেশিতে, জিহ্বার এক পাশে এই ঘা হয়। এ সময় ছোট্ট একটি গোলাকার অংশ সাদাটে হয়ে ওঠে। আর সাদা অংশটার মধ্যে অনেক সময় পুঁজ জমে থাকতে পারে।

পুঁজের চার পাশে হালকা একটা সীমানা থাকে। যা গোলাকার বা ছোট্ট ডিম্বাকৃতির হয়। এই ঘা মুখের মাড়ি, ঠোঁট, জিহ্বা, গালের ভেতরের অংশ এবং তালুতে হয়।

মুখের ঘা কেন হয়?

সাধারণত আঘাতের কারণে যেমনঃ ভাঙা দাঁত, হরমোনাল পরিবর্তন কিংবা মানসিক চাপ থেকে মুখের ঘা হয়। এই ঘা সাধারণত এমনিতে চলে যায়। তবে কোন কোন সময় চিকিৎসা করা লাগে।

বেশির ভাগ সময় মুখের ঘা ব্যথা হওয়ার কারণে কথা বলতে ও খাওয়া দাওয়া করতে ও পানি পান করার সময় সমস্যা হয়। কোন কোন সময় মুখে আলসার ভাইরাসজনিত অটো ইমিউন ডিজিজ হয়।

যা পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাজনিত কারণে হয়। সবচেয়ে বেশি হয় অ্যাপথাস আলসার। এছাড়া দেখা যায়, ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস, লিউকোপ্লাকিয়া, ইরাইথ্রোপ্লাকিয়া, ওরাল থ্রাস এবং মুখের ক্যান্সার।

মুখের ঘা এর লক্ষণ?

মুখের ঘা এর লক্ষণগুলো হলঃ

  • মুখে ব্যথা
  • মুখে লাল ও সাদা প্যাচ
  • রক্তক্ষরণ
  • স্বরভঙ্গ
  • খাওয়া, পান করা ও গিলতে অসুবিধা
  • দেহাংশের পচনরুপ ব্যাধি

মুখে ঘা হলে যদি জ্বর হয়, তাহলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন বি১২ এবং জিঙ্কের ঘাটতি থাকলে অনেক সময় মুখে ঘা হয়। আর এই সমস্যা যেকোনও মানুষেরই হতে পারে। তবে শুধু যে ভিটামিনের অভাবেই মুখে ঘা হয় তা নয়।

সাধারণত মাড়ি, দাঁত, জিভ ও গালের ভিতরে যদি কোনও ধরনের সংক্রমণ হলে সেখান থেকেও মুখে ঘা হতে পারে।

মুখের ঘা এর কারণ?

  • দাঁতের যেকোন ধরনের ট্রিটমেন্ট করার সময় ওরাল টিস্যুতে আঘাতজনিত কারণে মুখে ঘা হতে পারে।
  • অসাবধানতায় মুখের গালে বা জিহ্বায় কামড় লাগার কারণে ঘা হতে পারে।
    এলার্জির কারণে ঘা হতে পারে।
  • অর্থোডোনটিক্স ব্রেসেস বা রিটেইনারের কারণে আঘাত হতে পারে।
  • টুথপেস্টে এবরেসিভ উপাদান বেশি থাকলে সেখান থেকে মুখে ঘা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • এসিডিক খাবার যেমনঃ কমলা, আপেল এবং স্ট্রবেরি জাতীয় ফল বেশি খেলে ঘা হতে পারে।
  • মানসিক চাপের কারণেও ঘা হতে পারে।
  • অনেক সময় ঘুম কম হলেও ঘা হতে পারে।

মুখের ঘায়ের উপসর্গ?

  • ঘা এর চারপাশে লাল দাগ দেখা যায়।
  • ঝাঁল, লবণাক্ত খাবার, টকজাতীয় খাবার খাওয়ার সময় ব্যাথা বেশি অনুভব হতে পারে।
  • ক্ষতস্থান হলুদ, সাদা বা ধূসর বর্ণের হয়।
  • ক্ষতের চারপাশে ফুলে যেতে পারে।
  • দাঁত ব্রাশ করার সময় ব্যাথা হতে পারে।

মুখের ঘা হলে করণীয়?

  • প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে।
  • মুখ এবং দাঁতের সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে।
  • প্রতিদিন লবণ, গরম পানি দিয়ে কিছু সময় কুলকুচি করতে পারেন।
  • গরম, ঝাঁল এবং ভাজাপোড়া খাবার বর্জন করতে হবে।
  • এনেসথেটিক্স জেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • সমপরিমাণ পানির সাথে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মিশিয়ে কুলকুচি করা যেতে পারে।

মুখের ঘায়ের চিকিৎসা?

বেশির ভাগ সময় মুখের ঘা এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। তবে চিকিৎসক এ উপসর্গ নিরাময়ের জন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন। এ সময় এন্টিসেপটিক জেল বা মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা হয়।

মুখে ঘা এর ঔষুধ?

  • Mystat Syrup
  • MIcoral oral Gel
  • Candex Syrup
  • Micosina Oral Gel
  • Bicozin Syrup

শেষ কথা, মুখের ঘা নিয়ে কখনো অবহেলা করা যাবে না। মুখের ঘায়ের জন্য অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড দন্তচিকিৎসকের (বিডিএস) পরামর্শ নিতে হবে।

প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য একজন ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের শরণাপন্ন হতে হবে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হল, দুই সপ্তাহ বা ১৫ দিনের বেশি ঘা যদি স্থায়ী হয়।

তবে অবশ্যই বায়োপসি কিংবা মাংসের টিস্যু পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আলসারের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা গেলে নির্দিষ্ট রোগের জন্য সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব ও কার্যকরী হবে।

সাবধনতা

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ সেবন করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

Sharing Is Caring:

This website mainly provides information on exercise, fitness, wellness, healthy living, etc. in the Bengali language.

Leave a Comment