পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমনঃ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী সংক্রমণ, খাদ্যে বিষক্রিয়া, পানি ও খাদ্যের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা, হজমজনিত সমস্যা কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের করে দেয়, ফলে পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ORS (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন), যা শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করে।এছাড়া, রোগের কারণ ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে Loperamide, Racecadotril, Metronidazole, Norfloxacin-Tinidazole ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিত নয়।
কারণ এটি ভুলভাবে গ্রহণ করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। পাতলা পায়খানার জন্য ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা জরুরি, যাতে শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য ঠিক থাকে এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।
পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম?
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী সংক্রমণ, খাদ্যে বিষক্রিয়া, পানি ও খাদ্যের অস্বাস্থ্যকর অবস্থান, অ্যালার্জি, কিংবা অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
এটি সাধারণত স্বল্পস্থায়ী হলেও কখনো গুরুতর হতে পারে এবং শরীরের পানি ও লবণের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। তাই ডায়রিয়ার দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা করা জরুরি। নিচে পাতলা পায়খানার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধসমূহ বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলোঃ
১. পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে (Hydration Therapy)
→ ORS (Oral Rehydration Salts) – ওআরএস সলিউশন
- ডায়রিয়ার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, যা শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে।
- ওআরএস শরীরে পানির পরিমাণ বজায় রাখে এবং শরীরের ইলেকট্রোলাইট পুনরুদ্ধার করে।
- এটি বাজারে পাউডার ফর্মে পাওয়া যায়, যা ১ লিটার বিশুদ্ধ পানির সাথে মিশিয়ে দিনে কয়েকবার সেবন করা হয়।
- ব্র্যান্ড: পেডিয়ালাইট, ওরেসালাইন, রিহাইড্রাল।
২. সাধারণ ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে (Anti-Diarrheal Drugs)
→ Loperamide (ইমোডিয়াম, লোপামাইড, ডায়ামাইড)
- এটি অন্ত্রের নড়াচড়া কমিয়ে ডায়রিয়ার তীব্রতা হ্রাস করে।
- স্বল্পস্থায়ী ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তবে সংক্রমণজনিত ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
- শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়।
→ Diphenoxylate + Atropine (লোমোটিল)
- এটি অন্ত্রের গতিশীলতা কমিয়ে পাতলা পায়খানার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- লম্বা সময় ধরে ডায়রিয়া থাকলে এটি কার্যকর হতে পারে।
৩. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণজনিত ডায়রিয়ার জন্য (Antibiotics for Bacterial Infections)
যদি ডায়রিয়া ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
→ Ciprofloxacin (সিপ্রোফ্লক্সাসিন, সিপ্রো)
- এটি E. coli, Salmonella, Shigella-এর মতো ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- বিশেষ করে ট্র্যাভেলার্স ডায়রিয়ার জন্য কার্যকর।
- সাধারণত ৫০০ মিগ্রা দিনে ২ বার ৩-৫ দিন সেবন করতে হয়।
→ Azithromycin (আজিথ্রোমাইসিন, আজিন, আজিড্রল)
- এটি Salmonella, Vibrio cholerae, Shigella-এর সংক্রমণের কারণে হওয়া ডায়রিয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- শিশুদের জন্য নিরাপদ হওয়ায় এটি শিশুদের ব্যাকটেরিয়াল ডায়রিয়ার চিকিৎসায় বেশি ব্যবহৃত হয়।
→ Levofloxacin (লেভোফ্লক্স, লেভোক্সিন)
এটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
→ Rifaximin (রিফাগুট, রিফাক্সিমিন)
বিশেষ করে ট্র্যাভেলার্স ডায়রিয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
৪. পরজীবী সংক্রমণের জন্য (Antiparasitic Drugs)
যদি পাতলা পায়খানার কারণ আমিবা বা পরজীবী সংক্রমণ হয়, তবে নিচের ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয়:
→ Metronidazole (ফ্লাজিল, মেট্রোনিড, মেট্রোজিল)
- এটি আমিবিক ডিসেন্ট্রি ও জিয়ার্ডিয়া সংক্রমণের জন্য কার্যকর।
- ব্যাকটেরিয়াল ও পরজীবী সংক্রমণজনিত ডায়রিয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ডোজ: দিনে ২-৩ বার, ৫-৭ দিন পর্যন্ত।
→ Tinidazole (টিনিডাজল, ফাসিজিন)
- এটি আমিবা ও জিয়ার্ডিয়া সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ফ্লাজিলের মতোই কাজ করে তবে দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার জন্য বেশি কার্যকর।
→ Nitazoxanide (নিটাজোক্স, নিটাজানিড, আলিনিয়া)
- এটি Cryptosporidium ও Giardia সংক্রমণের কারণে হওয়া ডায়রিয়ার জন্য কার্যকর।
- শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিরাপদ।
৫. প্রো-বায়োটিক ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নতকারী ওষুধ (Probiotics & Gut Health Enhancers)
→ Lactobacillus (এন্টোবায়োটিক, ল্যাকটোবেসিলাস ক্যাপসুল)
- অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া পুনরুদ্ধার করে এবং অ্যান্টিবায়োটিক-জনিত ডায়রিয়ার ঝুঁকি কমায়।
- এটি সাধারণত প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল বা দইয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করা যায়।
→ Saccharomyces boulardii (এন্টোফ্লোরা, ফ্লোরাটিল)
এটি অ্যান্টিবায়োটিক-জনিত ডায়রিয়ার জন্য কার্যকর এবং অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়।
৬. গ্যাস্ট্রিক ও ডায়রিয়ার সঙ্গে জড়িত উপসর্গের জন্য (Additional Supportive Medications)
→ Domperidone (মটিলিয়াম, ডমপিড, ডমস্টাল)
- বমি ও বমিভাব কমাতে সাহায্য করে।
- সাধারণত ডায়রিয়ার কারণে বমি হলে ব্যবহৃত হয়।
→ Omeprazole (ওমিজ, ওমিপ্রা, গ্যাসট্রোজোল)
ডায়রিয়ার সঙ্গে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে এটি ব্যবহার করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও সতর্কতা:
ORS অবশ্যই সবার আগে সেবন করা উচিত, কারণ এটি শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করতে সাহায্য করে। অনুমানের ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিত নয়। সংক্রমণজনিত ডায়রিয়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
গুরুতর লক্ষণ যেমনঃ
- ৩ দিনের বেশি স্থায়ী ডায়রিয়া
- রক্ত বা কফযুক্ত পায়খানা
- প্রচণ্ড পানিশূন্যতা বা দুর্বলতা
- শিশু বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে তীব্র ডায়রিয়া হলে
দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে ডায়রিয়া দ্রুত সেরে যায়।