নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ | নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা

নিউমোনিয়া রোগ খুবই মারাত্মক একটি রোগ। প্রতিবছর সারা বিশ্বে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ নিউমোনিয়া রোগে মারা যায়। নিউমোনিয়া ফুসফুসের প্রদাহ সৃষ্টিকারী এক ধরনের রোগ।নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণফুসফুসের আলভিওলি বা ছোট ছোট বায়ুথলিতে জীবাণুর সংক্রমণের কারণে এই প্রদাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে।শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া বেশি হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া রোগ হলে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি পর্যন্ত হতে পারে।

আজকের আর্টিকেলে নিউমোনিয়া কেন হয়, নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা নিয়ে মূল্যবান কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে।

নিউমোনিয়া কেন হয়?

বিভিন্ন জীবাণুর কারণে নিউমোনিয়া রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এদের মধ্যে বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের কারণে নিউমোনিয়া রোগ হতে পারে।

নিউমোনিয়ার জীবাণু সাধারণত মানুষের ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে থাকে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ও টিবি জীবাণুর মাধ্যমে নিউমোনিয়া রোগ হয়ে থাকে।

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ?

নিউমোনিয়া রোগ হলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। এই লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে খুব সহজে নিউমোনিয়া রোগ সনাক্ত করা যায়। নিউমোনিয়া রোগের কয়েকটি লক্ষণ দেওয়া হলোঃ

  • দ্রুত হৃদস্পন্দন হয়ে থাকে।
  • কফ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়ে থাকে।
  • সর্দি ও ঠান্ডা লেগে থাকে।
  • বমি বমি ভাব হয়।
  • অতিরিক্ত দুর্বল ও ক্লান্তির মত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
  • ডায়রিয়া সমস্যা দেখা দেয়।
  • খাবারে অরুচি সমস্যা।
  • শরীরে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর।
  • কাশির সঙ্গে রক্তপাত।

এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝে নিতে হবে রোগী নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন। নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার পর অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নবজাতকের নিউমোনিয়ার লক্ষণ?

নবজাতক শিশুর নিউমোনিয়া রোগ হলে তাদের ক্ষেত্রেও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। নবজাতক শিশুর নিউমোনিয়া রোগ হলে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।

তাছাড়া নবজাতক শিশুর যখন নিউমোনিয়া রোগ হয়ে থাকে তখন তাদের হৃদপিন্ডের গতি অনেক বেড়ে যাবে। বাচ্চা এই সময়ে অনেক বিরক্ত হয়ে যায় ও নাকের ছিদ্র বড় বড় করে শ্বাস নিয়ে থাকে।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধের উপায়?

নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে কিছু সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার আগে কিছু অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। যেমনঃ

  • ধূমপান বন্ধ করতে হবে
  • সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন নিতে হবে।
  • নিউমোনিয়া হলে নাক ও মুখে মাক্স ব্যবহার করতে হবে।
  • সুষম খাবার খেতে হবে।

দুই বছরের কম বয়সী যে সকল শিশু রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে যদি নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে তাহলে রোগীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা?

নিউমোনিয়া রোগ হলে বাড়িতে বসেই চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। নিউমোনিয়া রোগ হলে সঠিক ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। নিউমোনিয়া রোগ সম্পূর্ণভাবে ভালো হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মতো সময় লেগে থাকে।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে এই সময় গরম পানি লবণ পানি ও লাল চা খাওয়া যেতে পারে। রোগীর অবস্থা যদি খুবই আশঙ্কাজনক হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে চলে যেতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

শিশুর নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা?

নিউমোনিয়া রোগটি সাধারণত নবজাতক ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। নিউমোনিয়ার মাত্রা বুঝে বাড়িতে অথবা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে শিশুর।

শিশু নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হলে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, ও বেশি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। শিশুকে সময় মতো সঠিক চিকিৎসা করালে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে নিউমোনিয়া থেকে সুস্থ হয়ে যায়।

নিউমোনিয়ার ঔষধের নাম?

নিউমোনিয়া রোগ হলে প্রাথমিক অবস্থায় এজিথ্রোমাইসিন ঔষধ দেওয়া হয়ে থাকে। কেননা এটি মাইকোপ্লাজমা প্রজাতি সহ বেশিরভাগ সম্ভাব্য ইটিওলজিক এজেন্টকে কভার করে থাকে। অন্যান্য ঔষধের তুলনায় এই ওষুধটি দারুন কাজ করে থাকে।

তবে অবশ্যই কেউ নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে না হলে পরবর্তীতে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

নিউমোনিয়া রোগীর খাবার?

নিউমোনিয়া রোগ হলে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধ করার জন্য খাদ্য তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রচুর পানি পান করতে হবে

নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। এর মাধ্যমে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান বের হয়ে যাবে ও শরীর সুস্থ হয়ে উঠবে।

টাটকা ফলের রস খেতে হবে

শরীরে ডিহাইড্রেশন এড়াতে জলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে এই সময়ে টাটকা ফলের রস খেতে পারেন। এই সময়টাতে যত বেশি পরিমাণ ফলের রস বা তরল জাতীয় খাবার খাবেন তত শরীর থেকে বের হয়ে আসবে ও ফুসফুস সুস্থ থাকবে।

প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে

নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার জন্য অবশ্যই মৌসুমী শাকসবজি খেতে হবে। এই সময়টাতে পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, মৌসুমী সবজি গুলো খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনসহ অন্যান্য অনেক উপাদান যা শরীরকে রোগের সাথে লড়াই করার শক্তি যোগায় ও ফুসফুস কে সুস্থ রাখে।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই কার্যকারী। এগুলো শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে।

তাছাড়া নিউমোনিয়া তে আক্রান্ত হলে আরো কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। এই খাবারগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। নিউমোনিয়ার সমস্যা কমাতে আদা, লেবু, হলুদ, দই ও মধু খাবার তালিকায় রাখা যেতে পারে।

শেষ কথা, নিউমোনিয়া রোগ হলে কখনোই অবহেলা করা যাবে না। বিশেষ করে শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুকে সুস্থ করে তুলতে হবে।

সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া না গেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই অবশ্যই সবাইকে নিউমোনিয়া রোগ থেকে সচেতন থাকতে হবে।

Sharing Is Caring:

This website mainly provides information on exercise, fitness, wellness, healthy living, etc. in the Bengali language.

Leave a Comment