চর্ম রোগ আমাদের অনেকের কাছে খুবই বিরক্তিকর। এই রোগটি একবার এলে যেন যেতেই চায় না। আমরা অনেকেই চর্মরোগকে তেমন গুরুত্বের সাথে নিই না। যার কারণে আমরা পরবর্তীতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে থাকি।আজকের পোস্টে চর্মরোগ কেন হয়, চর্ম রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, ও চর্ম রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ
চর্মরোগ কেন হয়?
চর্ম রোগ সাধারণত দুইটি কারণে হতে পারে। শরীরের ভেতরে কিছু কারণে চর্ম রোগ হতে পারে আবার বাইরের আবহাওয়ার কারণে চর্মরোগ হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে জিনগত কারণে চর্ম রোগের সমস্যাটি হতে পারে।
অর্থাৎ পরিবারের কারো হয়তো অতীতে চর্মরোগ ছিলো তাই পরিবারের সদস্যদের এখন হচ্ছে। আবার অনেকের মতে বাইরের জল হাওয়া ও ধুলাবালি চর্ম রোগের জন্য দায়ী। আমাদের ত্বক শরীরের সব অঙ্গ গুলোকে বাঁচিয়ে রাখে।
তাই বাইরের ঝড়ঝাপটা হলে অবশ্যই একে সামলাতে হয়। এর কারণে অনেক সময় জলবায়ু সূক্ষ্ম হলে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া যারা অনেক ময়লা মাটি ও ধুলাবালি রয়েছে এমন জায়গায় কাজ করে থাকেন তাদের এই সমস্যাটা হতে পারে।
চর্মরোগ কিসের অভাবে হয়?
চর্মরোগ কিসের অভাবে হয় বা চর্মরোগ জনিত সমস্যা কোন ভিটামিনের অভাবে হয়ে থাকে এই বিষয়ে অনেকেরই জানা নেই। ভিটামিন এ এর অভাবে আমাদের শরীরের চামড়া অনেকটা খসখসে হয়ে যায়।
তাছাড়া চামড়ার চুলের গোড়ায় গোটা গোটা দাগের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। ভিটামিন ডি এর অভাবে চর্ম রোগের সমস্যা বাড়তে পারে তবে কখনোই এর সাথে সরাসরি চর্ম রোগের যোগ সূত্র নেই।
চর্ম রোগের সমস্যা সাধারণত শীতকালে বেশি দেখা যায়। শীতকালে যাদের অপুষ্টি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা তীব্র আকার ধারণ করে থাকে। যাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব রয়েছে তাদের চর্ম রোগের সমস্যাটা হতে পারে।
চর্ম রোগের চিকিৎসা কি?
চর্মরোগ হলে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। তবে অনেকেই এই রোগটাকে খেয়ালী করে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকেন।
অনেকেই চর্ম রোগের ঔষধের নাম জানতে চান। নিচে চর্ম রোগের ঔষধ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়া হলোঃ
বায়ো প্লাজেন ২০ খেতে পারেন?
চর্ম রোগের চিকিৎসায় এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্করা এই ওষুধটি চারটি ট্যাবলেট তিন ঘন্টা পর পর দিনে চারটি খেতে পারেন। আর শিশুদের ক্ষেত্রে দুইটি টেবলেট তিন ঘন্টা পর পর চারবার খেতে হবে।
এই ট্যাবলেট গুলো খাওয়ার আধঘন্টা আগে বা আধঘন্টা পরে অন্যান্য খাবারগুলি খেতে হবে। এই ওষুধগুলো কিছুদিন খাওয়ার মাধ্যমেই উন্নতি দেখতে পারবেন। উন্নতি দেখতে পেলে খাওয়া বাদ দিতে পারেন।
চর্ম রোগ থেকে মুক্তির উপায়?
চর্ম রোগের সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই সঠিক সময়ে অবশ্যই চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
অর্থাৎ নিয়মিত সুষম খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া চর্মরোগ থাকাকালীন সময়ে আমাদের ত্বক সকল সময় গরম পানি ও নিম পাতা দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করতে হবে। চর্মরোগের সমস্যা যদি খুবই তীব্রতর হয়ে থাকে।
তাহলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে সাধারণত চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সবথেকে কার্যকারী চিকিৎসা।
কেননা অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ চর্ম রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করে খুব সহজেই এই সমস্যাটা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারবে।
চর্ম রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা?
চর্ম রোগের ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা রয়েছে যা প্রথম অবস্থায় দারুন কার্যকারী হতে পারে। নিচে চর্ম রোগের কিছু ঘরোয়া প্রতিকার তুলে ধরা হলঃ
- গোসলের সময় পানির সাথে নিম পাতা গরম করে নিয়ে সেই পানি গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে গোসল করলে চর্ম রোগের সমস্যায় ভালো উপকার পাওয়া যায়।
- সকালে খালি পেটে নিম পাতা খেলে চর্মরোগ সারাতে তা দারুন কার্যকরী হতে পারে।
- মুলা পাতার রস যেকোনো ধরনের চর্ম রোগের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে
- চর্ম রোগে আপেলের রস লাগালে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
- যাদের চর্ম রোগের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন একটি অথবা দুইটি করে আপেল খেতে পারেন।
চর্ম রোগের সমস্যায় ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে এই উপাদানগুলো ব্যবহার করা যায়। এই উপাদান গুলি ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই চর্ম রোগের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
চর্ম রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা?
চর্ম রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা খুবই কার্যকরী হতে পারে। চর্মরোগ হলে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা এই সমস্যা কমিয়ে আনা যায়ঃ
- সরিষার তেলে রসুনের কয়েকটি কুড়ি মিশিয়ে গরম করে ত্বকে লাগালে চুলকানি ও খোসপাচড়ার সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
- হলুদ পিষে তিলের তেলে মিশিয়ে শরীরে মালিশ করলে চর্ম রোগের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
- করলা ফলের রস খেলে শরীরের রক্ত পরিশুদ্ধ হয়ে থাকে। যার ফলে চুলকানি ও ত্বকের প্রদাহ জনিত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
- তাছাড়া দাগ ও চুলকানির মত সমস্যার দূর করতে করলার রস তোকে লাগানো যেতে পারে।
- প্রতিদিন সকালে এক কাপ গাজরের রস পান করলে চর্মরোগ সেরে যায়। তাই যাদের চর্ম রোগের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত গাজরের রস সেবন করতে পারেন।
- পালং শাক ও গাজরের রস সমপরিমাণ দুই চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে সব ধরনের চর্ম রোগের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
চর্মরোগ কি ছোঁয়াচে রোগ?
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি সতর্ক হয়ে যায় তখন চর্ম রোগের সমস্যাটি দেখা দিয়ে থাকে। অনেকে বলে থাকেন যে চর্মরোগ একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে ছড়াতে পারে।
তবে এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অনেক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে চর্মরোগ কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। তাই চর্মরোগ আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেখে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
চর্ম রোগের মলমের নাম?
চর্ম রোগ হলে ডাক্তার অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের কে মলম ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা এই সকল মলম গুলি ব্যবহারের মাধ্যমে চর্ম রোগের দাগ বা চুলকানির সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
নিচে চর্ম রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কয়েকটি মলমের নাম উল্লেখ করা হলঃ
- লুকাজল ক্রিম
- কমবিসিড ক্রীম
- ফ্যাসিড এইচসি ক্রিম
- কমবিডার্ম ক্রিম
- টপিকর্ট ক্রিম
এই মলম গুলো সাধারণত ত্বকের চুলকানি বা প্রদাহের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই এই ক্রিম গুলি ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
চর্মরোগের সাবানের নাম কি?
অনেকেই চর্ম রোগ দূর করার জন্য সাবান খুঁজে থাকেন। অর্থাৎ চর্মরোগ থাকা অবস্থায় কোন সাবান ব্যবহার করলে ত্বকের জন্য ভালো হবে এই বিষয়ে জানতে চান। চর্মরোগ থাকাকালীন সময়ে ketoscalp soap সাবানটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
চর্ম রোগের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের নাম?
চর্ম রোগের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের নাম কি এই বিষয়ে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। চর্ম রোগের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের নাম ফ্লুগাল ট্যাবলেট। তবে এই ওষুধটি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
শেষকথা, চর্মরোগ হলে কখনো এটাকে অবহেলা করা উচিত নয়। কেননা চর্ম রোগের সমস্যা একসময়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
তাই চর্মরোগ হয়ে থাকলে নিয়মিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলো ব্যবহার করার পাশাপাশি একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চর্ম রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চর্মরোগের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।