ব্যায়াম কাকে বলে | ব্যায়াম কত প্রকার ও কি কি

ব্যায়াম হলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা বা নির্দিষ্ট শারীরিক কার্যক্রম।ব্যায়ামএটি শরীরকে শক্তিশালী, সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। আজকের আর্টকেল ব্যায়াম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ব্যায়াম কি?

ব্যায়াম এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীরের পেশি, হাড়, অস্থিসন্ধি, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত হয় এবং শরীরকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখা যায়।

ব্যায়ামের মূল লক্ষ্য?

  • শরীরকে ফিট রাখা।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।
  • মানসিক প্রশান্তি অর্জন।
  • শারীরিক শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি।
  • উদাহরণঃ হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম, সাঁতার, ওজন উত্তোলন ইত্যাদি।
  • ব্যায়াম শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে | চোখ উঠার লক্ষণ

ব্যায়াম কত প্রকার ও কি কি?

ব্যায়াম মূলত ৪ প্রকার, যা শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলোঃ

১. কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম (Cardiovascular Exercise)

এই ব্যায়াম হার্ট এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

উদাহরণ

  • দৌড়ানো
  • হাঁটা
  • সাইক্লিং
  • সাঁতার
  • জগিং

২. পেশি শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম (Strength Training)

এটি পেশিকে শক্তিশালী ও টোনড করতে সহায়তা করে।

উদাহরণ

  • ওজন তোলা
  • পুশ-আপ
  • স্কোয়াট
  • ডেডলিফট

৩. নমনীয়তার ব্যায়াম (Flexibility Exercise)

এই ব্যায়াম পেশি ও অস্থিসন্ধিকে নমনীয় করে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়।

উদাহরণ

  • স্ট্রেচিং
  • যোগব্যায়াম (Yoga)
  • পাইলেটস

৪. ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম (Balance Exercise)

এটি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, বিশেষত বয়স্কদের জন্য উপকারী।

উদাহরণঃ

  • এক পায়ে দাঁড়ানো
  • তাড়িৎ পদক্ষেপের চর্চা (Tai Chi)
  • ব্যালেন্স বোর্ড চর্চা

উল্লেখযোগ্য বিষয় কিছু বিষয়?

  • অনেক ব্যায়াম একইসঙ্গে একাধিক প্রকারের সুবিধা দেয়।
  • কার্ডিও ও শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম নিয়মিত করার পাশাপাশি নমনীয়তা ও ভারসাম্যের ব্যায়াম করাও গুরুত্বপূর্ণ।
  • বয়স, শারীরিক অবস্থা ও লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যায়ামের ধরন নির্বাচন করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ এফান ক্রিম এর কাজ কি | afun cream এর ব্যবহার

ব্যায়াম এর ইতিহাস?

ব্যায়াম (Exercise) এর ইতিহাস একটি দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ পরম্পরা যা মানব সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। ব্যায়াম শুরু হয়েছিল প্রাকৃতিক কাজের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে এটি উন্নত ও পদ্ধতিগতভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।

প্রাচীন যুগে ব্যায়াম

১. হিস্টোরিক্যাল রেকর্ডস

প্রাচীন সভ্যতায় শারীরিক শক্তি এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ব্যায়ামের গুরুত্ব ছিল। প্রাচীন গ্রীক এবং রোমান সভ্যতার মানুষেরা শারীরিক শক্তির গুরুত্ব বুঝেছিল এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক প্রশিক্ষণ ও কসরত করত।

গ্রীক সভ্যতা

প্রাচীন গ্রীসে অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে ব্যায়ামের একটি অন্যতম ভূমিকা ছিল। অলিম্পিক গেমস শুরু হয়েছিল ৭৭৬ খ্রিষ্টপূর্বে, যেখানে বিভিন্ন শারীরিক খেলা ও কসরত ছিল। গ্রীকরা বিশ্বাস করত যে শরীরের সুস্থতা মনের সুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

রোমান সভ্যতা

রোমানরা শারীরিক প্রশিক্ষণকে সামরিক দক্ষতার অংশ হিসেবে দেখত। তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির পাশাপাশি, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও ব্যায়াম করত।

২. ভারতীয় সংস্কৃতি ও যোগব্যায়াম

ভারতীয় সভ্যতায় শারীরিক এবং মানসিক উন্নতির জন্য যোগব্যায়াম (Yoga) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাচীন যুগে ভারতীয়রা শরীরের নমনীয়তা, শক্তি এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখতে বিভিন্ন যোগব্যায়াম পদ্ধতি ব্যবহার করত। এসব পদ্ধতি আজও পৃথিবীজুড়ে জনপ্রিয়।

মধ্যযুগ (Medieval Period)

মধ্যযুগে ব্যায়ামের ধারণা কিছুটা ম্লান হয়ে যায়, কারণ তখনকার সমাজে যুদ্ধ এবং কৃষিকাজের বাইরে শারীরিক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব কম ছিল। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে শারীরিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা ছিল, এবং যুদ্ধবিধি, আর্চারি এবং অস্ত্রশস্ত্র প্রশিক্ষণ ব্যায়ামের অংশ ছিল।

আধুনিক যুগ (Modern Era)

১. ১৮শ শতক

১৮শ শতকের শেষে এবং ১৯শ শতকের প্রথম দিকে ব্যায়ামের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ইউরোপে শারীরিক শিক্ষা ও ব্যায়াম সম্পর্কে নতুন ধারণা আসতে থাকে।

ফ্রেডরিক জিমনাস্টিক্স

১৮১১ সালে জার্মান শিক্ষক ফ্রেডরিক লুডভিগ জাম্বো আধুনিক জিমনাস্টিক্সের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। তার পরিকল্পিত শারীরিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি আধুনিক ব্যায়াম ও শারীরিক শিক্ষা কোর্সের ভিত্তি ছিল।

চার্লস অ্যাটলেটিকস

১৯শ শতকের শেষের দিকে বিভিন্ন স্পোর্টস ও অ্যাটলেটিক্সের উন্নতি ঘটতে শুরু করে, যার মাধ্যমে ব্যায়ামের আরেকটি দিক উঠে আসে।

২. ২০শ শতক

নতুন ব্যায়াম পদ্ধতি

২০শ শতকের প্রথম দিকে, শরীরচর্চা ও ব্যায়াম পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এই সময়ে হালকা ব্যায়াম, জিমনাস্টিক্স, যোগব্যায়াম, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, এবং বিভিন্ন ফিটনেস প্রোগ্রাম জনপ্রিয় হতে থাকে।

ফিটনেস শিল্পের বিকাশ

১৯৫০ এর দশকে, আমেরিকাতে ফিটনেস সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এবং জিম এবং ট্রেনিং ক্লাবগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়।

অলিম্পিক গেমস ও অন্যান্য স্পোর্টস

অলিম্পিক গেমস এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খেলাধুলার মাধ্যমে ব্যায়ামের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বাড়ে।

৩. বর্তমান যুগ

আজকের দিনে ব্যায়াম একটি বিশ্বজনীন কার্যকলাপ। নানা ধরনের ব্যায়াম যেমন, কার্ডিও, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, যোগব্যায়াম, পাইলেটস, ক্রসফিট ইত্যাদি এখন অনেকের দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত। প্রযুক্তির সাহায্যে, যেমন মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন কোর্স, ফিটনেস ট্র্যাকিং ডিভাইস ইত্যাদি, ব্যায়াম আরও জনপ্রিয় ও সহজ হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

ব্যায়ামের ইতিহাসের প্রধান পয়েন্টস?

প্রাচীন সভ্যতা

গ্রীক ও রোমানরা ব্যায়ামকে গুরুত্ব দিয়েছিল।

ভারতীয় যোগ ব্যায়াম

প্রাচীন ভারতে যোগব্যায়াম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হত।

১৮শ-১৯শ শতক

আধুনিক শারীরিক শিক্ষা ও জিমনাস্টিক্সের বিকাশ।

২০শ শতক

ফিটনেস আন্দোলন এবং আধুনিক ব্যায়ামের জনপ্রিয়তা।

মোট কথা ব্যায়াম এখন বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে, প্রতিটি বয়সী মানুষের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এখন এটি শুধুমাত্র শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে নয়, বরং মানসিক শান্তি এবং জীবনযাত্রার গুণগত মান উন্নত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ব্যায়াম করার উপকারিতা ও অপকারিতা?

ব্যায়াম করার রয়েছে অনেক উপকারিতা, তবে ভুল পদ্ধতিতে বা অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে কিছু অপকারিতাও হতে পারে। নিচে উভয় দিক তুলে ধরা হলোঃ

ব্যায়ামের উপকারিতা?

শারীরিক উপকারিতা

হৃদযন্ত্রের সুস্থতা

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের ঝুঁকি কমায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত ওজন কমায় এবং স্থূলতা প্রতিরোধে সহায়ক।

পেশি ও হাড় শক্তিশালী করা

পেশি গঠন করে এবং হাড় মজবুত রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

শরীরকে রোগ প্রতিরোধে সক্ষম করে।

শক্তি বৃদ্ধি

ক্লান্তি কমিয়ে শরীরকে চনমনে রাখে।

উন্নত ঘুম

নিয়মিত ব্যায়াম করলে ঘুম সহজে হয় এবং ঘুমের মান ভালো হয়।

অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ

হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে অস্থির ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

মানসিক উপকারিতা

মানসিক চাপ কমায়

শরীরে এন্ডরফিন (হ্যাপি হরমোন) নিঃসরণ করে মানসিক চাপ হ্রাস করে।

মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

শারীরিক সুস্থতা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

বিষণ্নতা ও উদ্বেগ কমায়

মনের শান্তি বজায় রাখে।

আরও পড়ুনঃ সিভিট ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম | সিভিট খাওয়ার উপকারিতা

ব্যায়ামের অপকারিতা?

শারীরিক অপকারিতা

পেশি ও হাড়ের আঘাত

সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করলে পেশি বা হাড়ে চোট লাগতে পারে।

অতিরিক্ত ক্লান্তি

অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে শরীরে ক্লান্তি ও অবসাদ দেখা দিতে পারে।

হৃদযন্ত্রের সমস্যা

অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ পড়তে পারে।

জয়েন্টের ক্ষতি

ভুলভাবে বা অতিরিক্ত ভার উত্তোলনে অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া

অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে।

মানসিক অপকারিতা

চাপ বা নির্ভরশীলতা

অতিরিক্ত ব্যায়ামের প্রতি আসক্তি মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

সম্ভাব্য বিষণ্নতা

কাঙ্ক্ষিত ফল না পেলে হতাশা বা বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে।

সতর্কতা

  • সঠিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করুন।
  • নিজের শারীরিক সামর্থ্য বুঝে ব্যায়ামের মাত্রা নির্ধারণ করুন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং অতিরিক্ত ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।

শেষ কথা

ব্যায়াম একটি ভালো অভ্যাস, তবে তা নিয়মিত এবং সঠিকভাবে করলেই সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া সম্ভব।

Leave a Comment