ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয় | ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসা

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আমরা জানি যে ইউরিন ইনফেকশনে এটি একটি সাধারণ সমস্যা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য অভ্যাস ও দূষণের কারণে এই ইউরিন ইনফেকশনটি সৃষ্টি হয়ে থাকে।ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয়আসুন আমরা জেনে নেই এই ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম, ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ, ইউরিন ইনফেকশনের কারণ, ও ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

ইউরিন ইনফেকশন কি?

মূত্র তন্ত্রের চারটি অংশের যে কোন অংশ যদি জীবানু দিয়ে সংক্রমিত হয়, তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ইনফেকশন অথবা ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়। এটি নারী পুরুষ সকলেরই হতে পারে।

তবে এই ইউরিন ইনফেকশনটি নারীদের মধ্যে সংক্রমনের হাড় বেশি। কারণ তাদের মূত্রনালী পায়ুপথের খুব কাছাকাছি থাকে।তাই জীবাণু প্রবেশ করে ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়াই।

তবে ইউরিন ইনফেকশনটি কোন মারাত্মক অথবা ক্ষমতাধারী ইনফেকশন নয় এটি সাধারণ একটি ইনফেকশন।

ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ?

ইউরিন ইনফেকশনের অনেকগুলো লক্ষণ আছে। আসুন আমরা ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণগুলো জেনে নেইঃ

  • গায়ে জ্বর থাকে এবং মাঝে মাঝে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।
  • প্রসবের রং বদলে যায়।
  • প্রসাবের সময় মূথনালীতে জ্বালাপোড়া অথবা ব্যথা করবে।
  • তলপেটে ব্যথা অথবা প্রসাবের সময় ব্যথা করবে।
  • কিছুক্ষণ পর পর প্রসাবের বেগ হবে এবং প্রসাবের শেষ হওয়ার পরে মনে হবে আবার প্রস্রাব হবে।
  • বমি বমি ভাব হবে বমিও হতে পারে, শরীর দুর্বল লাগবে এবং খাওয়ার রুচি কমে যাবে।
  • প্রসাবে অস্বাভাবিক দুর্গন্ধ থাকবে ইত্যাদি এই সমস্ত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে।

ইউরিন ইনফেকশন এর কারণ?

ইউরিন ইনফেকশনের অনেকগুলো কারণ রয়েছে, তার ভিতর কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো, মূত্রপথে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, মলত্যাগের সময় পায়ু পথ থেকে ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করলে?

প্রসাব লাগার পরে অনেকক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থাকলে, মলত্যাগের পর পায়ু পথের পেছন থেকে সামনের দিকে টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করলে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম?

অথবা ডাইবেটিস ও ক্যান্সার রয়েছে, শারীরিক সম্পর্কের সময় সুরক্ষা বিধি মেনে না চললে, যারা হাই কমোড ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে এই ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এছাড়া মাসিকের রাস্তায় সঠিকভাবে সেনেটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করতে না পারলে এই ইউরিন ইনফেকশনটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমরা উপরের লিখিত ইউরিন ইনফেকশনের কারণগুলো সঠিকভাবে ও সঠিক নিয়মে করার চেষ্টা করবো তাহলে এই ইউরিন ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা পাবো।

ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধের নিয়ম?

ইউরিন ইনফেকশনের প্রতিরোধের অনেকগুলো নিয়ম রয়েছে তার ভিতরে কিছু নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমনঃ

  • দিনে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করতে হবে।
  • বেশি পানি পান করলে বেশি প্রসাব হবে, এতে করে প্রসাবের মাধ্যমে শরীরে থাকা সব ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যাবে।
  • টয়লেট টিস্যু ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • এছাড়া পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে।
  • হালকা গরম পানিতে গোসল করলে ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়।
  • কোন প্রসাব আটকে রাখা যাবে না।
  • ঢিলেঢালা সুতির কাপড় পড়তে হবে, বেশি টাইট কাপড় ব্যবহার করা যাবে না।
  • যাদের বারবার ইনফেকশন হয় তারা পুকুরের পানি অথবা নদী -নালার পানিতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • শারীরিক সম্পর্কের আগে অথবা পরে প্রস্রাব করে নিতে হবে।
  • নিয়মিত গোসল করতে হবে এবং নারীদের ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ,ই,ও সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসার নিয়ম?

যেহেতু ইউরিন ইনফেকশন একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক রোগ তাই এটির কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।

তাছাড়া এই ইউরিন ইনফেকশনটি চিকিৎসা করতে দেরি হয়ে গেলে কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পার। ইউরিন ইনফেকশন টি মাইক্রোস্কোপিক ও ইউরিন কালচার ফেনসিটিভিটি পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে।

বারবার ইনফেকশন হলে দীর্ঘ মেয়াদি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। ইউরিন ইনফেকশনের যেকোনো লক্ষণ যদি আমাদের মাঝে দেখা যায়।

তাহলে শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে না হলে এই ইনফেকশনটি কিডনিতে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউরিন ইনফেকশনের ঔষুধের নাম?

ইউরিন ইনফেকশনের অনেকগুলো ঔষধ আছে সব ওষুধ ইউরিন ইনফেকশনের রোগের জন্য খুবই কার্যকারী। যেমনঃ

  • ট্রাইমেথোপ্রিম / সালফামেথোক্সাজোল
  • সেফট্রিয়াক্সোন।
  • নাইট্রোফুরানটয়েন।
  • ফসফোমাইসিন।
  • সেফট্রিয়াক্সোন

এই ঔষধ গুলো ইউরিন ইনফেকশনের জন্য খুবই কার্যকরী ঔষধ। আমাদের কারো শরীরে যদি ইউরিন ইনফেকশনের কোন লক্ষণ দেখা যায়।

তাহলে অবশ্যই আমরা খুবই দ্রুততার সঙ্গে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ সেবন করবো। তাহলে এই সমস্ত ঔষধের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না।

ইউরিন ইনফেকশন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া?

ইউরিন ইনফেকশনের অনেক ধরনের ঔষধ আছে এবং এ সমস্ত ঔষধ গুলা সেবনে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কয়েক দিনের মধ্যে নিজেকে সংশোধন করা হতে পারে। তাই এটি উদ্বেগের একটি প্রধান কারণ নয়।

গুরুতর স্টোম্যাচ, মেজাজ সুইং,ক্লান্তি হতে পারে এমন কিছু প্রধান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো হলো- জন্ডিস হওয়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, খামির সংক্রমণ হওয়া অন্ত্রের প্রদাহ, রক্তাক্ত মল এবং হলুদ প্রসাব হওয়া।

ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধ গুলো অতিরিক্তমাত্রায় অথবা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করলে এ সমস্ত সমস্যা গুলো সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য কোন ঔষধ সেবনের আগে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও তার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।

এবং এ সম্বন্ধে যারা জানে না তাদেরকেও আমরা জানিয়ে দেবো। নিজে সুস্থ থাকবো এবং অন্যকেও সুস্থ রাখার চেষ্টা করব।

ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসা?

ইউরিন ইনফেকশন হলে এর কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আছে যেগুলো করলে ইনফেকশনটি ভালো হতে পারে। যেমনঃ

প্রতিদিন এক কাপ করে আনারসের রস খেতে হবে।আনারসে আছে ব্রোমেলাইন নামক একটি এনজাইম যা ইউরিন ইনফেকশনে কার্যকারী। এছাড়া বেকিং সোডা ইউরিন ইনফেকশন কে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

আধা চামচ ব্রেকিং সোডা এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে দৈনিক এক থেকে দুইবার পান করুন তাহলে প্রসাবের সময় লিভার ব্যথা কমে যাবে। এভাবেই ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো করা যেতে পারে।

ইউরিন ইনফেকশন হলে কি খাওয়া উচিত?

ইউরিন ইনফেকশন হলে অনেক রকম খাবার আছে যেগুলো খেলে আমাদের শরীর থেকে ইউরিন ইনফেকশনটি নিরাময় হতে সহযোগিতা করে। এ খাবারগুলো হচ্ছে, প্রতিনিয়ত এক গ্লাস করে দৈনিক একবার আনারসের রস খাওয়া উচিত।

ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রতিদিন ৫ হাজার মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন এজন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ওষুধের পাশাপাশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজ। ভিটামিন সি মূত্রথলিকে ভালো রাখে এবং প্রসাবের সময় জালাভাব কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়া ভিটামিন সি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ধ্বংস করে। এজন্য আমাদের প্রতিনিয়ত কিছু ফল খাওয়া উচিত যেমন, আপেল, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, বেদেনা, পেয়ারা ইত্যাদি।

আর যে সমস্ত শাক সবজি খাওয়া উচিত সেগুলো হলোঃ পালং শাক, লালশাক ইত্যাদি শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন।এই সমস্ত খাদ্য খাবার খেলে ইউরিন ইনফেকশন আমাদের শরীরে বাসা বাঁধতে পারবে না।

শেষ কথা, আশা করি ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয়, ইউরিন ইনফেকশন হলে কি করা উচিত ও ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।

তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

Sharing Is Caring:

This website mainly provides information on exercise, fitness, wellness, healthy living, etc. in the Bengali language.

Leave a Comment