অনেকেই ঘুম আসার জন্য প্রার্থনা করে থাকেন আবার এমন অনেকেই আছেন যারা অতিরিক্ত ঘুম কমানোর জন্য নানান পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন।ঘুম না আসা যেমন আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর তেমনি অতিরিক্ত ঘুমানো আমাদের শরীরের জন্য ভালো না। অতিরিক্ত ঘুমের বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো স্বাভাবিক।
এর থেকে যখন কেউ বেশি ঘুমান তখন সেটাকে অতিরিক্ত ঘুম হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আজকের পোস্টে অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় এবং অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন।
অতিরিক্ত ঘুম হওয়ার কারণ?
সাধারণত কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা নিদ্রাহীনতার মত সমস্যাগুলোর সৃষ্টি করে থাকে যার কারণে শরীর বেশি ঘুমাতে বাধ্য হয়। তাছাড়া অনেকের ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রয়েছে যার কারণে তাদের বেশি ঘুমানো লাগে।
শরীর কোন রোগে অসুস্থ হলে তাদের অনেক বেশি ঘুম হয়ে থাকে পরবর্তীতে যখন শরীর সুস্থ হয়ে যায় তখন ঘুমের পরিমাণও কমে যায়। তাছাড়া যাদের শরীর দুর্বল তাদের অনেক বেশি পরিমাণে ঘুম হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের স্বাভাবিক হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। বিশেষ করে শরীরের ইনসুলিন নিয়ন্ত্রিত হরমোন এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত যারা ঘুমিয়ে থাকেন তাদের শরীর অন্যদের তুলনায় বেশি ক্লান্ত হয়ে থাকে এবং এরা বেশিরভাগ সময়ই ক্লান্তি দূর করার জন্য জাঙ্ক ফুড সহ উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন।
যার ফলে আমাদের শরীরে শর্করার মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তাই বেশি ঘুমানো কখনো আমাদের শরীরের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না।
অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ?
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ভালো এবং পরিপূর্ণ ঘুম সকলেরই প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যাটা ঠিক তখনই বেধে যায় যখন কোন ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমান।
আর এটাকেই বলা হয় চিকিৎসার ভাষায় অতিরিক্ত ঘুম। অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই খারাপ এবং এই ঘুমগুলো বেশ কয়েকটি রোগের লক্ষণ হিসেবেও প্রকাশ পেয়ে থাকে।
আমাদের শরীরে সেরাটোনিন হরমোন এর সাহায্যে ঘুম নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের এই হরমোনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে।
যা সাধারণত নিউরোট্রান্সমিটারকেও বাধা দিয়ে থাকে এবং দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ব্যথা হয়ে থাকে।অতিরিক্ত ঘুম আমাদের ডিপ্রেশন এর কারণ হতে পারে।
তাছাড়া অতিরিক্ত ঘুমের কারণে আমাদের পেশি এবং স্নায়ু অনেক শক্ত হয়ে যায় যার ফলে শরীর শারীরিক চাপ সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে নারীদের ফার্টিলিটির ওপর প্রভাব ফেলে।
তাছাড়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে ফার্টিলাইজেশন থেরাপিতে থাকা নারীরা যারা সাত থেকে আট ঘণ্টা করে ঘুমান তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি। তাছাড়া যারা ৬ ঘন্টা বা তার কুম ঘুমান তাদের সন্তান ধারণের ক্ষমতা ৪৬ শতাংশ।
আর যারা নয় থেকে ১১ ঘণ্টা করে ঘুমান তাদের সন্তান ধারণের ক্ষমতা থাকে ৪৩ শতাংশ। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অতিরিক্ত ঘুম কে বলা হয়ে থাকে হাইপারসনোমিয়া।
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়?
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির জন্য বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। উক্ত ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে খুব সহজেই অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কিভাবে অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পাবেন নিচে সেই সম্পর্কে কিছু কিছু দেওয়া হলোঃ
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট টাইমে ঘুমানোর চেষ্টা করুন
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট টাইমে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে যাদের অতিরিক্ত ঘুমের মতো সমস্যা রয়েছে। এতে করে আপনার শরীর বুঝা যাবে কখন আপনি ঘুমান।
অর্থাৎ সেই সময়টাতে মস্তিষ্ককে সিগনাল দিবে যে ঘুমানোর সময় চলে এসেছে। তাহলে শরীর ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং গভীর ঘুমে শরীর আসক্ত হয়ে যাবে।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট টাইমে ওঠার অভ্যাস করতে হবে প্রয়োজনে অ্যালার্ম বাজিয়ে রাখতে হবে
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি টাইমে ঘুম থেকে উঠে তাদের বেশি ঘুমানোর সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় কম।
তাছাড়া প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে গেলে এবং নির্দিষ্ট টাইমে ঘুম থেকে উঠলে শরীর তার সাথে মানিয়ে নেয়। যার ফলে আমাদের অতিরিক্ত ঘুমানোর প্রবণতা অনেকাংশে কমে যায়।
দ্রুত সকালের নাস্তা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা সকালে ঘুম থেকে দেরিতে ওঠে। এদের মধ্যে অনেকেই আবার সকালের নাস্তা টাও করেন না। যার ফলে আমাদের শরীর বাড়তি এনার্জি টা পায়না এবং অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
এই সকল ব্যক্তি অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে থাকে এবং শরীর দুর্বল থাকার কারণে বাড়তি ঘুমের দরকার হয়ে থাকে । তাই অবশ্যই সকালে ঘুম থেকে উঠার ৩০ মিনিটের ভিতরে নাস্তা করে ফেলতে হবে।
নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে
নিয়মিত শরীর চর্চা আমাদের শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের স্বাভাবিক হরমোনের কার্যক্রম ঠিক রাখে। তাছাড়া যাদের শরীর দুর্বল তারা নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরকে শক্তিশালী করে তুলতে পারেন।
আর দুর্বল শরীরে সাধারণত ঘুম বেশি হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করলে অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
অতিরিক্ত ঘুম কমানোর খাবার?
অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা যারা রয়েছে তারা ঘুম কমানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেতে পারেন। এই খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে দ্রুত ঘুমের সমস্যা রোধ হবে এবং অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পাবেন।
যাদের দিনের বেলায় বেশি ঘুমের প্রবণতা রয়েছে তারা চা কফি খেতে পারেন। এতে করে দিনের বেলার ঘুম পালাবে। কেননা চা-কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন নামের এক ধরনের উপাদান যা সাধারণত স্নায়ুকে উত্তেজিত করে ঘুম দূর করতে সাহায্য করে।
তাছাড়া অতিরিক্ত ঘুম কমানোর জন্য গ্রিন টি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার মাঝেমধ্যে খেতে পারেন তাহলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা দূরে থাকা যাবে।
অতিরিক্ত ঘুম কমানোর ঔষধ?
অতিরিক্ত ঘুম সাধারণত ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে দূর করা যায়। তাছাড়া উপরে যে সকল পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সঠিকভাবে পালন করলে অবশ্যই অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা দূর হবে।
তারপরেও যদি সমস্যাটি সমাধান না হয়ে থাকে তাহলে একজন ভাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।
শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় বা কিভাবে খুব সহজেই অতিরিক্ত ঘুম দূর করা যায় উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
তাই যাদের অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।