আসলামুআলাইকুম প্রিয় বন্ধুরা আপনারা জানেন যে গ্যাস খুব ভয়ংকর একটি রোগের নাম। আমাদের দেহে গ্যাস হলে এসিডিটি বদহজম, অম্বল এবং পেটে ব্যথার মত সমস্যা দেখা দেয়।অনেকেরই আবার শুধু গ্যাসের কারণেই পেট ফুলে থাকে। এর ফলে ভুড়ি না থাকলেও পেট অনেক মোটা দেখা যাই । তাহলে চলুন দেখে নেই গ্যাস হলে কোন কোন সমস্যা দেখা দেয়।
গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ?
সব মানুষেরাই গ্যাসের সমস্যা রয়েছে কারো কম আবার কারো বেশি। গ্যাসের সমস্যা হওয়ার কারণ নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- অনিয়মিত খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
- পানি কম খেলে এই গ্যাসের সমস্যাটা অতিরিক্ত পরিমাণে দেখা দেয়।
- কোল ড্রিংকস জাতীয় ঠান্ডা পানীয় পান করলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
- ধুমপান করলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়
- তেলেভাজা খাবার খেলে এবং অধিক পরিমাণের তৈলাক্ত খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
- রাতে খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
- অনেক বেশি পরিমাণের মাংস খেলেও গ্যাসের সমস্যাটি দেখা দেয়।
- এই সমস্ত কারণগুলোর জন্যই মূলত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাটি দেখা দিয়ে থাকে।
গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণসমূহ?
আমাদের দেহে সাধারণত যে গ্যাসের সমস্যাটি দেখা যাই। এই গ্যাসের লক্ষণ অনেক আছে। লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- পেটে জ্বালাপোড়া অনুভব হওয়া।
- অল্প খাবার খাওয়ার পরেও পেট পূর্ণ হয়ে গেছে মনে করা।
- মাঝে মাঝে মাথা ঘুরে ওঠা।
- বমি বমি ভাব হওয়া।
- পেট সব সময় ফেপে থাকা।
- পেটের বাম পাশের উপরিভাগে ব্যথা অনুভব হওয়।
- খাবারে অরুচি দেখা দেয়া।
মূলত এই সমস্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলেই বুঝে নেবেন যে আপনি গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গ্যাসে যে সমস্ত রোগীরা আক্রান্ত হয়েছেন তারাই জানেন যে গ্যাস কতটুকু ভয়ানক এবং কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
আপনাদের ভিতরে যদি কারো গ্যাসের সমস্যা থেকে থাকে আর এই লক্ষণগুলো যদি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করুন এবং এই মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পান।
গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে করণীয়?
আমাদের শরীরকে আমরা যদি সুস্থ ও সবল রাখতে চাই এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই। তাহলে আমাদের কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে যেমনঃ
- নিয়মিত ও সময়মত খাবার খেতে হবে।
- অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- প্রতিদিন পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে।
- অতিরিক্ত ঝাল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত খালি পেটে পানি পান করতে হবে এবং ইসুব গুল ভিজানো পানি পান করতে হবে।
এগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে, এক দিনে বেশি মাংস খাওয়া একেবারে চলবেনা। একদিনে সর্বোচ্চ ১৩০ থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস খাওয়া যাবে।
ধুমপান অ্যালকোহল এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে নিজেকে অবশ্যি বিরত রাখতে হবে। রাতে খাবার খাওয়ার পর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে, এরপর ঘুমাতে হবে।
একই সঙ্গে প্রতি রাতে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এই সমস্ত নিয়মগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে মেনে চলি তাহলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাব এবং গ্যাস প্রতিরোধ করতে পারব।
গ্যাস্টিক হওয়ার প্রক্রিয়া?
আমরা জানি যে আমাদের পেট থেকে প্রতিদিন হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষয় হয়ে থাকে। তাই যখন পাকস্থলী খালি থাকে তখন হাইডোক্লোরিক এসিড সমূহ ব্যবহৃত না হয়ে অধিক পরিমাণে পেটে জমা হয়ে যায়।
কারণ হাইড্রোক্লোরিক এসিডের কাজ হল খাদ্য পরিপাককে সাহায্য করা। কিন্তু যখন পেটে কোন খাবার থাকে না অথবা খালি পেটে থাকেন সে সময় অতিরিক্ত এসিড পাকস্থলীতে জমা হয়।
এবং অতিরিক্ত এসিড জমা হওয়ার ফলে পাকস্থলীর ভিতরে ক্ষয় হওয়া শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে অন্ত্রের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে। আবার পাকস্থলীর উপরের দিকে খাদ্যনালী তথা ইসোফেগাসের দিকেও ইহা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
এসিড যদি এই জায়গাকে আক্রান্ত করে তবে এই অবস্থাকে গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীদের আর বেশি বেশি ঢেকুর আসবে এবং রোগীর অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া করবে। এগুলোর মাধ্যমে মূলত আমাদের দেহে গ্যাস তৈরি হয়ে থাকে।
গ্যাস্ট্রিক রোগীর খাবার তালিকা?
গ্যাস্ট্রিক রোগীর জন্য কিছু খাবার রয়েছে যে খাবারগুলো খেলে তাদের গ্যাস্টিকের সমস্যার অবনতি ঘটবে এবং সুস্থ থাকবে। গ্যাস প্রতিরোধ করার খাবারগুলো নিচে উল্লেখ করা হলঃ
ডাবের পানি
ডাবের পানি খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়। ডাবের পানিতে মূলত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে এবং ডাবের পানিতে উপকারী মিনারেলস রয়েছে।
দই
দই আমাদের খাবার হজম করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দই প্রতিদিন খেলে এটি আপনার হজম শক্তি সবল রাখতে অনেক সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে আপনি দুপুরে খাবারের পরে অল্প টক দই খেতে পারেন।
তবে তাতে চিনির বদলে অল্প একটু বিট লবণ দিয়ে খেলে বেশি উপকারিতা পাবেন। মূলত এই চারটি খাবার গ্যাস্ট্রিক রোগীর জন্য খুবই উপকারী খাবার।
যদি এই খাবারগুলো আপনারা প্রতিনিয়ত খান তাহলে আপনাদের শরীরে গ্যাসের সমস্যা কমে আসবে এবং আস্তে আস্তে গ্যাসের সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবেন।
কলা
কলা খেলেও গ্যাসের সমস্যা অনেকাই কমে যায়। কলা হল উপস্থিত ফাইবার সহায়ক। যে কোন গ্যাস্ট্রিক রোগীর প্রতিদিন একটি থেকে দুইটি কলা খাওয়া প্রয়োজন।
রসুন
রসুন খুবই উপকারী একটি খাবার বিশেষ করে পরিপাকের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে এক কোয়া করে কাঁচা রসুন খালি পেটে খাবেন। দুপুরে খাবারের সাথেও এক কোয়া করে রসুন বেটে খেতে পারেন। এই রসুনটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খেলেই যথেষ্ট।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়?
গ্যাস্ট্রিক হলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম ব্যথা আরও অন্যান্য সমস্যা অনুভব হতে থাকে তার ভিতরে রয়েছে, পেটের উপরের দিকে অল্প অল্প ব্যথা অনুভব হওয়া। পেটে জ্বালা পোড়া করা, বুকজলা কিংবা বুকে ব্যথা হওয়া।
পেটের বাম পাশের উপরের দিকে হালকা ব্যথা অনুভব হওয়া। এবং মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি। গ্যাস্টিক হলে মূলত শরীরের এই সমস্ত জায়গা গুলোতেই ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভব করা যায়।
গ্যাসের ঔষুধের নাম ও তার মূল্য | বুকে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ঔষুধ
আমরা জানি যে বাংলাদেশে প্রায় ৮০% মানুষেই গ্যাস বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগচ্ছে। এই কারণে প্রত্যেকটি পরিবারে গ্যাসের ঔষুধ থাকে।
আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে বিভিন্ন কোম্পানির ঔষুধের নাম ও তার মূল্য কত এগুলো সমস্ত জানবো। চলুন আমরা জেনে নেই গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেটের নাম ও তার মূল্য। যেমনঃ
- সার্জেল ৪০ (Sargel 40) এর মূল্য ১০ টাকা।
- ফিনিক্স ২০ (Phoenix 20) এর মূল্য ৭টাকা।
- ম্যাক্সপ্রো ২০ (Maxpro 20) এর মূল্য ৭ টাকা।
- সার্জেল ২০ (Sergel 20) এর মূল্য ৭টাকা।
- সেকলো ২০ (Seclo 20) এর মূল্য ৬ টাকা।
- রাবিপ্রাজল (Rabiprazole) এর মূল্য ৫টাকা।
- এক্সিলক ২০ (Exylock 20) এর মূল্য ৫ টাকা।
- ইসোটিড ২০ (Isotide 20) এর মূল্য ৫ টাকা।
- ওপি ২০ (OP 20) এর মূল্য ৫ টাকা।
- লোসেকটি (Losekty) এর মূল্য ৫ টাকা।
- রেনিটিডিল (Ranitidine) এর মূল্য ২ টাকা
এই সব ট্যাবলেট গুলো গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। এখন জেনে নিব গ্যাস্টিকের সিরাপের নাম ও তার মূল্য। যেমনঃ
- ফ্ল্যাটুনিল (Flatunil) এটি একমি কোম্পানির একটি গ্যাস্ট্রিকের সিরাপের নাম যার বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৩৫ টাকা।
- ফ্ল্যাকল (Flacol) এটি স্কয়ার কোম্পানির একটি গ্যাস্টিকের সিরাপের নাম যার বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৩৫ টাকা।
- সিমেন (Simeon) এটি এ সি আই কোম্পানির একটি গ্যাস্টিকের সিরাপের নাম এই সিরাপটির বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৪০ টাকা ।
- লেফাম (lefoam) এটি ইনসেপ্টা কোম্পানির একটি গ্যাসের সিরাপ। এই সিরাপটির বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৩০ টাকা।
- নিউ ড্রপ (New drop) এটি বেক্সিমকো কোম্পানির গ্যাস্ট্রিকের সিরাপ। এই সিরাপটির বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৩০ টাকা।
- সিমেথি (Simethi) এটি জেনিত কোম্পানির একটি গ্যাসের ঔষুধ। এই সিরাপের বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৩০ টাকা।
- গ্যাসনিল(Gasneil) এটি স্কাই এফ কোম্পানির একটি গ্যাসের সিরাপ। এই সিরাপটির বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৩০ টাকা।
এইগুলা হল গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট ও সিরাপের নাম ও তার নির্ধারিত বাজার মূল্য। যদি আমাদের শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এই ঔষুধ গুলো খাবার খাওয়ার ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা আগে সেবন করবেন। তাহলে এই ঔষুধের কার্যকারিতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
গ্যাস্টিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না?
যে সমস্ত রোগীরা গ্যাস্ট্রিক রোগে ভুগছেন তাদের খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক নিয়মাবলী রয়েছে। যারা হজমে সমস্যা অথবা গ্যাস্ট্রিক এ ভুগছেন তাদের খুব বেশি ছোলা না খাওয়াই ভাল।
এবং যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা খুব বেশি পরিমাণে সবজি খাবেন না। মনে রাখবেন ছোলা কিন্তু আমাদের শরীরের প্রোটিনের জন্য বেম উপকারী একটি খাবার।
তবে এই খাবার খেলে কিন্তু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কচুর তরকারি খেতে আপনারা অনেকেই খুব ভালোবাসেন। কিন্তু এই কচুর তরকারিতেও অনেক গ্যাস রয়েছে। আপনি কচুর তরকারি খেলে আপনার অনেক বেশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও মুলার তরকারিতে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস রয়েছে এই খাবারটি বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য খুবই ভয়ানক একটি খাবার। এই খাবারটি গ্যাসের সমস্যা খুব সহজেই অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে।
রাজমা চাউল অথবা রাজমা দিয়ে পরোটা,রুটি, বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতেই তৈরি করে থাকেন। এই খাবারটি খেতে যেমনি সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। এই খাবারেও আপনি প্রোটিনের মাত্রা ছোলার মতোই পাবেন।
তবে আপনি যদি গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন তবে এই খাবার খাওয়া থেকে আপনাকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাটি রয়েছে তারা এই সমস্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এই খাবারগুলো হচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের বাহক।
গ্যাসের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয়?
গ্যাসের ব্যথা মূলত খুবই তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের বুকের বাম দিকে মোচড় দিয়ে গ্যাসের ব্যথা হতে পারে। এছাড়া অনেক সময় এই গ্যাসের কারণে রোগীর পেটের উপরে ও বুকের ঠিক নিচেও গ্যাসের ব্যথা দেখা যায়।