লিভার আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। প্রত্যেকটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য লিভার খুবই অপরিহার্য। অনেকের লিভারে চর্বি জমে যাওয়া বা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হয়ে থাকে।ফ্যাটি লিভার হচ্ছে এক ধরনের রোগ। সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করলে ফ্যাটি লিভার বড় হয়ে সমস্যা হয়ে যেতে পারে যা থেকে লিভার সিরোসিস বা লিভারের আরো কিছু সমস্যা আসতে পারে।
তাই আমাদের সকল সময় চেষ্টা করা উচিত লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য। আজকের পোস্টে লিভারের চর্বি কমানোর উপায়, লিভারে চর্বি জমলে কি কি সমস্যা হয়?
ও লিভারে চর্বি হলে কি খাওয়া উচিত নয় এই বিষয়ে তথ্য দেওয়া রয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ
লিভারের চর্বি কমানোর উপায় | ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
সুস্থ লিভার থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য সকল সময় অ্যালকোহল গ্রহণ এড়িয়ে চলা উচিত। তাছাড়া লিভার সুস্থ রাখার জন্য আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে হবে।
লিভারের চর্বি কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়ে রয়েছে চাইলে এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
লিভারের চর্বি কমানোর ঘরোয়া উপায় | লিভারের চর্বি হলে কি খাওয়া উচিত
ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব সহজে লিভারের চর্বি কমানো যায়। নিচে ঘরোয়া ভাবে লিভারের চর্বি কমানোর জন্য কার্যকারী কয়েকটি উপাদানের কথা উল্লেখ করা হলোঃ
হলুদ খেতে পারেন
লিভারে চর্বি কমানোর জন্য নিয়মিত হলুদ সেবন করা যেতে পারে। কেননা হলুদ খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের লিভার অনেক সুস্থ থাকে।
হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত উপাদান লিভারের কোষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাই লিভারের চর্বি কমানোর জন্য রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে পান করতে পারেন।
রসুন খাওয়া যেতে পারে
কাঁচা রসুনে রয়েছে সেলেনিয়াম এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা আ্যানাইজম সক্রিয় রেখে আমাদের লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাই লিভারের চর্বি দূর করার জন্য নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়া যেতে পারে।
অ্যালোভেরা খেতে পারেন
অ্যালোভেরার জেলে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট বৈশিষ্ট্য যা আমাদের শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া এলোভেরা নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের হয়ে যায়।
আমাদের শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন থাকলে লিভারের অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। তাই লিভার সুস্থ রাখার জন্য অ্যালোভেরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
তাছাড়া আমাদের খাদ্য তালিকায় আরো প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণে আঙ্গুর, আপেল, কমলা, খেজুর, কলা, ডুমুর, এই সকল ফলগুলি রাখতে হবে।
শাক সবজির মধ্যে সবুজ শাক, ক্যাপসিকাম, মিষ্টি আলু, শসা, টমেটো, বাদাম, ছোলা ও মটরশুঁটির মতো খাবার রাখতে পারেন। আশা করি ইতিমধ্যে লিভারের চর্বি কমানোর খাবার কেমন হওয়া উচিত এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।
লিভারে চর্বি জমলে কি কি সমস্যা হয়?
লিভারে চর্বি জমলে কি কি সমস্যা হয় বা লিভারে চর্বি জমার লক্ষণ কি এই বিষয়ে অনেকেই জানেন না।নিচে লিভারে চর্বি জমলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে তা উল্লেখ করা হলোঃ
- লিভারে চর্বি জমলে স্বাভাবিক কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়ে থাকে।
- খাওয়ার ইচ্ছে কমে যাওয়ার পাশাপাশি দ্রুত ওজন কমে যায়, বমি বমি ভাব হয়, শরীর দুর্বল লাগে, ও কোন কাজ করতে ইচ্ছা করে না।
- মাথাব্যথা মন খারাপ ও ডিপ্রেশনের মত সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- লিভারের চর্বি জমলে হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি দেখা দিতে পারে।
- লিভারে চর্বি জমলে অনেক সময় রোগীর কোমরের মাপ অনেক বড় হয়ে যায়।
- লিভারে চর্বি জমলে নখ ও চোখ অনেকটা হলদেটে হয়ে যায়।
- যার ফলে জন্ডিস আক্রান্ত রোগীদের মত অনেকটা দেখতে লাগে।
লিভারে চর্বি হলে কি খাওয়া উচিত না?
যেসব রোগীদের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের অবশ্যই কয়েকটি খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। এই খাবারগুলো থেকে দূরে থাকলে ধীরে ধীরে লিভারের চর্বি কমতে শুরু করবে।
আর এই খাবারগুলি যদি নিয়মিত খেতে থাকেন তাহলে লিভারের চর্বি কমানোর জন্য যত চিকিৎসাই করুন না কোন কাজ হবে না।
চিনি
লিভারের সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য অবশ্যই চিনি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। কেননা চিনি জাতীয় খাবার লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে ও লিভার দুর্বল করে দেয়।
লবণ
যাদের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই লবণ খাওয়া পরিহার করবেন। লবণ খেলেও খুবই অল্প পরিমাণে খেতে হবে। দৈনিক ২৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ কোনভাবেই খাওয়া যাবেনা।
ভাজাপোড়া খাবার
ভাজাপোড়া খাবার লিভারের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। কেননা এই সকল খাবারগুলো উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হয়ে থাকে যা সরাসরি লিভারের ক্ষতি সাধন করে।
তাই অবশ্যই লিভারের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য এই খাবারগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
আ্যলকোহল সেবন বাদ দিতে হবে
লিভারের সঠিক সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য অবশ্যই অ্যালকোহল সেবন পরিহার করতে হবে। কেননা এলকোহলকে লিভারের শত্রু বলা হয়ে থাকে। তাই কারো যদি ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অ্যালকোহল বাদ দিয়ে ফেলতে হবে।
মাংস খাওয়া বাদ দিতে হবে
রেড মিট বা গরুর মাংস ও খাসির মাংস খাওয়া বাদ দিতে হবে। যাদের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা মাসে এক থেকে দুই দিন চর্বি ছাড়া গরু বা খাসির মাংস খেলে খেতে পারেন। কিন্তু সপ্তাহে দুই বা তিন দিন এই ধরনের খাবার খেলে সমস্যা হবে।
সহজ শর্করা খাওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে
সাদা ভাত, ময়দার তৈরি পাউরুটি, নুডুলস ও পাস্তা লিভারে চর্বি বাড়িয়ে থাকে। তাই এই সকল খাবারগুলো খাওয়ার পরিমাণ অনেকটা কমিয়ে দিতে হবে।
লিভারের চর্বি কমানোর ওষুধ?
লিভারের চর্বি কমানোর জন্য বর্তমানে দারুণ একটি ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে। ওষুধ টির নাম হলো ওবিটাকলিক। তাছাড়া ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফিশ অয়েল লিভারের চর্বি কমিয়ে থাকে।
অনেকে ভিটামিন ই কে লিভারের চর্বি কমানোর ঔষধ হিসেবে মনে করে থাকেন কিন্তু এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। লিভারের চর্বি কমানোর জন্য ডাক্তারের সঠিক পরামর্শর পাশাপাশি অবশ্যই সঠিক ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
ফ্যাটি লিভার কি ভালো হয়?
ফ্যাটি লিভার দূর করার জন্য অবশ্যই খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাছাড়া ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে পারেন।
এই খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে লিভারের চর্বি কমতে শুরু করবে ও সুস্থ হতে থাকবেন।
শেষ কথা, লিভারের চর্বি কমানোর উপায় বা কিভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় আশাকরি আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।
তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।