আমাদের অনেকেরই মাঝে মাঝে বুক ধড়ফড় করে থাকে। কিন্তু অনেকেই ইহাকে ছোটোখাটো সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যান। অনেকে আছেন আবার সঠিকভাবে বুঝতেও পারেন না।
আবার অনেকে বুঝেও ধরে নেন যে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটা হৃদরোগের একটা সমস্যা। এবিপি (ABP) আনন্দের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বুক ধড়ফড় করলে কী করতে হবে।যেমনঃ বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলেই মূলত বুক ধড়ফড় করার সমস্যা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে একেবারেই উত্তেজিত কিংবা চিন্তিত হওয়া যাবে না। এ সময় অবশ্যই মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
বুক ধড়ফড় করলে আপনাকে প্রথমে সমান কোন জায়গায় ধীরে ধীরে হাঁটাচলা করতে হবে। শ্বাস ধীরে ধীরে নিতে হবে এবং ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে এমন মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা বা বুক ধড়ফড় করার সমস্যা প্রতিরোধ করতে নিয়মিত শরীরচর্চা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় করে শরীরচর্চা করলে অনেক রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
দুশ্চিন্তা অবসাদের মতো মানসিক সমস্যাগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। বুক ধড়ফড় থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি করে পানি পান করতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। এবং খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইলের দিকে দিতে হবে বিশেষ নজর।
হার্ট দুর্বল হওয়ার কারণ?
হার্ট দুর্বলতা যা হার্ট ফেইলিওর নামেও পরিচিত। হার্ট দুর্বলতার কারণসমূহ নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলঃ
করোনারি ধমনী রোগ
করোনারি ধমনী হৃৎপিণ্ডের ব্যর্থতার সবচেয়ে সাধারণ একটি কারণ, যেখানে হৃৎপিণ্ডের পেশীতে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলো সংকীর্ণ বা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। যার ফলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ এবং অক্সিজেন হ্রাস পায়।
উচ্চ রক্তচাপ
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে ইহা আরও কঠিন কাজ করে। এবং অবশেষে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে যায়।
কার্ডিওমায়োপ্যাথি
এটি হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলোর রোগগুলোকে বোঝায় যেমনঃ হাইপারট্রফিক, প্রসারিত বা সীমাবদ্ধ কার্ডিওমায়োপ্যাথি। যা হৃৎপিণ্ডকে অনেকটাই দুর্বল করে দিতে পারে এবং কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প করার ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে।
হার্টের ভালভের সমস্যা
ত্রুটিপূর্ণ হার্টের ভালভ যেমনঃ রেগারজিটেশন (লিকিং) স্টেনোসিস (সংকীর্ণ) বা প্রল্যাপস (ফুঁটা) থাকলে, যদি তারা রক্ত প্রবাহকে ব্যাহত করে এবং হৃদপিণ্ডকে চাপ দেয় তাহলে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন)
হার্ট অ্যাটাক যে সময় হয়, সেই সময় হৃৎপিণ্ডের পেশীর একটি অংশে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে হার্টের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতি হার্টের পাম্পিং ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে এমনকি সম্ভাব্য হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।
অ্যারিথমিয়াস
অনিয়মিত হৃৎপিণ্ডের ছন্দ, বিশেষ করে অবিরাম বা দীর্ঘস্থায়ী, হার্টের পাম্পিং প্রক্রিয়া ব্যাহত করে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।
জন্মগত হৃৎপিণ্ডের ত্রুটি
কিছু মানুষ হয়েছে যারা হার্টের গঠনগত অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। যা শেষ পর্যন্ত হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা হতে পারে যদি চিকিৎসা না করা হয় কিংবা পর্যাপ্তভাবে পরিচালিত না হয়।
অন্যান্য চিকিৎসা শর্ত
থাইরয়েড রোগ, কিডনি রোগ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং ফুসফুসের রোগের মতো অবস্থাও হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার বিকাশে অবদান রাখতে পারে।
হার্ট দুর্বল হওয়ার লক্ষণ কি কি?
- বুকে ব্যথা
- হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
- ক্লান্তি
- দুর্বলতা
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- কফ
- পেটে ব্যথা
- হাত কোমর ও চোয়ালে ব্যথা
- অম্বল
- বমি বমি ভাব ইত্যাদি।
হার্ট দুর্বল হলে কি কি সমস্যা হয়?
- বুকে ব্যথা
- হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
- ক্লান্তি
- হাত কোমর ও চোয়ালে ব্যথা
- অম্বল
- দুর্বলতা
- পেটে ব্যথা
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- কফ
- বমি বমি ভাব ইত্যাদি।
বুক ধরফর করার কারণ কি?
- থায়রয়েডের সমস্যা
- রক্তশূন্যতা
- শারীরিক দুর্বলতা
- ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে শর্করা কমে যাওয়া
- মদ্যপানের অভ্যাস
- প্রেগন্যান্সির সময় হতে পারে
- উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
- যেকোন ধরণের ভয়
- নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ
- অ্যামলোডিপিন, অ্যামিট্রিপটাইলিন, থাইরক্সিন ইত্যাদি ওষুধ গ্রহণে
ব্যায়াম করলে - অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে ইত্যাদি।
বুক ধরফর কিসের লক্ষণ?
বুক ধরফর হৃদরোগের লক্ষণ।
পেটে গ্যাস হলে কি বুক ধরফর করে?
পেটে গ্যাস হলে বুক ধরফর চাপবোধ হয়। তবে বুক ধরফর হৃদরোগের লক্ষণ। বুক ধরফর বা হার্ট দুর্বল এর ঔষধ যেমনঃ
- Vastarel MR 60 mg Tablet ৳9-10
- Preclot Tablet (Popular) ৳12
- RTV 5 Tablet (Delta) ৳ 5
হার্ট দুর্বল হলে করণীয় কি?
- লবণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট, এবং কোলেস্টেরল কম এমন একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করুন।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম করুন।
- নিয়মিত নির্ধারিত ওষুধ খান।
- পর্যাপ্ত ঘুম পান এবং অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
- স্ট্রেস পরিচালনা করুন এবং শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করুন।
- অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত করুন বা সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন এবং সেকেন্ডহ্যান্ড ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
- ডাক্তারের সাথে নিয়মিত ফলো-আপ অ্যাপয়েন্টমেন্ট রাখুন।
- রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিরীক্ষণ করুন।
- হাইড্রেটেড থাকুন এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ এড়িয়ে চলুন ইত্যাদি।