শ্বেত রক্তকণিকা কাকে বলে | শ্বেত রক্তকণিকার কাজ কি

রক্তে হিমোগ্লোবিনবিহীন ও নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষগুলোকে শ্বেত রক্তকণিকা বলা হয়। একে আবার WBC অথবা White Blood Cell বলে। মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে ৪ থেকে ১০ হাজার শ্বেত রক্ত কণিকা রয়েছে।

তবে শিশু এবং অসুস্থ মানবদেহে এদের সংখ্যা অনেকগুন বেড়ে যায়। শ্বেত রক্তকণিকা গড়ে এক থেকে পনেরো দিন বেঁচে থাকে। শ্বেত রক্তকণিকার নির্দিষ্ট কোন আকার থাকে না।শ্বেত রক্তকণিকা কাকে বলেরক্তে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা লোহিত রক্ত কণিকার তুলনায় অনেক কম থাকে। এরা অ্যামিবার মতো দেহের আকার পরিবর্তন করে থাকে।  রক্তজালিকার প্রাচীর ভেদ করে কোষের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।

শ্বেত রক্তকণিকাকে দেহের প্রহরীও বলা হয়। কারণ এরা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবাণুকে ধ্বংস করে। দেহে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে দ্রুত শ্বেতকণিকা সংখ্যার বৃদ্ধি পায়।

তাই একে লিউকোসাইটও বলে। মানবদেহে শ্বেত কণিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে ৫০,০০০ থেকে ১০০০০০০ হলে তখন তাকে ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া বলা হয়।

আবার শ্বেত কণিকার সংখ্যা যদি স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ হলে তাকে লিউকোসাইটোসিস রোগ বলা হয়।

Table of Contents

শ্বেত রক্ত কণিকা কাকে বলে?

রক্তরসে উপস্থিত বর্ণহীন বিভিন্ন আকৃতির নিউক্লিয়াসযুক্ত বৃহদাকৃতির রক্তকোশগুলোকে শ্বেতরক্তকণিকা বলে।

শ্বেত রক্তকণিকা এর ইংরেজি নাম কি?

শ্বেত রক্তকণিকা এর ইংরেজি নাম হল White Blood Corpuscles বা সংক্ষেপে WBC।

শ্বেত রক্ত কণিকার গঠন?

সাধারণত শ্বেতরক্তকণিকার গঠন ও  আকার পরিবর্তিনশীল। ইহা RBC এর তুলনায় বড়াে ও গােলাকার। এদের নিউক্লিয়াস বর্ণহীন, স্বচ্ছ এবং বিভিন্ন আকৃতিযুক্ত।

শ্বেত রক্ত কণিকা কত প্রকার ও কি কি?

WBC এর সাইটোপ্লাজমে দানার উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি রঞ্জকের প্রতি WBC এর সাইটোপ্লাজমীয় দানার আসক্তির উপর নির্ভর করে WBC দুই প্রকারের।

এই ২ প্রকার শ্বেত রক্ত কণিকাকে আবার সর্বমোট ৫ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমনঃ ইওসিনােফিল, নিউট্রোফিল, বেসােফিল, লিম্ফোসাইট এবং মনােসাইট।

দানাদার শ্বেত রক্ত কণিকা কি?

নির্দিষ্ট রঞ্জুকে রঞ্জিত করলে যেসব শ্বেত রক্তকণিকার সাইটোপ্লাজমে দানা দেখা যায় তাদের গ্র্যানুলােসাইট বলে।

দানাদার শ্বেতরক্তকণিকা বৈশিষ্ট্য কি?

নিউক্লিয়াস খণ্ডযুক্ত ও খণ্ডগুলো সূত্রবৎ অংশ দিয়ে জোড়া থাকে।

দানাবিহীন শ্বেত রক্ত কণিকা কি?

নির্দিষ্ট রঞ্জকে রঞ্জিত করলে যেসব WBC এর সাইটোপ্লাজমে কোন দানা দেখা যায় না তাদের আগ্র্যানুলােসাইট বলা হয়।

দানাবিহীন শ্বেতরক্তকণিকা বৈশিষ্ট্য?

  • নিউক্লিয়াস বড়াে, গােলাকার তবে অখণ্ডিত।
  • এটি দুপ্রকারের ছােটো গােলাকার নিউক্লিয়াসযুক্ত কোশগুলো লিম্ফোসাইট (ছােটো এবং বড়াে হয়)
  • এবং বড়াে বৃক্কাকৃতি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোশগুলো মনােসাইট।

শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপত্তিস্থল?

গ্রানুলােসাইট লাল অস্থিমজ্জার মেগাক্যারিওসাইট কোশ। এবং
আগ্র্যানুলােসাইট, প্লিহা, লসিকাগ্রন্থি, টনসিল ও থাইমাস ইত্যাদি। WBC তৈরির পদ্ধতিকে বলা হয়  লিউকোপােয়েসিস।

শ্বেত রক্ত কণিকা জীবনকাল ও পরিণতি?

WBC দের আয়ু ১ থেকে ১৫ দিন। এর পর এগুলো ভেঙ্গে যায় বা ধ্বংস হয়।

শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা?

পরিণত প্রাপ্তবয়স্ক লােকের প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে WBC এর সংখ্যা ৬০০০ থেকে ৮০০০)। কখনাে কখনাে এই সংখ্যা স্বাভাবিকের থেকে হ্রাস পায়, একে বলা হয় লিউকোপেনিয়া।

সংক্রমণের ফলে WBC এর সংখ্যা বেড়ে ২০,০০০ হাজার থেকে ৩০,০০০ হাজার হলে তাকে লিউকোসাইটোসিস বলে। বিভিন্ন প্রকার শ্বেত রক্ত কণিকার শতকরা পরিমাণ (প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে)।

শ্বেত রক্ত কণিকা  –  শতকরা পরিমাণ

  • নিউট্রোফিল ৬০ থেকে ৭০
  • মনােসাইট ৫ থেকে ১০
  • ইওসিনােফিল ১ থেকে ৪
  • লিম্ফোসাইট ২৫ থেকে ৩০
  • বেসােফিল ০ থেকে ১

শ্বেত রক্ত কণিকার কাজ কি?

  • অতন্দ্রপ্রহরী
  • WBC অতন্দ্রপ্রহরীরূপে দেহকে রােগজীবাণুর থেকে রক্ষা করে।

হেপারিন ক্ষরণ

বেসােফিল তঞ্জনরোধী বস্তু হেপারিন ক্ষরণ করে রক্তবাহের ভেতর রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না, যার ফলে রক্তের তারল্য বজায় থাকে।

অ্যালার্জি প্রতিরােধ

হিস্টামিন দেহে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে থাকে। দেহের যেখানে হিস্টামিন তৈরি হয়, ওই জায়গায় ইওসিনােফিল জড়াে হয়ে অ্যান্টিজেন অ্যান্টিবডি যৌগ গঠন করে হিস্টামিনকে নিষ্ক্রিয় করে ও দেহকে অ্যালার্জি মুক্ত করে।

ফ্যাগােসাইটোসিস

কোন ব্যাকটেরিয়া কিংবা জীবাণু রক্তে প্রবেশ করলে নিউট্রোফিল এবং মনােসাইট ফ্যাগােসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।

অ্যান্টিবডি উৎপাদন

লিম্ফোসাইট গামা গ্লোবিউলিন অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে রােগ প্রতিরােধ করে থাকে।

ট্রিপসিন ও পেপসিন সংশ্লেষ

নিউট্রোফিল ট্রিপসিন ও মনােসাইট এবং লিম্ফোসাইট পেপসিন নামক উৎসেচক সংশ্লেষ করে।উৎসেচক দুটি গ্রাস করা ব্যাকটেরিয়াকে হজম করে দেহ থেকে অপসারণে সাহায্য করে থাকে।

শ্বেত রক্ত কণিকার আয়ুষ্কাল কত দিন?

শ্বেত রক্ত কণিকার আয়ু সাধারণত ১ থেকে ১৫ দিন।

শ্বেত রক্ত কণিকার অপর নাম কি?

শ্বেত রক্ত কণিকার অপর নাম লিউকোসাইট।

শ্বেত রক্ত কণিকা কোথায় উৎপন্ন হয়?

গ্রানুলােসাইট লাল অস্থিমজ্জার মেগাক্যারিওসাইট কোশ এবং আগ্র্যানুলােসাইট, প্লিহা, লসিকাগ্রন্থি, টনসিল ও থাইমাস ইত্যাদি।

শ্বেত রক্তকণিকা কমে গেলে কি হয়?

লিউকোপেনিয়া রোগ হয়।

শ্বেত রক্তকণিকা কিভাবে দেহকে রক্ষা করে?

শ্বেত রক্তকণিকা অতন্দ্রপ্রহরীরূপে দেহকে রােগজীবাণুর থেকে রক্ষা করে থাকে।

শ্বেত রক্ত কণিকা বৃদ্ধির উপায়?

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

শ্বেত রক্তকণিকা কয় প্রকার?

শ্বেত রক্তকণিকা মূলত পাঁচ প্রকার।

শ্বেত রক্তকণিকা বাড়লে কি হয়?

লিউকোসাইটোসিস রোগ হয়।

শ্বেত রক্তকণিকাকে দেহের প্রহরী বলা হয় কেন?

কোন ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু রক্তে প্রবেশ করলে ঐ জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়াকে শ্বেত রক্তকণিকা ধ্বংস করে থাকে।

Sharing Is Caring:

This website mainly provides information on exercise, fitness, wellness, healthy living, etc. in the Bengali language.

Leave a Comment